ভাইয়া একটু মন ভুলা। অনেক দিন আগে ভাইয়া বাসে মানিব্যাগ ফেলে বাস থেকে নেমে চলে গিয়েছিল। বাস স্টপ থেকে বাস ছেড়ে দেবে , ড্রাইভার দরজা লাগিয়ে দিয়েছে , এমন সময় একটা ছেলে বাস থামিয়ে দ্রুত মানি ব্যাগ নিয়ে ভাইয়াকে দিলো। ছেলেটি ভাইয়ার পাশেই বসা ছিল। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হল বাস ছেলেটাকে ফেলে চলে গেল। উন্নত দেশ গুলোতে বাস স্টপেজে বাস বেশিক্ষণ থেমে থাকে না। যাত্রী নামা মাত্রই চলে যায়। মানিব্যাগে অনেক রুবল ছিল। ছেলেটি বাস কার্ড- এর রুবল খরচ করে আবার গন্তব্যে পৌছানোর জন্যে বাস স্টপেজে অপেক্ষা করল।
কয়েক মাস আগে আবারো ভাইয়া শপিং করতে গিয়ে মার্কেটে মুল্যবান ব্যাগ ফেলে চলে এসেছে, মার্কেটের একদম বাইরে চলে আসবে এইমুহূর্তে পিছন থেকে দৌড়ে আসলো দোকানদার মহিলা। রাশিয়ান ভাষায় দোকানের বিক্রেতা মহিলা ভাইকে কি যেন বলে হাসি মুখে ব্যাগ দিয়ে দিল।
এখানে প্রচন্ড শীত পরার কারনে ভাইকে দেশে পাঠানোর প্রয়োজন হল।বড় ভাইয়ের ব্রংকাইটিস আছে। সাধারনত শীত বেশি হলে ভাইয়ের এখানে থাকা সমস্যা হয়ে যায়।
ভাই যখন বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে নেমে রেল স্টেশনে যায় তখন পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু ট্রেনে ভিড় ঠেলে উঠে পকেটে হাত দিয়ে দেখে মানিব্যাগটা নেই।প্রায় একশ ডলার আর কিছু বাংলা টাকা ছিল।
ভাইয়ার পাশে বসে থাকা সেই রাশিয়ান যুবক, মাঝ বয়সী মহিলা দোকানি আমাদের দেশে বড়ই অভাব। এখানে যে আগে কেড়ে খেতে পারবে, যে আগে থাবা দিয়ে শক্ত করে অন্যের সম্পদ বা অর্থকে ধরতে পারবে, সব কিছু তারাই।শত জনের সম্পদ একজন খায়। শুধু যে পকেটমার গেছে এ জন্যেই বলছি না। পুরো পুজিবাদী সমাজকে বলছি।
আমাদের দেশে জীবন বড় নিষ্ঠুর। কাউকে পাপি হতে বাধ্য করে, আর কেউ পাপকে জন্ম দিয়ে তার বীজ বপন করে দেয়। সমাজ এ ধারায় চলতে থাকে। বীজ থেকে পাপের গাছ, গাছ থেকে ফল। ফল থেকে আবারও সেই বীজ।
আসলে একটা দেশকে পরিবর্তন করতে হলে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে সবার আগে। ক্ষুদ্র মার্বেলকে চক চকে টাইলসের উপরে ফেলে দিলে সেটাকে টাইলস রাখে না , মার্বেলটাকে উপরের দিকে ড্রপ করে দেয়।কিন্তু মাটি! মাটির উপরে ফেললে সেটা আর ড্রপ করে না। মাটি তার নিজের কাছে ক্ষুদ্র মার্বেলকে রেখে দেয়।আমরা কি পারি না মাটির মত উদার হতে? উন্নত দেশ গুলোতে তাদের রাষ্ট্র ছোট থেকেই একা চলার শিক্ষা দেয়।সাম্যতার শিক্ষা দেয়। নিজের পায়ে নিজেকে দাড়ানোর শিক্ষা দেয়। সেখানে সর্বচ্চ বিদ্যাপিঠে লেখাপড়া করে চাকুরী না পেয়ে বেকার থাকে না। সমাজে অকর্মা উপাধি নিয়ে কেউ আত্মহত্যা করে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১৩