ফোনে আড়ি পাততে ৪৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রায় তিন বছর পর নানা যাচাই শেষে এ টিমটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছে। এ বিশাল টিমকে দেখভাল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) গঠন করা হয়েছে। এখন এটি চালু করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। গত ২৪শে জুলাই সর্বশেষ প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় এনটিএমসির গঠন, পদ সৃষ্টি, যানবাহন ও সরঞ্জামাদি টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। তবে সেন্টারটি কোন অধিদপ্তরের মর্যাদা পাবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সচিব কমিটির প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ায় একজন পরিচালকের নেতৃত্বে এখন থেকে ফোনে আড়ি পাতার কার্যক্রম চলবে। ওই পরিচালক পদে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োগ পাবেন। এছাড়া দু’জন অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন/ অপারেশন) থাকবেন এনটিএমসিতে। এ দু’টি পদ প্রেষণে উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে পূরণ করা হবে। এর বাইরে একজন করে নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর, সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ট্রান্সমিশন, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার, একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, ডাটাবেজ এডমিনিস্ট্রেটর, উপ-পরিচালক (প্রশাসন), এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, সহকারী ডাটাবেজ এডমিনিস্ট্রেটর, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার, প্রশিক্ষক (সহকারী ইঞ্জিনিয়ার), হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষক ও স্টোর কিপার নিয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া দু’জন করে ডেপুটি নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ট্রান্সমিশন, সহকারী সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও বার্তাবাহক থাকবেন এনটিএমসির টিমে। একই সঙ্গে তিন জন করে সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থাকবেন ৪৫ জনের টিমে। এসব টিমকে সাচিবিক নানা সহায়তা দিতে ৫ জন করে গাড়িচালক ও এমএলএস নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। জনবল ছাড়াও প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচালকের ব্যবহারের জন্য একটি কার, প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য দু’টি মাইক্রোবাস, যন্ত্রপাতি পরিবহন ও পরিদর্শনের জন্য একটি পিকআপ ও দু’টি মোটরসাইকেল কেনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে এ সেন্টারের মাধ্যমেই প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, যুদ্ধাপরাধ বিচার, মোবাইল ফোনে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি রোধ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের টেলিফোনে মনিটরিং করা হবে। কাদের কাদের ফোনে মনিটরিং করা যাবে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। ওদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধনী) আইন, ২০০৬-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১-এ সন্নিবেশিত ৯৭(ক) ধারায় সরকারকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ফোনে আড়ি পাতার ক্ষমতা দেয়া হয়। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্থায়ী সংস্থা হিসেবে প্রথমে ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার (এনএমসি) এবং পরে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনবল, যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জাম টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সম্মতি দেয়। এরপর ২০০৯ সালের ৫ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় বিষয়টি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। তবে সচিব কমিটিতে বিষয়টি অনুমোদন পায়নি। আরও কিছু পর্যালোচনা করে উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক একটি সংশোধিত প্রস্তাব ২০১০ সালের ১৩ই জুলাই অনুষ্ঠিত সচিব কমিটির সভায় বিষয়টি নতুন করে উপস্থাপন করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) গঠন এবং এর পদ সৃষ্টি, যানবাহন ও সরঞ্জামাদি টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি জনপ্রশাসন ও অর্থ বিভাগের মাধ্যমে নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে হবে। এর ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভার সিদ্ধান্ত, বিটিআরসি, বাংলাদেশ পুলিশ, অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সভার সিদ্ধান্ত জনপ্রশাসনে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ভিত্তিতে টিমটি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।
রবিবার, ১৪ আগস্ট ২০১১. মানবজমিন
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ২:৪৭