বিজ্ঞানী জর্জ গ্যামোর কথা আমরা খুব অল্পই জানি।
১৯০৪ সালের ৪ মার্চ জন্ম নেন এই রাশিয়ান বিজ্ঞানী। জন্মেছিলেন নীলস বোরদের সময়েই । সমসাময়িক বিজ্ঞানী হলেও অতটা খ্যাতি তিনি পাননি। শখের বসেই গবেষণা করেছিলেন নীলস বোরের সাথে।
বিজ্ঞান সমাজ এই বিজ্ঞানীকে ডাকেন গোপালভাঁড় বিজ্ঞানী বলেই। ইনি বিজ্ঞানকে নিয়ে গেছিলেন হাস্যরসের পর্যায়ে।
শুরুতে ইনি একবার কসমোলজি নিয়ে একটা পেপার জমা দিতে চেয়েছিলেন। তিনি মূলত বিগ ব্যাং নিয়েই একটা পেপার জমা দিতে চেয়েছিলেন। অবশ্য তিনি বিগ ব্যাং শব্দটা কোথাও উচ্চারণ না করলেও ধারনা করা হয় তিনি বিগ ব্যাং নিয়েই গবেষণা করছিলেন। তার সাথে সহযোগী ছিলেন তারই ছাত্র আলফার।
নিজের নাম গ্যামো আর ছাত্রের নাম আলফার । উনি যেহেতু রসিক মানুষ তাই নিজেদের নাম থেকে খুঁজতে থাকলেন তার গবেষণা পেপারের না। নিজের ও ছাত্রের নাম থেকে তিনি পেয়ে গেলেন আলফা আর গামা , বাকী রইল বিটা। তিনি ঠিক করলেন তার পেপারের নাম দিতে হবে “আলফা বিটা গামা পেপার”।
সেজন্য তিনি ভাবলেন তাদের এমন একজন বিজ্ঞানী দরকার যার নাম তাদের নামের সাথে মিল রেখে হতে হবে অর্থাৎ নাম হতে হবে “বিটা” বা বিটা জাতীয় কিছু। তাহলেই তাদের পেপারের নাম "আলফা বিটা গামা পেপার" রাখতে আর কোন সমস্যাই রইবে না।
মজার কথা হল, খুঁজে খুঁজে পেয়েও গেলেন অপর বিজ্ঞানীকে, যার নাম হ্যান্স বেনথার । ব্যাস হয়ে গেল। বেনথার নাম থেকেই তিনি নিয়ে নিলেন “বিটা” অংশটি । বেনথার কে কিছু না জানিয়েই পেপারে তার নাম দিয়ে সাবমিট করে দিলেন বিখ্যাত “আলফা বিটা গামা পেপার”।
পরবর্তীতে অবশ্য বেনথার জেনেছিলেন যে তার নাম তাকে না জানিয়েই যুক্ত করে দিয়েছিলেন পাগলা বিজ্ঞানী গ্যামো ।
এরপরে বিজ্ঞান মহলে তার খ্যাতি কিছুটা বেড়েছে। একবার রাশিয়া থেকে ভ্রমণের সুযোগ পান মার্কিন নগর ঘুরে দেখার। তিনি যে ক’দিনের ভিসা নিয়ে গেছিলেন সে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি আমেরিকা ছেড়ে আসতে চান নি। তার নাকি আমেরিকা খুব ভাল-লেগেছিল। পরে অবশ্য জোর করেই তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয় ।
দেশে ফিরে দেখলেন, তার ছাত্র আলফার তার অধীনেই পি এইচ ডি করার আবেদন করেছেন । তিনি তো মহা আনন্দে ছাত্রের আবদার রক্ষা করে দিলেন । ওদিকে বিপদে পড়ল ব্যাটা আলফার। এক পাগলাটে অধ্যাপকের অধীনে গবেষণা করছেন বলে তাকে কেউই তেমন গুরুত্ব দিত না । সবাই বলত পাগলা অধ্যাপকের অধীনে পিএইচডি করছে আর এক পাগল ।
এমনকি তার পিএইচডি ডিগ্রী নিয়েও অনেকে হাসি তামাশা করত ।
এই পাগলাটে মজার বিজ্ঞানী গ্যামো একবার হিসেব করে বের করেছিলেন যে আমাদের গ্রহ থেকে ঈশ্বরের দূরত্ব মাত্র ৯০ আলোকবর্ষ !
কেননা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির এক পাদ্রী ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করেছিলেন দেশে যেন শান্তি আসে । সেই যুদ্ধের ৯০ বছর পরে দেশে শান্তি ফিরে এসেছিল।
মানে পাদ্রীর করা প্রার্থনা যদি আলোর বেগেও ঈশ্বরের নিকট পৌছায় তবে তাতে সময় লেগেছিল ৯০ বছর এবং প্রার্থনা ঈশ্বরের নিকট পৌঁছানোর পরপরেই হয়ত ঈশ্বর ঐ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন !
এখানেই শেষ না । এই গোপালভাঁড় বিজ্ঞানী গ্যামো বাচ্চাদের জন্যও লিখেছেন শিশুতোষ বিজ্ঞান কল্প-কাহিনী । তার এমন এক কল্প-কাহিনীতে তিনি এমন এক গ্রহের কথা লিখছিলেন যে গ্রহে সাধারণ বাই-সাইকেলের বেগ আলোর বেগের থেকে বেশী ! ফলে সেখানকার মানুষ ইচ্ছে করলেই সাইকেল চালিয়ে আলোর বেগকে কাটিয়ে সময়ের অতীতে বা সময়ের সামনে যেতে পারত ! অর্থাৎ সাইকেল চালিয়েই সেই গ্রহের মানুষেরা টাইম ট্রাভেল করে ফেলতে পারত।
যাকে নিয়ে এতক্ষণ ধরে বকবক করলাম সেই পাগলাটে , গোপালভাঁড় বিজ্ঞানী জর্জ গ্যামোর মৃত্যু বার্ষিকী আজ ১৯ই আগস্ট।
@জাহিদ অনিক,
১৯শে আগষ্ট, ২০১৬
@তথ্য সূত্র:
১) শূন্য থেকে মহাবিশ্ব: অভিজিৎ রায়
২) উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১৪