somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বঙ্গোপসাগরের নোনাজল হটিয়ে তার বুকে জেগে উঠছে অসংখ্য দ্বীপখণ্ড। এসব দ্বীপে সৃজন করা হচ্ছে বনভূমি, গড়ে উঠছে বসতি। এরইমধ্যে সাগরের বুকজুড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গ মাইল আয়তনের ভূখণ্ড গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে, তৈরি হয়েছে নিঝুম দ্বীপের মতো দৃষ্টিনন্দন বনাঞ্চল। এ বছর যুক্ত হবে আরও ২ হাজার ২০০ বর্গ মাইল ভূমি। কয়েকটি ক্রস ড্যাম আর প্রযুক্তিগত কিছু উদ্যোগের মাধ্যমেই আগামী দশ বছরে ওই এলাকার আয়তন দাঁড়াবে ২০ হাজার বর্গ মাইল



বঙ্গোপসাগরের বুকে দেখা দিয়েছে আরেকটি বাংলাদেশের হাতছানি। সেখানে সমুদ্রের অথৈ জলে প্রাকৃতিকভাবেই বিশাল বিশাল চর জেগেছে, গড়ে উঠেছে মাইলের পর মাইল ভূখণ্ড। দীর্ঘদিন ধরে শুধুই 'ডোবা চর' হিসেবে পরিচিত ছিল এগুলো। এখন সেসব স্থানে জনবসতিও গড়ে উঠেছে। একই ধরনের আরও প্রায় ২০টি 'নতুন ভূখণ্ড' এখন স্থায়িত্ব পেতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরে দুই-তিন বছর ধরে জেগে থাকা এসব দ্বীপখণ্ড ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না। উপকূলীয় এলাকায় গবেষণাভিত্তিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডবি্লউএম), অ্যাকচুয়ারি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইডিপি) ও সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শীঘ্রই ২ হাজার ২০০ বর্গ মাইল ভূখণ্ড বাংলাদেশের মানচিত্রে যুক্ত হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ মুহূর্তে পানি ও পলির ক্ষেত্রে কিছু প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া খুব জরুরি। সাগর বুকের ভূমি উদ্ধার ও ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব প্রযুক্তির প্রয়োজন, সেগুলো বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে উদ্ভাবনও করেছেন। যে মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের সিংহভাগ ভূখণ্ড সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে, ঠিক সে মুহূর্তেই দেশের এই অভাবনীয় সম্ভাবনা জনমনে সীমাহীন আশা জাগিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সমুদ্র-বক্ষে জেগে ওঠা ৪০ হাজার হেক্টর ভূমিকে এখনই স্থায়িত্ব দেওয়া সম্ভব। পর্যায়ক্রমে এর পরিমাণ দুই লক্ষাধিক হেক্টরে বিস্তৃত হতে পারে। নিঝুম দ্বীপের কাছাকাছি এলাকাতেও কয়েকশ বর্গ মাইল নতুন চর জেগে উঠেছে। সেখানে এখনই বসবাস উপযোগী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলাও সম্ভব। নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ইডিপির এক জরিপ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত শুধু নোয়াখালী উপকূলেই সাড়ে ৯শ বর্গমাইল ভূমি জেগে ওঠে। তবে ভাঙনসহ নানা দুর্যোগে এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৭শ বর্গমাইল ভূখণ্ড টিকে আছে। উপকূলীয় জেলে-মাঝিরা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের জানিয়েছেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রায়ই তাদের নৌকাগুলো নতুন নতুন চরে আটকে যাচ্ছে। নিঝুম দ্বীপ থেকে ৩৫-৪০ মাইল দক্ষিণে ভাটার সময় বড় বড় চরভূমির অস্তিত্ব থাকার তথ্যও জানতে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এই চরগুলোকে পরিকল্পিতভাবে স্থায়িত্ব দিতে সরকারি উদ্যোগ-আয়োজন চলছে ঢিমেতেতালে। বিষয়টি শীর্ষপর্যায়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিক গুরুত্বও পাচ্ছে না। সমুদ্র-বক্ষে সম্ভাবনার বিশাল আশীর্বাদ এসব নতুন ভূখণ্ড পরিকল্পিত ব্যবহার, বনায়ন ও সংরক্ষণে সমন্বিত কার্যক্রম নেওয়া হয়নি এখনো।



বড় বড় আয়তনের চরভূমি

আইডবি্লউএমের উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জহিরুল হক খান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বলেন, 'নঙ্গলিয়া এলাকায় নতুন জেগে ওঠা চরে গিয়ে মেঘনার মোহনা জুড়ে বড় বড় আয়তনের নতুন ভূখণ্ড দেখা গেছে। সেসব চরের পরিণত জমিতে উড়ি ঘাস গজাতেও শুরু করেছে।' তিনি জানান, উড়িরচর থেকে জাহাজের চর পর্যন্ত ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে এ মুহূর্তেই ৫৫ হাজার হেক্টর ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। হাতিয়া-নিঝুমদ্বীপ-ধামারচর এবং ধুলা-চরমোন্তাজ-চরকুকরি মুকরি ক্রসবাঁধের মাধ্যমে মূল স্থলভূমির সঙ্গে সংযুক্ত করার খুবই চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে মাত্র দশ বছরের মধ্যেই অন্তত ২০ হাজার বর্গমাইল আয়তনের 'অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড' মিলবে।

কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত ২০ বর্গ মাইল নতুন চর জেগে উঠে। তবে নদী-চ্যানেলের গতিপথ পরিবর্তন ও সমুদ্র উপকূলীয় ভাঙনের কবলে পড়ে সাত-আট বর্গ মাইল হারিয়ে যায়। এমন ভাঙাগড়ার মধ্যেই প্রতি বছর গড়ে ১২-১৩ বর্গ মাইল ভূমি দেশের মানচিত্রে মূল ভূখণ্ড হিসেবে যুক্ত হয়। আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে জেগে ওঠা চরভূমির পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বেড়ে উঠতে দেখা যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা মোহনা সমীক্ষায়ও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। পাউবো সমীক্ষায় বলা হয়, নদীর ভাঙা-গড়ার খেলায় ভূমি প্রাপ্তির হারই বেশি।

১০ লাখ লোকের পুনর্বাসন!

এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭০ পরবর্তী ৩০ বছরে সাগর থেকে উদ্ধারকৃত জমিতে প্রায় সাড়ে নয় লাখ ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বয়ারচর ও ফেনী মোহনার উপকূলীয় এলাকায় নতুন চরভূমির স্থায়িত্ব ও বিস্তার ঘটবে এবং লাখ লাখ ভূমিহীন পুনর্বাসিত হতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব চরে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা নেওয়া হলে প্রতি বছর গড়ে ২০ বর্গ মাইলেরও বেশি ভূমি টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

মুহুরি টু সুন্দরবন রেঞ্জ

চট্টগ্রামের মুহুরি প্রজেক্ট, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়াও সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকা সংলগ্ন সাগরেও বড় বড় চরভূমি জেগে ওঠার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে সুন্দরবন (পশ্চিম) বন বিভাগের কর্মকর্তা মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্যের তিন-চার মাইল দক্ষিণে বিশাল আয়তনের নতুন চর জেগে ওঠার তথ্য জানিয়েছেন। সুন্দরবন (পশ্চিম) বন বিভাগের ডিএফও তার ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া প্রতিবেদনেও নতুন চর জেগে উঠার কথা উল্লেখ করেন। বন অধিদফতর সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানায়, নতুন বন সৃজনের মাধ্যমে চরের স্থায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে পরিকল্পনা চলছে। কাদা-মাটি, পলিযুক্ত চরভূমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়নের মাধ্যমে টেকসই ভূখণ্ড গড়ে তোলা সম্ভব হয়। বন বিভাগের প্রচেষ্টায় নিঝুম দ্বীপের মতো আরও কয়েকটি চরভূমি ঘন বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী-পাখ-পাখালির মনোমুঙ্কর অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, বিগত ৪০ বছরের ইতিহাসে পটুয়াখালী, ভোলা এবং বরগুনার নদী মোহনা-সাগরে চর জেগে সর্বাধিক ভূমি সৃজন হচ্ছে। অবশ্য সিইজিআইএসের স্যাটেলাইট ইমেজ-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীর উপকূলেই সবচেয়ে বেশি ভূখণ্ড জেগে উঠছে। ইতোমধ্যে ক্রসবাঁধ পদ্ধতিতেও বঙ্গোপসাগর থেকে লক্ষাধিক হেক্টর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় এক হাজার বর্গ মাইল আয়তনের নতুন ভূখণ্ড পাওয়া গেছে সেখানে। আরও কয়েকটি ক্রসবাঁধের মাধ্যমে নোয়াখালীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সন্দ্বীপের সংযুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়েও এখন গবেষণা চলছে। এটা সম্ভব হলে যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হবে।

সুত্র:
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০৫
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×