জনাব আব্দুল হামিদ। তার পদবী- তিনি কলকাতার দু নম্বর ডিস্ট্রিক্টের গো-খানার সুপারিনটেনডেন্ট। কোন এক উৎসবে তার বাড়িতে আহারের আয়োজন। শহরের বিশিষ্টজনেরা তার নিমন্ত্রিত অতিথি। এ তালিকায় আছেন কবি নজরুল ইসলামও। নানা অফিসের হর্তাকর্তারাও এ আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তার বাড়িতে আপ্যায়িত হলেন।
কথা, গল্প আর গানে রাত অনেক হয়ে গেল। সবাই ফিরে যাচ্ছে। কাজী নজরুল ইসলামের তখন বেশ হাঁকডাক। আর্থিক ভাবেও তিনি তখন ভালোই দিন কাটাচ্ছেন। তিনিও এসেছিলেন এ আমন্ত্রণে। সাথে তার মোটর গাড়ী। হলুদ রঙের এ গাড়িটি সেকালের কলকাতায় আকর্ষণীয় ছিল। এমন রঙের এ ডিজাইনের গাড়ী সাধারণত দেখা যায় না। দূর থেকে মানুষ তাই আঙুল উঁচিয়ে দেখায়, ঐ দেখ দেখ! কাজী নজরুলের গাড়ী যায়। ঐটা কবি সাহেবের গাড়ী।
অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে কবি গাড়ীতে উঠবেন। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন কলকাতার একজন ইনকাম ট্যাক্সের অফিসার। নামের শেষে তার খান বাহাদুর পদবী। কবি তার একাকী অবস্থা এবং রাতের বেলায় গাড়ীর অভাব দেখে বললেন, চলুন, উঠুন আমার গাড়ীতে, আপনাকে পৌঁছে দিয়ে যাবো।
ঐ অফিসারটির বাড়ী ছিল পার্ক সার্কাসে। আর কবি থাকেন শ্যামবাজারে। কলকাতার উত্তর-দক্ষিণে দু এলাকা। আর যেখান থেকে তারা অনুষ্ঠান শেষে বের হচ্ছেন, সেটি কলকাতার মধ্যবর্তী এলাকা। বৈঠকখানা রোড, দু নম্বর ডিস্ট্রিক্ট গো-খানা স্টাফ কোয়ার্টার।
ইনকাম ট্যাক্্েরর অফিসারকে পোঁছে দিতে কবির বেশ অনেকখানি পথ যেতে হল। তারপর আবার উল্টোপথে ঘুরে নিজের বাড়ীতে ফিরে এলেন। দূরত্ব, সময় এবং অবস্থায় কবির বেশ কষ্ট সহ্য করতে হল ভদ্রতা এবং মানবিকতার খাতিরে।
তিনদিন পর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ঠিকানায় চিঠি এসেছে। চিঠির প্রেরক- কলকাতার ইনকাম ট্যাক্স অফিসের ঐ ভদ্রলোক। তাতে নির্দেশ এসেছে, খুব শিগগিরই যেন কবি তার যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাবপত্র অফিসে দাখিল করেন।
এমন চিঠি এবং আদেশ পেয়ে কাজী নজরুল যেন আকাশ থেকে পড়লেন। মুখ হা করে তিনি দু চোখে সর্ষেফুল দেখতে লাগলেন। এ আবার কি বিপদ ডেকে আনলেন তিনি!! অভাব অনটন আর ইচ্ছেমতো খরচের সংসারে তার বসবাস। একখানা গাড়ী তো আছে, সেটিও তো ধার করে কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে কেনা। তার আবার কিসের হিসাব পত্র!!
এমন আদেশের সংবাদে ছুটে এলেন তার বন্ধুরা। তারাইতো সবচেয়ে ভালো জানেন কবির ঘরের অন্দর মহলের খবর। তার স্বভাবচরিত্রের প্রহর। তারা এখানে ওখানে আলাপ আর দেন-দরবার করে শেষ পর্যন্ত ঝামেলা মেটাতে সক্ষম হলেন। তবে এ নিয়ে কবি বেশ কিছু দিন উৎকন্ঠা আর উদ্বেগে ভুগতে হয়েছিল। বন্ধুদেরকে তিনি বলতেন, দেখলি রে তোরা, সে রাতে অফিসারকে উপকার করতে গিয়ে ভদ্রতা দেখালাম- এর পরিণাম কি হলো!!
জাতীয় কবির জীবন থেকে নানা অজানা ঘটনা নিয়ে ধারাবাহিকের অংশ
আমার লিখিত এবং সংকলিত আগের পর্বগুলো
কেন এবং কীভাবে এ ধারাবাহিক..
চলুন, কাজী নজরুলকে দেখে আসি কলকাতা থেকে..
নজরুলের রক্ত নেয়া হলো না... কিন্তু কেন??
পাগলের গলায় গান ধরালেন কবি নজরুল
কবি কাঁদলেন এবং বদলে গেলেন যে ঘটনায়
কবি নজরুলের অদ্ভূত কান্ড কারখানা
যেভাবে তৈরী হতো তার গান-গজল....
কাজী নজরুলের খেয়ালখুশী
কবির ঢাকা ভ্রমণের বিচিত্র কান্ড কারখানা
নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন কবি কিন্তু ফলাফল!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:৩৫