somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সন কি বাঙালীর নিজস্ব ও মৌলিক সন ? (১ম পর্ব)

০৮ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে বর্তমানে খ্রীষ্টাব্দ, হিজরী, ও বঙ্গাব্দ নামক তিনটি সনের প্রচলন আছে । আন্তর্জাতিক ভাবে খ্রীষ্টাব্দের ব্যাপক প্রচলন থাকলেও মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ইত্যাদি পালিত হয় হিজরী সনের তথা চন্দ্র মাসের হিসাবে। ঈদ, রোজা সহ সব হিসাব নিকাশের জন্য হিজরীই মুসলমানদের পথিকৃত এবং বাঙ্গালীর জীবনের দৈনন্দিন কার্যকলাপ, বিয়ে-সাদী, পূজা-পর্বন এবং বর্ষবরণসহ সমস্ত অনুষ্ঠানাদি সংগঠিত হয়ে থাকে বঙ্গাব্দের হিসাবে। তাই বঙ্গাব্দ বাঙ্গালীর মন-মানসিকতা ও জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বঙ্গাব্দ বাঙ্গালীর নিজস্ব সম্পদ হিসাবে প্রচলিত ও প্রচারিত।



বলা হয়ে থাকে ভারত সম্রাট মহামতি আকবর বঙ্গাব্দের প্রচলন করেছেন। সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন। তখন ভারতে শকাব্দ, বিক্রম সম্বত, গুপ্তাব্দ, লক্ষন সন, হিজরী ও খ্রীষ্টাব্দ সহ বহু সনের প্রচলন ছিল। তবে রাজ দরবারে চন্দ্র মাসের হিজরী সনের হিসাবেই রাজকার্য ও উৎসব অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা হতো। অব্যশই আকবরের আমলে পান্ঞ্জাব, দাক্ষিণাত্য, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, দিল্লী ও তামিল নাড়ুতে শকাব্দ এবং কেরালাতে কোলবর্ষম ও বাংলায় লক্ষন সন, মগীসন, গুপ্তাব্দ সন নামক বহু সনের প্রচলন ছিল। বৎসরের একটি নির্দিষ্ট দিনে সারা ভারতে সম্রাট তার প্রজা সাধারনের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতে যেন সমর্থ হন এবং ঐ দিন যেন ভারত উৎসবের দিনে পরিণত হয় সেজন্য হিজরী সনের পরিবর্তন জরুরী হয়ে পড়ে। কারণ হিজরী সন যেহেতু প্রতি বৎসর ১০/১১ দিন এগিয়ে যায়। ফলে খাজনা বা পূণ্যাবর দিন প্রতি বৎসরই পরিবর্তন হয়। এই দূর্ভোগ থেকে বাচার জন্য সম্রাট একটি নতুন সন প্রচলন করেন। তার নাম 'ফসলী সন'।



এই ভারতীয় সন প্রচলনে মহামতি আকবর স্বতন্ত্র কিছু না করে তৎকালীন হিজরী সনকেই সৌর সনে পরিবর্তন করেছেন। এটি আকবরের কোন মৌল সৃষ্টি নয়। বরং শকাব্দ, বিক্রম সম্বত, গুপ্তাব্দ ও তামিল সনের কার্বন কপি মাত্র। কারন তৎকালে শকাব্দ ও বিক্রম সম্বত ইত্যাদি সৌর সনে ব্যবহারকৃত মাসের নাম যেমন ছিলঃ বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রাহায়ন, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র এবং সপ্তাহের সাত দিনে নাম ছিল শনি, রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঠিক তেমনি অবিকৃতভাবে ঐ সব মাস এবং দিন গুলিকেই আকবর তার সনে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ মুসলমানের হিজরী সন এবং দ্রাবিড়, আর্যদেও মাস ও বার। হিজরী চন্দ্র মাসের এবং শকাব্দ ও বিক্রম সম্বত ইত্যাদি মাস ও দিনগুলো সৌর সনের। এগুলোর মিশ্রনই হলো আকবরের সন। যা প্রর্বতনে আমির ফতেই উল্যাহ সিরাজির প্রভাব অবদান প্রচুর। আকবর তার সনের নাম দিলেন 'ফসলী সন'। ফসল কাটার সময় খাজনা উসুল করার সুবিদার জন্যই এই সনের প্রচলন। আকবর যখন তার 'ফসলী সন' প্রবর্তন করেন তখন হিজরী ছিল ৯৬৩ সন। আকবরের ফসলী সনের জন্মকালও ৯৬৩। এখানে একটি কথা প্রাণিধানযোগ্য তা হলো প্রত্যেক সনই জন্মলগ্ন থেকে ১ সংখ্যা দিয়ে শুরু হয়েছে। খ্রীষ্টের জন্ম সনের সাথে সঙ্গতি রেখে খ্রীষ্টাব্দ। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা থেকে হিজরতের সময় কাল থেকে প্রথম হিজরী গণনা করা হয়। তেমনি শকাব্দ, শুপাব্দ, কোলাবর্ষম, বিক্রম সম্বত সহ প্রত্যেক সনই প্রবক্তাদের জন্মকাল বা ঘটনা কালের সূচনা থেকেই গণনা করা হয়। শুধুমাত্র আকবরের 'ফসলী সন' এর ব্যতিক্রম। জন্মকালেই এই সনের বয়স ৯৬৩ বৎসর। অর্থাৎ হিজরীও ফসলী সনে কোন প্রভেদ নাই। সৌর ও চন্দ্র মাসের গণনায় শুধু প্রভেদ। যার ফলে হিজরী সন প্রতি বৎসর বাংলা সন থেকে দশ এগারো দিন করে কম পড়ে যায়। বাংলাদেশে লক্ষন মঘি মনের শকাব্দের মতো ভারতে সৌর সনে প্রচলন থাকা স্বত্তেও আকবরের এই অমৌলিক সনটাকেই বাংলাদেশের তাত্ত্বিক বুদ্বিজীবি ও পন্ডিতেরা 'বঙ্গাব্দ' নামে অভিহিত করেছেন। পন্ডিতেরা প্রায় সবাই এক বাক্যে বলেন যে সম্রাট আকবর 'বঙ্গাব্দ' বা বাংলা সনের প্রচলন করেছেন। অথচ ভারতের ইতিহাসে 'বঙ্গাব্দ' নামে কোন সন সম্রাট আকবর প্রচলন করেছেন বলে উল্লেখ নাই।

আসমুদ্র হিমাচল তথা কাবুল থেকে বার্মা, হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত উপমহাদেশের কোথাও 'বঙ্গাব্দ' নামক কোন সনের প্রচলন নেই। এর একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ বা তৎকালিন পূর্ব বঙ্গ। পশ্চিম বঙ্গেও শকাব্দ সনই প্রচলিত রয়েছে। যা বর্তমান ভারতের রাজসন। স্বভাবতঃই আজ প্রশ্ন জাগে দিল্লীশ্বর পুরো ভারতকে বণ্ঞ্চিত করে শুধুমাত্র বঙ্গ দেশের জন্য বঙ্গাব্দ' বা বাংলা সনের প্রচলন কেন করেছেন ?

(চলবে)
১ম পর্বের সমাপ্তি
(চার পর্ব)

ছবি গুলো ইন্টারনেট হতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ বিকাল ৫:৪৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×