গতকাল একটা চিঠি পেয়েছি, তোমার লেখা।
না সম্প্রতি তুমি কোন চিঠি ফিঠি লিখ নি।
চিঠিটা বোধ হয় লিখেছিলে ফাল্গুনমাসে।
বেশ পুরাতন চিঠি,
হলদে দাগ পড়ে গেছে কাগজের খামের উপরে
পুরাতন ফাইল-পত্র ঘাটতে গিয়ে খাম-বন্দি অবস্থায় পেলাম,
উপরে লেখা "চিঠি-১৩২"
আট বছর আগে এই চিঠিগুলোর জবাব আমি দিয়েছিলাম।
মনে পড়ে, ন্যাকা ন্যাকা কতগুলো কথা লিখে চিঠির উত্তর দিয়েছিলাম।
কত অপ্রাপ্তবয়স ছিলাম তখন!
ইচ্ছে করে, চিঠিগুলোর জবাব এখন আবার দেই।
ইচ্ছে করে সব বিস্তারিত লিখে জানাই,
লিখে দেই প্রেমের সাথে রাজনীতির কি সম্পর্ক,
লিখে দেই প্রেম ও অর্থনীতি কেন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
ইচ্ছে করে বুঝিয়ে বলি,
প্রেম কেবল প্রেমই নয়, কেবল দু:খ কষ্টকেই প্রেম বলা যায় না।
তোমার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল দোয়েল চত্বরে,
মনে আছে নিশ্চয়ই?
তখন কি একটা রাইটার্স এসোসিয়েশনের সাথে ছিলাম,
তুমি মিছিলের ভিতরে আসতে ভয় পেতে
আমাদের পাশে পাশে হেটে চলতে রাস্তার লালা ইটের ফুটপাতে ।
পুলিশ এসেছিল আমাদের তাড়াতে রাইফেল বন্দুক নিয়ে,
তুমি তো ভয়েই মরে যাচ্ছিলে।
বললাম, এদেশের পুলিশের অর্ডার নেই গুলি চালাবার
তেড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম বন্দুকের সামনে।
তুমি বললে, যা সাহস দেখিয়েছিলাম ইংরেজ সরকার থাকলে নাকি রায় বাহাদুর খেতাব পেতাম !
এখন আর মিটিং মিছিলে যেতে ইচ্ছে করে না
ইচ্ছে করে,
ঋতুপর্ণ ঘোষের "ঘোষ এন্ড কং" এর সঞ্চালক হয়ে যাই
অতিথি হিসেবে তোমাকে ডাকি এক সন্ধ্যায়।
দুকাপ চা খেতে খেতে,
ঋতুর মতই ছোট ছোট চিকন মেয়েলি গলায় জিজ্ঞেস করি,
"কেমন আছ তুমি ? তারপরে তো আর এলেই না "।
ঋতুপর্ণ'র মতই কথা বলতে বলতে হাত চেপে ধরে বুঝিয়ে দেই,
ঐ একশ ছিয়াত্তরটি চিঠির মর্মবেদনা কতখানি!
গতকাল সত্যি সত্যি প্যাড পেন্সিল বের করে বসেছিলাম,
চিঠির উত্তর দেব বলেই ঠিক করেছিলাম।
লেখা শুরু করতেই মনে পড়ল,
এই যাহ! তোমার ঠিকানাই তো জানি না।
সেই কবে গলির মুখের বাসা পাল্টিয়েছো,
এখন কোথায় থাকো?
ডাকপিয়ন চিঠিটা নিয়ে যাবে কোথায়?
সামনাসামনি হলে কপট রাগ দেখিয়ে বলতে,
"চুলোয় যাক ডাকপিয়ন, জলে ফেলে দিক"।
চিঠিটা লেখা শেষ!
ঠিকানাটা পাই নি,
একশ ছিয়াত্তর খানা চিঠির জবাব একটা চিঠিতে।
না, ভয়ের কিছু নেই।
সেবারের মত বাহান্ন পাতা লিখি নি।
লিখেছি মাত্র এক লাইন।
“ ভালোবাসি হে প্রিয়তম, নতুন করে আবারো ভালবাসি ”
ওহ ভুলেই যাচ্ছিলাম,
তোমার মায়ের টপ সিক্রেট রান্নার খাতাটা খুঁজে পেয়েছি,
সেটা নিতে হলেও একবার কানাগলির মাথায় আসো ।
আসবে না ?
আচ্ছা না আসো, আপত্তি নেই ।
আমি খুব করে চাইছি একবার হলেও দেখা হোক ।
হোক, রাস্তার জ্যামে পাশাপাশি চলে যাওয়া দুটি বাসে
জানালায় মুখোমুখি,
একবার হলেও দেখা হোক ।
চিঠি দেয়া হল না,
চলন্ত বাসেও দেখা হল না ।
দেখা হল না শাহবাগ কিংবা আজিজের নিচ তলায় ।
তোমাকে খুঁজে পেলাম সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সেখানে তুমি মস্ত-বড় সেলিব্রেটি !
আমি সেখানেই নিজের অস্তিত্বের জানান দিলাম ।
আচ্ছা তোমার টাইপিং স্পিড তো ভাল ছিল,
তাহলে এতক্ষণ বসে বসে মাত্র দুই এক টা শব্দে উত্তর দাও কেন ?
তুমি নিশ্চয়ই জানো ফেইক আইডি বলে কিছু নেই,
ওগুলোও কেউ না কেউ অপারেট করে ।
একটা জিনিস লক্ষ করেছ?
দিনে দিনে ফেসবুকটা কেমন ইউটিউব হয়ে যাচ্ছে !
আচ্ছা আমি যদি মেয়ে হতাম ?
সোজা তোমার বেডরুমে চলে যেতে পারতাম,
তোমার সাথে দুনিয়ার সব কথা বলে বেড়াতে পারতাম ।
ইশ, আমি যদি মেয়ে হতাম !
তোমাকে কবিতা লিখে পড়ে শুনাতে পারতাম ,
আমি এক একটা নতুন কবিতা লিখতাম
আর তোমাকে শোনাতে গেলে তুমি বলতে,
পালাও পালাও ! কবিতা ! কবিতা !
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৬