জানালার পাশের কাঠের টেবিল টাতে বসে বই পড়ছিলো বিন্দু।
হঠাত বাজ পড়ার আওয়াজ।প্রথমে চমকে উঠলেও পরক্ষনেই খুশি ।সে বাজ পড়ার শব্দ শুনলেই বুঝতে পারে বৃষ্টি আসবে কিনা....!! আর বৃষ্টি আসলেই সে নিজের জন্য কিছু আয়োজন করতে শুরু করে।একান্তই নিজের আয়োজন। চুলোয় চায়ের পানি গরম করতে দিয়ে সে তার আলোর বাক্স টা বের করে। একটা কাচের বয়োম এ মোম রেখে তার মুখ টা বন্ধ করে দেয়।ঢাকনায় ছিদ্র করা যাতে অক্সিজেন ঢুকতে পারে।এই তার আলোর বাক্স।
বিন্দুর একটা নিজস্ব থিওরী আছে।সে মনে করে আগুনের প্রান আছে যেহেতু সে অক্সিজেন ছাড়া বাচতে পারেনা।
ক্লাস এইটে পড়া একটা মেয়ে এই বয়সেই "কোথাও কেউ নেই" আর "শেষের কবিতা" পড়ে কয়েকবার কেদে ফেলেছে।
এসব বই পড়া তার নিষেধ কিন্তু ভার্সিটি পড়ুয়া বড় আপুর কাছ থেকে চুরি করে এনে পড়ে।কয়েকবার ধরা খেয়ে আপুর কাছে কানমলা ও খেতে হয়েছে।
চায়ের কাপ আর আলোর বাক্স নিয়ে বারান্দায় বসতে না বসতেই ঝুম বৃষ্টি।
"এই বিনু বারান্দা থেকে কাপড় গুলো এনেছিস???" বাসায় বিন্দু কে সবাই বিনু বলে ডাকে।
"হ্যা মা এনেছি"...বলেই বিন্দু বৃষ্টি শোনায় মনযোগী হয়।চুলে আচড়াতে আচড়াতে আপু এসে বারান্দার গ্লিল ধরে দাড়ালো।
আপু খুব ভালো রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারে।
"আপু একটা গান ধর না।তাহলে সেইরকম একটা ফিল আসবে"।
"পিচ্চি একটা মেয়ের আবার ফিল?? হাহ" বলে ধমক দিয়েই কিছুক্ষণ পর গাইতে শুরু করে শিখা।
বৃষ্টি হলে মানুষের জনজীবনে একটা গতি আসে।গরমে হাসফাস করতে থাকা মানুষ গুলো বৃষ্টির ছাটে জীবন খুজে পায়।এই সময় মাথায় হাত রেখে কলোনীর গলি দিয়ে দ্রত হেটে যাওয়া মানুষ...রিকশায় নীল পলিথিনের আড়ালে থাকা কলেজ ফেরত মেয়েটার উকি দিয়ে বৃষ্টির ছোয়া পাওয়ার চেষ্টা..অনবরত রিকশার ক্রিং ক্রিং আওয়াজ...রান্নাঘর থেকে আসা ফুটন্ত তেলে মাছ ভাজার আওয়াজ..বৃষ্টি ভেজা মাটির ঘ্রান..অফিস ফেরত বাবার হাতের কাগজের ঠোঙায় থাকা গরম গরম পিয়াজু..পাতায় বৃষ্টি পড়ার টুপ টুপ শব্দ সবকিছু মিলিয়ে এক অদ্ভুত জীবনের সৃষ্টি হয়।
এভাবেই বৃষ্টির সাথে শহরের অলিতে গলিতে চলতে থাকে বাস্তবিক কাব্য।সেই পুরনো কালের বৃষ্টিতে যেমন চলতো।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:১৭