কমলগঞ্জের পাহাড়ি গহীন অরণ্য কুরমায় হাম হাম জলপ্রপাতের অবস্থান। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় স্রষ্টার অপূর্ব এ সৃষ্টি জলপ্রপাত ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব আর প্রচারণা না থাকায় এ জলপ্রপাতটি রয়ে গেছে সবার দৃষ্টির অন্তরালে। সীমান্তবর্তী কুরমা বন বিটের দুর্গম পাহাড়ের অভ্যন্তরে নয়নাভিরাম রোমাঞ্চিত এ জলপ্রপাতের নাম হামহাম। এর উচ্চতা প্রায় ১৩৫ ফুট। এখানে রয়েছে পাহাড়ি অধিবাসীদের ঘনবসতি। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি. পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি রেঞ্জের কুরমা বন বিটের প্রায় ৮ কি.মি. অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাতের অবস্থান। এর পশ্চিমে রয়েছে চাম্পারায় চা বাগান। এর পূর্ব-দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সীমান্ত। হামহাম জলপ্রপাতে যাওয়ার সরাসরি যানবাহন ব্যবস্থা নেই। উপজেলা সদর থেকে কুরমা বন বিট বা কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫ কি. পাকা রাস্তা। তারপর পুরো রাস্তাই কাঁচা। এ রোডে চলাচলকারী বাস, জিপ, মাইক্রোবাসযোগে কুরমা পর্যন্ত যাওয়ার পর বাকি ১০ কি.মি. পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয় হামহাম জলপ্রপাতে। সেখান থেকে পাহাড়ি প্রায় ৫ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে হয় সীমান্তবর্তী আদিবাসী পল্লী তৈলংবাড়ী। অবশ্য আদপুর এলাকা থেকেও সিএনজিযোগে তৈলংবাড়ী যাওয়া যায়। সিএনজি ভাড়া ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা। তৈলংবাড়ীর কলাবনে নেমে সেখান থেকে প্রায় ৮ কি.মি. পথ পাড়ি দিলেই দেখা মিলবে প্রত্যাশিত সেই হামহাম জলপ্রপাতের। মোটরসাইকেল নিয়ে গেলে আপনাকে প্রায় ৩ কি.মি. পথ হাঁটতে হবে। হামহাম জলপ্রপাতে পৌঁছতে আপনাকে সাহায্য নিতে হবে গহীন অরণ্যে বসবাসকারী তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবন বস্তির আদিবাসীদের। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে ট্রেকিং করা খুবই কঠিন এবং কষ্টের। মাঝে মধ্যে সিমেন্টের ঢালাই করার মতো দেখতে বড় বড় পাথরের খণ্ড খুবই পিছলে, ডানে-বামে তাকালেই অজানা ভয় তাড়া করবে। তাই ট্রেকিং করার সময় সঙ্গে বাঁশের লাঠি হাতে নিলে পাহাড়ি এ পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করবে। চলার পথে চোখে পড়বে সারি সারি কলাবাগান, জারুল, চিকরাশি কদমের সারিবদ্ধ বাগান। এর ফাঁকে ফাঁকে হাজারও প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে দূর অজানা আকাশে। ডুমুর গাছের শাখা আর বেত বাগানে দেখা মিলবে অসংখ্য চশমা বানরের। চারদিকে গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক বাঁশবনে ভরপুর আর ডলু, মুলি, মিরতিঙ্গা, কালি ইত্যাদি অদ্ভুত নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ বাগানের রাজত্ব আপনাকে দেবে বাড়তি আনন্দ। পাথুরে পাহাড়ের ঝিরিপথে হেঁটে যেতে যেতে সুমধুর পাখির কলরব আপনার সব ক্লান্তি দূর করে দেবে ভাল লাগার অনুভূতি। দূর থেকে শোনা যাবে বিপণ্ন বনমানুষ, উল্লুক আর গিবনসের ডাক। কিছু দূর এগিয়ে গেলেই চোখে ভেসে উঠবে পাহাড় থেকে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা ভেসে ওঠার অপূর্ব দৃশ্য। মনে হবে নয়নাভিরাম পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে এক সময় পৌঁছে যাবেন হামহাম জলপ্রপাতে। দূর থেকে শুনতে পাবেন হাম হাম জলপ্রপাতের শব্দ। কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন প্রায় ১৩৫ ফুট উঁচু থেকে জল পড়ার সেই অপূর্ব দৃশ্য। তা দেখে ক্ষণিকের জন্য আপনার মাঝে ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে নিতে হবে ফেরার প্রস্তুতি। ঢালু ও পিচ্ছিল পাহাড়ি এ পথ বেয়ে উপরে ওঠা কষ্ট হলেও সহজ। কিন্তু নেমে আসা খুবই বিপদজ্জনক ও কঠিন। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, মনোরম প্রকৃতির নির্জন স্থান দেখতে চলে আসতে পারেন কমলগঞ্জের নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাতে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মানবজমিন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৩২