অ্যাডলফ হিটলার..
নামটি শোনার সাথে সাথেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে টুথব্রাশ গোফের অধিকারী একজন ব্যক্তির অবয়ব..
সমালোচিত এ ব্যক্তি ছিলেন জার্মান নাৎসি পার্টির লিডার এবং তৃতীয় রাইখের শাসক..যার আকাংখা ছিলো আকাশচুম্বী...তিনি চেয়েছিলেন পুরো ইউরোপ জুড়ে তৃতীয় রাইখের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক কে বর্তমান বিশ্ব ঘৃনার সাথেই স্মরন করে থাকে। আজ তার জীবনের ভিন্ন একটি দিক নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রত্যেক মানুষের মাঝেই নিজস্ব কিছু দুর্বলতা থাকে...হিটলার এর মাঝেও কিছু দুর্বলতা ছিলো...তার মাঝে ডিপ্রেশন ছিলো..চোখের পানি ছিলো..ব্যারস্টেসগ্যাডেন এর ঈগল নেস্ট এ একা একা বসে তিনি কি শুধুই ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন দেখতেন...? অথবা কাউকে না বলে কেন হঠাত করেই ব্যারস্টেসগ্যাডেন এর নিরাপত্তা এড়িয়ে পাহড়ি বনে যেয়ে বসে থাকতেন? পাহাড়ের উপর একা একা বসে কি ভাবতেন তিনি? তার জীবনে কখনো কোন নারী আসেনি? তাদের সাথে তার সম্পর্ক ই বা কেমন ছিলো? আসুন দেখি কিছু জানা যায় কিনা....।
গ্যালী রুবলঃ
হিটলার তখন ২০-২১ বছরের টগবগে যুবক...ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য...নিয়মিত মিটিং মিছিলে অংশগ্রহন করে দলে খুব প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছেন...এমন সময় হিটলারের মনে প্রভাব বিস্তার করে গ্যালি রুবল নামে এক তরুনী...তিনি ছিলেন হিটলারের জীবনের প্রথম প্রেম...গ্যালি রুবল ছিলেন হিটলারের সৎবোন এর মেয়ে..সম্পর্কে ভাগ্নি..তাদের প্রেম খুবই মধুর ছিলো..হিটলার পার্টির কাজ বাদ দিয়ে গ্যালীর হাত ধরে পার্কে আর সিনেমা হলে ঘুরে বেড়াতেন...খুব শীঘ্রই পরিবার থেকে তাদের এ সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ওঠে...হিটলার সেদিকে কান না দিয়ে গ্যালীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন...কিন্তু গ্যালী একসময় পরিবার ও সমাজের কাছে হার মেনে যায়...সে না পারছিলো পরিবার কে ত্যাগ করতে .. না পারছিলো হিটলার এর আবেদন কে প্রত্যাখান করতে..তাই ১৯২১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে গ্যালি হিটলারের কাছ থেকে শেষ বিদায় নেন...অতপর রান্নাঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে গ্যাস বারনারের নব খুলে দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার পর হিটলার অনেকটাই মুষড়ে পড়েন...পাগল প্রায় হয়ে যান...বেশ কয়েক সপ্তাহ উশকো খুশকো চুল আর ময়লা কাপড় পড়ে তিনি মিউনিখের রাস্তায় ছন্নছাড়া যুবকের মতো ঘুড়ে বেড়িয়েছেন...যদিও খুব শীঘ্রই তিনি এ শোক সামলে ওঠার শক্তি খুজে পান...আবারো মিটিং মিছিলে ব্যস্ত হতে থাকেন..
রেনেটা মুলারঃ
গোয়েবলস ছিলেন হিটলারের প্রচারমন্ত্রী...শীর্ণকায় গোয়েবলস নারী কেলেংকারীর জন্য বেশ সমালোচিত ছিলেন...এ ব্যাপারটি হিটলার একদম ই পছন্দ করতেন না। কারন গোয়েবলস এর স্ত্রী ম্যাগডা কে হিটলার ছোট বোনের মতো স্নেহ করতেন...হিটলারের জীবনের দ্বিতীয় প্রেম গোয়েবলস এর হাত ধরেই সংঘটিত হয়...তিনি তৎকালীন জার্মানির জনপ্রিয় নায়িকা রেনেটা মুলার এর সঙ্গে হিটলারের পরিচয় করিয়ে দেন..প্রথম দেখাতেই হিটলার রেনেটার প্রেমে পড়ে যান...রেনেটা তাকে ভালোবাসেন কিনা সেটা বোঝা না গেলেও তিনি হিটলারের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন...তিনি কখনো ব্যারস্টেসগ্যাডেন এ আসতেন অথবা হিটলার মাঝে মাঝেই বার্লিন এ তার ফ্ল্যাট এ যেয়ে দেখা করে আসতেন হাজার হাজার মার্কের উপহার সামগ্রী নিয়ে..এভাবেই চলতে চলতে হিটলার গেস্টাপোর মাধ্যমে জানতে পারেন রেনেটা হের নামক এক ইহুদীর সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছেন...তিনি রেনেটা কে ব্যারস্টেসগ্যাডেন এ নিয়ে আসলে রেনেটা সকল দোষ স্বীকার করে নেয়...হিটলার মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন...রেনেটা তার কাছে দ্বিতীয় সুযোগ চান...দু মাস পর রেনেটা হিটলার কে ফের ধোকা দিয়ে হের কে সঙ্গে করে জার্মানি ছেড়ে পালিয়ে যায়...কিন্তু কিছুকাল পড়েই আবার জার্মানি তে ফিরে আসেন...এরপরে কোন একদিন শোনা যায় রেনেটা মুলার চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন...যদিও অনেকেই মনে করেন গেস্টাপো এর সাথে জড়িত রয়েছে...
জেনি জুগোঃ
হিটলারের জীবনে রেনেটার পরে জেনি জুগো নামক আরেক অভিনেত্রীর আগমন ঘটে...ইনিও গোয়েবলস এর হাত ধরেই এসেছিলেন...যদিও এ লাস্যময়ী হিটলারের জীবনে রেনেটার মতো এতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি...কয়েক মাস পরেই তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।
ইভা ব্রাউনঃ
হেনরিখ হফম্যান নামক এক ফটোগ্রাফার হিটলারের খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। হিটলারের ব্যক্তিগত ফটো তোলার ভার তার উপরেই ছিলো। ইভা ব্রাউওন ছিলেন তার অ্যাসিসটেন্ট। তিনি নানা পোজে হিটলারের এর ছবি তুলতেন..একসময় তার প্রতি মোহিত হয়ে পড়েন। তাদের সম্পর্ক দিন দিন গভীর হতে থাকে। গোয়বলস ইভা কে পছন্দ করতেন না। তিনি অভিযোগ তোলেন ইভার শরীরে ইহুদী রক্ত বইছে। হিটলার তখন ঘোষনা করেন " আমি ইভা কে ভালোবাসি। কিন্তু কোন ইহুদী মেয়ে কে আমি ভালোবাসতে পারবোনা। সত্যি সত্যিই যদি ইভা আমাকে মিথ্যা বলে থাকে তাহলে তাকে চরম মূল্য দিতে হবে"। কিন্তু পরবর্তীতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এক তদন্ত কমিটি অনেক গবেষনার পর রিপোর্ট প্রদান করে যে ইভা ব্রাউন বিশুদ্ধ আর্য রক্তের অধিকারিণী। হিটলার ইভার প্রতি খুবই আসক্ত ছিলেন...জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ইভার প্রতি তার অসীম ভালোবাসা ছিলো...
হিটলার তার ব্যক্তিগত জীবন কে আড়ালে রাখলেও সেখানে তিনি এই চার নারীকে প্রবেশাধিকার দিয়েছিলেন।সারা বিশ্বের কাছে তিনি খলনায়ক হিসেবে পরিচিত হতে পারেন। কিন্তু তিনিও একজন প্রেমিক ছিলেন। তারও আবেগ ছিলো।
সমাপ্ত
তথ্যসূত্রঃ
1."Mein Kampf" by Adlof Hitler
2."The Rise and Fall of the Third Reich" by William L Shirer
3."I was Hitler's Maid" by Paulin Kohler
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:২৯