কাজী নজরুল ইসলামের জীবনকাহিনী যতই পড়ি ততই বিমুগ্ধ হতে হয়। নির্বাক হওয়ার আগে তিনি যে কবছর তার কর্ম ও সৃষ্টিতে তৎকালের সবাইকে হতবাক করে যাচ্ছিলেন, তার সেসময়গুলো ছিল বড্ড বিচিত্র।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বন্ধনহীন। কোন বাধা তাকে আটকাতে পারেনি। যখন যা চেয়েছেন, আপনমনের খেয়ালে তা-ই করেছেন। ঠিক কি বেঠিক, ভাল কি মন্দ- সব তিনি করেছেন পরমানন্দে।
অনেকের হয়তো জানা নেই যে, আমাদের প্রিয়কবি নজরুল কিন্তু নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন। অবাক হলেও কিছু করার নেই, কারণ তিনি ঐ নির্বাচনে জয়লাভ করেননি।
১৯২৬ সাল। মাসের নাম নভেম্বর। পূর্ববঙ্গের নির্বাচনে কবি নজরুল কেন্দ্রীয় আইনসভার সভ্যপদপ্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দিতায় নেমেছিলেন। শুধু কি তাই, এ নির্বাচনী প্রচারের জন্য তিনি এসেছিলেন ঢাকা, ফরিদপুরসহ কয়েক জায়গায়।
কবির আশা ছিল, তার এ নির্বাচনে কংগ্রেস তাকে সাহায্য করবে। কিন্তু কবি নজরুল তা পাননি। ফলে হয়ত তিনি নিশ্চিত ছিলেন পরাজয়ের ব্যাপারে। কাজেই ২৯ নভেম্বর ফলাফল প্রকাশের তারিখ হলেও তিনি ২৩ নভেম্বর ফিরে আসেন।
ব্রজবিহারী বর্মণকে লেখা এক চিঠিতে কবি তার এ পরাজয়ের জন্য কংগ্রেসের তরফ থেকে যথেষ্ট সাহায্য না পাওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই চাল চলনে ও আচার ব্যবহারে কাজী নজরুলের ঔদাসীন্য দেখে তার গ্রামের লোকজন তাকে ডাকত ‘তারা খ্যাপা’ বলে। কেউ কেউ এতিম নজরুলকে দেখে আদর করে ডাকত ‘নজর আলী’ বলে।
দারিদ্য ছিল তার পরিবারের নিত্যসঙ্গী। আয় রোজগারের জন্যই তিনি তার বাবার মৃত্যুর পর অল্প বয়সেই মসজিদের দায়িত্ব পালন করতেন আজান দিয়ে, নামাজ পড়াতেন ইমামতি করে।
সংসারের ভরণপোষণ আর সেইসাথে তার ভেতর যে প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটছিল তার তাগিদে মাত্র বার তের বছর বয়সী নজরুল ফাঁকে ফাঁকে গান গজল কবিতা লিখতেন।
একটু নাম ডাক ছড়িয়ে যাওয়ায় এ বয়সেই তিনি তিনটি লেটোনাচের দল, যা ছিল তৎকালে পশ্চিমবঙ্গের আমোদ বিনোদনের মাধ্যম, নিমসা, চুরুলিয়া এবং রাখাখুড়া- এ তিনটি দলের নাটক রচনার ভার পেয়েছিলেন।
এসব আয়োজনে কবির লড়াই নামে একটি অংশ থাকত। এতে তখনকার কবিরা নিজেদের কবিতা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামতেন। যে কবি জিততো তাকে গোদাকবি আখ্যায়িত করা হতো। নজরুলের ছোটবেলায় তাদের গ্রামে যে গোদাকবি থাকতেন, তিনি নজরুলকে ডাকতেন আদর করে ‘ব্যাঙাচি’ বলে। প্রায়ই তিনি বলতেন, তোমরা দেখে রাখো, আমার এ ব্যাঙাচি একদিন বড় হয়ে সাপ হবে।’
গোদাকবির সে ধারণা যে মোটেও মিথ্যা ছিলনা, তার প্রমাণ এই এত বছর পরও আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রিয় পাঠক, অনেকদিন পর আবার কবি নজরুল ইসলামের বিচিত্র ব্যক্তিজীবন নিয়ে লেখা শুরু হল। আগের পর্বগুলোতে আমার লেখার কারণ ও সূত্র উল্লেখিত আছে। চাইলে দেখে নিতে পারেন। ভাল থাকুন।
আপনার বিশেষ কোন মতামত জানাতে কিংবা প্রশ্ন থাকলে মেইল করুন
[email protected]
ধারবাহিক পর্বগুলো- কবি নজরুলের কষ্টচিত্র
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৩৬