(১) মোঘল আমলে সম্রাট আকবরের সময়ে হিজরী সনের সঙ্গে সামন্ঞ্জস্য রক্ষা করে যে ' বঙ্গাব্দ ' প্রচলন করা হয়েছিল তা হতে বৎসর গণনা করতে হবে।
(২) জনাব আমজেদ হোসেন সাহেব লিখেন, 'বঙ্গাব্দ' বা ফারসী সনে সৌর সনের ভিত্তিতে হিজরী সনকে গ্রহণ করা হয়। এভাবেই ' হিজরী ' সালকে ' বাংলা সনে ' রূপান্তরিত করা হয়। অর্থাৎ 'এক কথায় হিজরী সনের রূপান্তরই বাংলা সন।( স্বাগত ১৪০০ সাল )
(৩) "বাংলা সন" কিভাবে যাত্রা শুরু" প্রবন্ধে জনাব গোলাম মোর্তজা লিখেছেন- 'আকবরের রাজত্ব কালে এবং তারই নির্দেশে সৌর পদ্ধতির বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয়। বাংলা সনের গণনা শুরু হয় আকবরের সিংহাসনে আরোহনের একমাস পরে ১১ই এপ্রিল ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দে।
এই রকম উদাহরণ ভুরি ভুরি। এক কথায় আমাদের বাংলাদেশী পন্ডিতদের একই হরিবোল, " সম্রাট আকবরই বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের প্রচলন করেছেন।" কিন্তু সত্যিই কি সম্রাট আকবর ১৫৫৬ সালে বাংলা সনের প্রচলন করেছিলেন?
ইতিহাসের আলোকে চিন্তা করলে দেখা যায়। ১৫৫৬ সালে আকবর যখন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন ও কথিত বাংলা সন প্রচলন করেন তখন (বর্তমানের বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ) বাংলা ছিল কার্যত: স্বাধীন। শেরশাহের মৃত্যু পর থেকে সুবে বাংলা দিল্লী অধীনতার নাগপাশ থেকে প্রায় মুক্ত ও স্বাধীন থেকেছে। গৌড়ের পাঠান সুলতান দাউদ খাঁন কররানী ১৫৭৩ সালে সিংহাসনে বসেই গৌড় থেকে দক্ষিণে চট্রগ্রাম পর্যন্ত আপন রাজ্যসীমা বিস্তার করেছিলেন। ১৫৭৫ সালে রাজমহলের যুদ্ধে সম্রাট আকবরের বাহিনী দাউদ খাঁন কররানীকে পরাজিত ও নিহত করলেও 'সুরে বাংলায়' সুদৃভাবে শাসন ক্ষমতা বিস্তার করতে পারেননি।
বার ভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁর রাজত্ব কালেও মোগলেরা বাংলায় দাঁত ফুটাতে সক্ষম হয়নি। ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে ঈশা খাঁর পরলোক গমনের পরেও তার পুত্র মুসা খাঁ যতদিন জীবিত ছিলেন ততোদিন মোগল শক্তির আধিপত্য বাংলায় ছিল না। সুতরাং এ কথা ধ্রব সত্য যে ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দে সুবেদার ইসরাম খাঁন রাজমহল থেকে ঢাকায় "সুরে বাংলার" রাজধানী স্থানান্তরের পূর্বে বাংলায় মোঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আবার মোঘলেরা ১৬১২ খ্রীষ্টাব্দে নোয়াখালী পর্যন্ত দখল করতে পারলেও ১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দে পূর্বে চট্রগ্রাম করতলগত করতে সক্ষম হয়নি। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে বাংলায় কথিত 'বঙ্গাব্দ' বা 'বাংলা সন' তো দূরের কথা, আকবরের প্রচলিত সর্ব ভারতীয় "ফসলী সন" ও প্রচলিত হতে পারেনি। বাংলার কিয়দংশে তখন 'লক্ষণ সন', চট্রগ্রামে 'মগী সন' ও ত্রিপুরায় 'ত্রিপুরাব্দ' প্রচলিত ছিল।
তা হলে আমাদের ইতিহাসবিদরা ও পন্ডিতেরা কেন বলছেন যে সম্রাট আকবরই ১৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দে 'বাংলা সন' চালু করেছন। স্বয়ং বাংলাই যখন সম্রাট আকবরের অধীনে ছিল না তখন তের পক্ষে 'বঙ্গাব্দ' বা 'বাংলা সন' প্রচলনের প্রশ্ন উঠে কি ?
(চলবে)
২য় পর্বের সমাপ্তি
(চার পর্ব)
বিঃ দ্রঃ-
( সময়ের অভাবে লেখাটি আমি চার খন্ডে লেখার চেষ্টা করছি, এর মূল লেখক আমি নই। লেখাটি আমি পেয়েছি একটি বৈশাখী স্বরনিকা থেকে। স্বরনিকাতে লেখক হিসাবে যার নাম উল্লেখ আছে তা হলো এ, বি, এম, ফয়েজ উল্লাহ। লেখাটির শেষে লেখা আছে " লেখকঃ কলামিষ্ট, নজরুল গবেষক ও জাগরন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ।"
লেখাটি আমার ভালো লেগেছে তাই এখানে তুলে দিলাম। লেখার পুরো কৃতিত্ত্ব মূল লেখকের।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১০ সকাল ১০:২৮