ভূমিকা :
মানুষ ভয় কে আগলে রাখে অথবা খুব সহজে মন থেকে সরাতে পারে না। কারণ ভয়ের পেছনে যে মিথ্যেগুলো ঘুরঘুর করে সেগুলোকে সে বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাস টা দিন দিন যত গাঢ় হয় সাথে সাথে গাঢ় হয় ভয়। ভয় কে জয় করার অন্যতম উপায় হলো এর পেছনের সত্যতা যাচাই করা। আমি আসলেই যা দেখছি বলে মনে করছি, বিলিভ করছি সেটা কি আসলেই সত্য? এর পেছনের কারন কি? অথবা কতটা যৌক্তিক?
এক :
"স্লিপ প্যারালাইজড" যেটাকে বাংলায় বলে "বোবায় ধরা"।
আমরা এই শব্দটার সাথে মোটামুটি ভালোভাবে পরিচিত। ছোটবেলা থেকে প্রায়ই এই অনুভূতির সাথে আমার দেখা হতো। আমি তখন মনে করতাম এটা অতিপ্রাকৃত কোন বিষয়। এবং আমার আশেপাশের মানুষ ও আমাকে সঠিক কোন ব্যাখা দিতে পারতো না। ঘুমের মধ্যে মনে হতো কেউ আমার উপর এ বসে আছে অথবা আমার মুখ, পা বেধে রেখেছে। প্রথম প্রথম ভয় পেতাম। পরে বড় হয়ে এ ব্যাপারে পড়াশোনা করলাম এবং বুঝতে পারলাম এটা আমাদের ব্রেইন এর ঘুম থেকে সজাগ হওয়ার মধ্যবর্তী অবস্থা। যেখানে আমাদের ব্রেইন সজাগ হয়ে আছে কিন্তু আমাদের শরীরের বাকি অংশের সাথে এর যোগাযোগ স্থাপিত হতে সময় লাগছে। এখন এ বিষয় সম্পর্কে আমরা সবাই জানি এবং বুঝি। গ্রামের কেউ এসে "স্লিপ প্যারালাইজড" এর বর্ননা শুনে যদি বলে আমাদের জ্বীন এ ধরেছে তাহলে আমরা নিশ্চয়ই হেসে উড়িয়ে দিবো। বলবো তার অজ্ঞতার অভাব। ঠিক এরকম ভাবেই প্রতিটা জিনিসের ই ব্যাখা রয়েছে হয়তো আমরা সে সম্পর্কে অজ্ঞ নই। আপনি যে সমস্যা কে অতিপ্রাকৃত মনে করছেন একটু রিসার্চ করলেই দেখবেন এই কমন সমস্যা গুলো পুরো পৃথিবী জুড়েই আছে এবং এর পেছনে মেডিক্যাল সাইন্স খুব সুন্দর করে ব্যাখা দেয়া আছে।
দুই :
ছোটবেলায় আমাদের দুই বিল্ডিং পরেই যে বাসা টা তার নিচের তলায় এক মেয়েকে শেকল দিয়ে বেধে রাখা হতো। সবাই বলতো তার কাছে কয়েকটা জ্বীন আছে। তার বড় দুই ভাই আবার হাফেজ। তারা বলতো এক বোতলে করে তারা কয়েকটা জ্বীন আটকে রেখেছে। আমরাও তাই বিশ্বাস করতাম। হটাত সে রাস্তায় বের হয়ে পড়লে আমরা খেলা বাদ দিয়ে যে যার বাসায় ঢুকে পড়তাম। আমার ছোটবোন মারাত্মক ভয় পেতো। পরে যখন বড় হলাম বুঝতে পারলাম মেয়েটা আসলে ডাউন সিনড্রোম এর অধিকারী। she is just a person who has extra chromosome.
তিন :
আমার বারান্দার চারিপাশ টাই এখন বিল্ডিং দিয়ে ব্লক। আগে এর একপাশে একটা বিশাল আমগাছ ছিলো। আমার বারন্দায় এর ছোট ছোট ডাল এসে পড়তো। কথিত আছে বছরের এক সময় এখানে ডিম দুধ চাল দেয়া হতো গাছে থাকা জ্বীন দের খেতে দেয়ার জন্য। পরদিন সকালে নাকি রক্তমাখা অবশিষ্ট পাওয়া যেতো। তো আমি ছোটবেলায় রাতের পর রাত বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে থেকেছি জ্বীন রা কিভাবে খায় দেখার জন্য। আমার দুর্ভাগ্য আমি দেখতে পারিনি।
চার :
এটা আমাদের পাশের বিল্ডিং এর ঘটনা। সেখানে এক আপু ছিলো। সবাই বলতো তার কাছে জ্বীন আসে। সবাই তার কাছে সন্ধ্যেবেলায় যেতো পাগলামি দেখার জন্য। সে হাসতো হি হি করে। মাঝে মাঝে কেপে উঠতো। উল্টাপাল্টা বলতো। আমরাও ভয়ে থাকতাম। সন্ধ্যেবেলায় ওই গলি দিয়ে যাওয়ার সাহস ই পেতাম না। বড় হয়ে বুঝতে পারি উনি হিস্টেরিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
শেষধাপ :
এরকম আরো ঘটনা আছে আপনার চারিপাশে। সেগুলো দেখে ভয় না পেয়ে কারন টা উদঘাটন করুন। আমার মনে আছে আমি হটাত করে একবার ঘুম থেকে উঠে যাই কোন শব্দ পেয়ে। আমার বারান্দার দরজা লাগানো। কে যেন দরজার ওপাশ থেকে ঠকঠক করছে। আমি ভয় পেলেও সেটা কি দেখতে চাইলাম। দরজা খুলে দেখলাম ব্যাট ঝুলিয়ে রাখার চিকন কাঠের টুকরা খুলে দড়ির সাথে ঝুলে আমার দরজায় নক করছে বাতাসের সাথে সাথে।
রাতের বেলা যখন বিড়াল অথবা কুকুর ডেকে ওঠে তখন ভাববেন না তুর্কিস সিনেমাতে যা দেখেছেন এখানে তাই ঘটছে। বরং এটা ভাবুন কোন চোর কে দেখে অথবা অন্য এলাকার কুকুর দেখে আপনার গলির কুকুর টা ঘেও ঘেও করছে। এটাই যৌক্তিক এবং বাস্তব। রাত হলে শুধু সূর্য টা পৃথিবীর অপর পাশে আলো দেয় এবং এইপাশে অন্ধকার হয় এছাড়া আর কিছুই না।
আমরা কেন ভয় পাই এবং বাজে স্বপ্ন দেখি?
আমরা যখন স্বপ্নে কোন অপরিচিত অথবা আগে কখনো দেখিনি এমন কোন মানুষ দেখি তখন বাস্তবে কখনোই আমরা তার ফেইস মনে করতে পারবোনা। অথবা স্বপ্নে তার ফেইস আড়ালে থাকে। এর কারন আমাদের ব্রেইন ঘুমন্ত অবস্থায় যা কখনো বাস্তবে অবগত নয় বা ভাবেনি সেটা সে কখনো ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারে না। এমিগডালা আমাদের ব্রেইন এর এমন এক অংশ যা আমাদের স্ট্রেস, ভয় কে নিয়ন্ত্রন করে। আমাদের ভয় এর স্মৃতি গুলো সেখানে সংরক্ষিত থাকে। সেই ভয়টা কোন ভৌতিক কাহিনী, সিনেমা অথবা বাস্তব জীবনের কোন দুর্ঘটনা থেকে তৈরি হতে পারে। যখন আমরা প্রচুর স্ট্রেস এ থাকি..অথবা সময়মতো না ঘুমাই তখন আমাদের এমিগডালা ঘুমের সময় একটিভ হয়ে আমাদের ভয় এর স্মৃতিগুলোকে জাগ্রত করে এবং আমরা তখন বাজে স্বপ্ন গুলো দেখি। যার কারনে পরবর্তীতে আমাদের ট্রমাটাইজড এর মত অবস্থাতেও পড়তে হয়। এ থেকে বাচার একমাত্র উপায় মাথায় জমে থাকা ভয় গুলোকে দূর করা। আর ভয় দূর করার উপায় ভয় কে জয় করা। আর ভয় কে জয় করার একমাত্র উপায় সত্য কে জানা।
আসুন আমরা সত্য জানি..বিজ্ঞানে বিশ্বাস রাখি। নিজেকে মানসিক ভাবে হেলদি রাখি। এবং কাছের মানুষগুলোকে দুশ্চিন্তামুক্ত-সুস্থ রাখি।
সত্যেই মুক্তি..
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭