খ্যাতি মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা খুব কাছ থেকেই দেখেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। খ্যাতির বিড়ম্বনাতেও সাক্ষী থেকেছেন। ফর্মের চূড়ায় উঠে দেখেছেন ভালোবাসার ঢল কতটা প্রবল। ফর্মে না থেকে বুঝেছেন ভালোবাসার মানুষ কীভাবে বদলে যায় বিপদের দিনে। অর্থ, সুনাম, ব্র্যান্ড, ভ্যালু_ কোনো কিছুতেই আজকের তামিম ইকবালের চেয়ে পিছিয়ে নেই মোহাম্মদ আশরাফুল। বন্ধু নাফিস ইকবালের ছোট ভাই তামিম ইকবালকে তার অধিনায়কত্বেই অভিষেক করিয়েছেন। কতদিন কাঁধ চাপড়ে দিয়ে সাহস জুগিয়েছেন। কতদিন উৎসাহ দিয়েছেন 'ও আমাদের ভবিষ্যৎ' বলে। ছোট ভাইয়ের স্নেহের সেই তামিম ইকবালই কি-না গতকাল মারতে উদ্যত হয়েছিলেন আশরাফুলের ওপর। '.... ছেলে। আজ তোকে মেরেই ফেলব...' বলে মুখ দিয়ে বিশ্রী সব শব্দ বের করেছিল। চোখ পাকিয়ে তেড়ে এসেছিল আশরাফুলের দিকে। তামিমের এই বদলে যাওয়া চেহারা দেখে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন আশরাফুল। প্রতিবাদ তো করেনইনি, উল্টো হাত ধরে বলেছিলেন_ 'তামিম, ভাই... আমি তো তোকে কিছু বলিনি। আমি শুধু বলেছি উনি (ভিক্টোরিয়ার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদল) কেন চিৎকার করছেন আমাদের ক্রিকেটারদের ওপর।' আশরাফুলের এই সরলতাকেই হয়তো দুর্বল বলে মনে করেছিলেন তামিম। আর তাই তামিমের সতীর্থ ভিক্টোরিয়ার অধিনায়ক যখন আশরাফুলকে পুরো ঘটনার জন্য সরি বলেন তখনও পাশ থেকে তামিম তার প্রতিরোধ করেন। 'আমার খারাপ লেগেছে একটি জায়গায়। যখন সাকিব সরি বলল, তখনও তামিম পাশ থেকে বলছে সরি বলার কী আছে। সাকিব সরি বলবি না। বিশ্বাস করুন, ওইটুকু ব্যাপার আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। তা ছাড়া সব ঠিকই আছে। খেলার মাঠে এমন মাঝে মধ্যে হতেই পারে। আমিও তা নিয়ে ভাবছি না। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে, আমি ওই সময় তামিমের মতো মাথা গরম করিনি। সেটা হলে ভয়ঙ্কর কিছু হয়ে যেতে পারত।'
জাতীয় দলে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খেলে আসা আশরাফুল এভাবেই বড় ভাইয়ের মতো ছোট ভাই তামিমের বেয়াদবি ক্ষমা করে দিয়েছেন। 'ক্ষমা করার কী আছে। ও যদি মনে করে ভুল করেছে, তাহলে আর কিছুই বলার নেই। তবে এমনটা না হলেই ভালো হতো। যা হয়েছে তা হয়েছে।' ফর্মের চূড়া থেকে মাটি_ সবই স্পর্শ করা আছে আশরাফুলের। তাই তিনি জানেন, যখন ফর্ম ভালো থাকে না তখন মাঠেই মনোযোগ বেশি দেওয়া উচিত। 'ম্যাচটা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, আমাদের ফয়সাল হোসেনের ডিকেন্সের আউটটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। যা দেখে ড্রেসিং রুমের সামনে থেকে ভিক্টোরিয়ার ক্লাব কর্মকর্তা চিৎকার করতে থাকেন। আমি তখন আম্পায়ারকে দৃষ্টি আকর্ষণ করি। আর তখনই তামিম রেগে যায়। অথচ ওদের অধিনায়ক সাকিব কিন্তু নিশ্চুপ ছিলেন। বুঝলাম না, তামিম কেন অতটা রিঅ্যাক্ট করল।' আশরাফুলের মতো মাঠে উপস্থিত অনেকেই তামিমের হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারণটা বুঝতে পারেননি।