somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাগলকে দিয়ে গান গাইয়ে কবি নজরুল বললেন, হুজুগে বাংলায় এসব একবারই চলে..........

১৮ ই জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি নজরুল তখন খুব ব্যস্ত। নিয়মিত গ্রামোফোন কোম্পানীর রিহার্সাল রুমে আসেন, গান লিখেন, সুর করেন, গান শিখিয়ে দেন। বেশীর ভাগ গান গাইছেন কে মল্লিক। একদিন এই কে মল্লিকের কাছে এক লোক এল। লোকটির নাম প্রফেসর জি দাস। এসে ধরল মল্লিক কে-
দেখুন মল্লিক বাবু, আপনার বাড়ী কালনা, আমার বাড়ী কাটোয়া, বলা চলে একই দেশের লোক। আমাকে কি আপনি একটু উঠতে দিবেন?
আরে, দেশের লোক উঠতে পারলে তো আমারই খুশী। তো কী চান বলুন।
আমি গান গাইতে চাই, নেবেন আমাকে?
কিন্তু গান গাইতে হলে তো পরীক্ষা দিতে হবে আমাদের কোম্পানীতে।
জ্বী আমি রাজী।
পরীক্ষা নেয়া হল প্রফেসরের। ফলাফল একেবারে অচল। গান নেওয়া হবে না শুনে ওখানেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলেন বেচারা প্রফেসর। কে মল্লিক যতই সান্তনা দেন, বেচারা ততই দ্বিগুণ কাঁেদন। আওয়াজ শুনে এলেন কোম্পানীর বড়বাবু। তিনি সব শুনে প্রফেসরকে বললেন, আপনার গলা এখনও ঠিক হয়নি। সুর তাল লয় ঠিক থাকছেনা, কদিন পর আসুন, দেখা যাক কী হয়।
প্রফেসর লোকটি তখন বড়বাবুর কাছে কয়েকজনের নামে বিচার দিলেন যারা তাকে ফুঁসলিয়ে মিষ্টি খেয়ে নিয়েছে তার কাছ থেকে। ওরা নাকি তাকে এও বলেছে যে তোমার গলা ভাল হলেও কে মল্লিক হিংসা করে তোমাকে গান গাইতে দিবে না। বড়বাবু বুঝলেন যে বেচারা খুব সরল মানুষ, তাকে যেভাবে বুঝানো হয়েছে সে বুঝেছে। প্রফেসরের কান্না আর থামছে না।
এমন সময় রুমে ঢুকলেন কাজী নজরুল। কী ব্যাপার? বলে তিনি মনোযোগী হলেন কান্নাকাটির কারণ জানতে। বড়বাবু আর কে মল্লিক তাকে সব খুলে বললেন। কবি তখন বললেন, বেচারা থেকে রেকর্ডের আশ্বাস দিয়ে যখন মিষ্টি খাওয়া হয়েছে, অতএব তার একটা গান রেকর্ড করতেই হবে।
আরে কাজীদা, কী বলছেন আপনি? দেখছেন না লোকটা একজন পাগল।
আরে মল্লিক, আমারা বাঙালীরাও কিন্তু কম হুজুগে নই, দেশটাও হুজুগে। এই বলে কবি প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে বললেন, শোনো, তুমি কাল এস, তোমাকে শিখিয়ে আমি রেকর্ড করিয়ে নিব।
কবি নজরুল বলে কথা। মল্লিক আর বড়বাবু তাকে ভাল করেই জানেন। কাজেই সবাই পরবর্তী কান্ড তামাশা দেখার অপেক্ষায় থাকলেন।
পরদিন কবি এসে দেখেন, প্রফেসর জি দাস অনেক আগেই এসে হাজির। কবি তাকে দেথে বললেন, যাও মল্লিককে ডেকে আনো।
আবার মল্লিকের নাম শুনে মন খারাপ হয়ে এল বেচারার। কাজীদা, ঐ লোকটি এলে আমার গান খারাপ করে দেব’ বলে অভিযোগ করলেন মল্লিকের বিরুদ্ধে।
কবি তাকে সন্তনা দিয়ে বললেন, আরে না, মল্লিক খুব ভালো লোক, তোমার সাথে কেমন সুন্দর হারমোনিয়াম বাজায়, তুমি দেখো।

খবর পেয়ে মল্লিক সাহেব এলেন। কাজী নজরুল তাকে দেখে বললেন, আরে আসুন আসুন, প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি তবলাওয়ালাকে ডাকো, তারপর দরজায় খিল এঁটে দাও।
রিহার্সাল রুমে তখন চারজন। কাজী নজরুলের কান্ড দেখার জন্য মল্লিক সাহেব চোখ বড় করে তাকিয়ে আছেন। তবলাওয়ালাও ভাবছে, এই পাগলকে দিয়ে কী গাওয়াবেন কাজী সাহেব, কে জানে?
কবি এবার তৈরী হয়ে প্রফেসরকে বললেন, শোনো, তোমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, কী গাইবে, কিছুই বলবেনা তখন। খুব সাবধান, বাজারে রেকর্ড এলে যেন সবাই শুনে। তার আগে যেন কেউ টের না পায়।
বেচারা প্রফেসর মাথা নেড়ে সুবোধ বালকের মত সায় দিল। হেসে হেসে বলল, না , না, কাউকে শোনাবো না।
আচ্ছা, এবার গান ধরো, বলে কাজী নজরুল তাকে বলতে বললেন,
কলা গাড়ি যায় ভষড় ভষড়/ ছ্যাকরা গাড়ী যায় খচাং খচ/ ই্িচং বিচিং জামাই চিচিং/ কুলকুচি দেয় করে ফচ।।
অদ্ভুত এমন গান শুনে উপস্থিত বাকী দুজন ওখানেই হাসতে লাগলেন, কবির কান্ড দেখে তারা ততক্ষণে খেই হারিয়ে ফেলছেন। পরের দিন এর আরেকা জোড়া লিখে আনলেন কবি, এবার অপর পিঠে রেকর্ড করালেন আরেক গান-
মরি হায় হায় হায়. কুব্জার কী রুপের বাহার দেখো।/ তারে চিৎ করলে হয় যে ডোঙা/ উপুড় করলে হয় সাঁকো।/ হরি ঘোষের চার নম্বর খুঁেটা, মরি হায় হায় হায়//
এ গানে প্রফেসরকে যে চতুষ্পদ বানানো হচ্ছে, তাও কেউ টের পেলনা। খুব উৎসাহে প্রফেসর রিহার্সাল করতে থাকল। রেকর্ডিং ম্যানেজারকেও জানানো হলনা, কী গান কাকে দিয়ে রেকর্ড হচ্ছে? চরম গোপনে গান দুটো রেকর্ড হল, তারপর বাজারে ছাড়া হল।
বাজারে প্রকাশিত হওয়ার দু একদিন পর কবি মল্লিককে ডেকে বললেন, একটু দেখে আসুন তো বাজার থেকে, কেমন বিক্রি হচ্ছে গান দুটো?
বাজারে খোঁজ নিয়ে এসে মল্লিক হাসতে হাসতে বললেন কবিকে, কাজী দা, খুব বিক্রি হচ্ছে অদ্ভুত গানদুটো। ক্রেতারা কিনছে আর গাইছে, কলা গাড়ী যায় ভষড় ভষড়.....

কোম্পনীর ম্যানেজার তো দারুণ খুশী। বড়বাবুকে ডেকে বললেন, তুমি তো বলেছিলে, লোকটি পাগল। ওর গান তো বেশ সেল হচ্ছে, আরো দু একটা নাও না ওর গলায়..

মল্লিক সাহেব দৌড়ে গিয়ে কাজীকে কর্তার প্রস্তাব জানালেন। কবি হাসতে হাসতে বললেন, মল্লিক সাহেব, এবার কিন্তু গালাগাল খেতে হবে, হুজুগে দেশে এসব একবারই চলে। বলেই আবার জোরে হাসিতে ফেটে পড়লেন আমাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

এই ছিল তার রসিক কান্ড, খেয়াল খুশীতে তিনি পাগলকে দিয়েও বাজার মাত করে ফেললেন, অবাক হয়ে পুরো কোম্পানী তার প্রতিভার কাছে তাই মাথা নুইয়ে থাকতো।

আগের অন্যান্য পর্বগুলো- Click This Link
১০টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×