বিয়ের দিন তোমার সাথে আমার দেখা। সত্যিই অপূর্ব লাগছিল সেদিন তোমাকে। বিয়ে মানেই হল একসাথে পথ চলা। এই পথ চলাটা অপার্থিব জীবন পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাইছিলাম আমরা দুজনে। অনেক হাসিকান্না দুজন দুজনের হয়ে ভাগাভাগি করে নেব এটাই ছিল আমাদের একমাত্র প্রত্যয়।
বিয়ের পর আমাদের হাতে সময় একেবারেই ছিল না। এদিকে তোমার ফাইনাল এগজাম এসে গেল। আর আমি প্রফেসরকে মেইল করতে বিজি। কোথাও যে তোমাকে নিয়ে যাব সে অবস্থাও ছিল না আমার। এত ব্যস্ততার পরও তোমার সাথে কথা বললেই মনটা ভাল হয়ে যেত। আমি যখনই বলতাম তোমাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছি না, তখন তুমি বলতে, পুরো জীবনটাই তো তুমি আমার সাথে থাকবে। নো প্রবলেম। নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নাও।
এক মাসের ভেতর আমি আমার পিএইচডি এর যাবতীয় কিছূ রেডি করে ফেললাম। আমি ইংল্যান্ড এর একটা ভার্সিটিতে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেলাম। এবার আমার যাওয়ার পালা। এদিকে তোমার ইন্টার্ণি, তোমাকে সাথে নেয়ার শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি তোমাকে সাথে নিতে পারছি না।আমি জানি, বিয়ের পর এভাবে আলাদা থাকা অনেক অনেক কষ্টের। তারপরও আমি তোমার থেকে আলাদা হলাম। সেদিন এয়ারপোর্ট এ বিদায় নিয়ে আসার সময় তোমার দুই চোখে যে কান্না দেখেছিলাম সেটা আজও আমার মনে পড়ে।
প্রবাসে দিন যায়, সময় আর কাটেনা। পাক্কা একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে তোমার জন্য। এই একটা বছর আমার কাছে মনে হচ্ছিল একটা যুগ। আমি আসার পর আমার বাসায় বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছিল তোমাকে নিয়ে । কিন্তু তুমি একটা বারের জন্যও আমাকে বুঝতে দাওনি। তুমি শুধুই বলতে আমি ভাল আছি কিনা? আমি ভাল থাকলেই তুমি ভাল থাকবে।
সেদিন এর কথাটা মনে আছে, আমি তখন আমার থিসিস রিপোর্ট লেখার কাজে বিজি ছিলাম। সে সময় আমি ঠিকভাবে তোমার সাথে যোগাযোগও করতে পারছিলাম না। এক সপ্তাহ তোমার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। তারপরও আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল আজকে তোমার একটা কিছু আছে। তাই আমি তোমাকে চমকে দিয়ে তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, আজকে নিশ্চয়ই কোন বিশেষ দিন। হ্যা,আসলেই সেই দিন বিশেষ দিন ছিল । সেদিনটি ছিল তোমার জন্মদিন। আমি এতই ব্যস্ত যে তোমার জন্মদিন মনে রাখার সময়টুকু করে উঠতে পারিনি। তারপরও কোন এক অদৃশ্য কিছূর সুবাদে আমি জানতে পারলাম। আমি আসলেই সেইদিন আশ্চর্য হয়েছিলাম।
অবশেষে তোমার ইন্টার্নি শেষ করে তুমি আমার কাছে চলে এলে। আমার সংসারে কিছুই ছিলনা। শুধু তুমি আমি আর আমাদের স্বপ্ন। প্রচন্ড স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতাম আমরা দুইজনই। নতুন দিনের স্বপ্ন, সোনালি দিনের স্বপ্ন। বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন।
বাংলাদেশ থেকে আনা তোমার লাগেজ দেখে আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়েছিলাম। তোমার বইগুলোর অধিকাংশই ছিল খাতা। আমি এক এক করে বের করে পড়তে লাগলাম। তোমার লেখাগুলো পড়ে আমি অবাক হচ্ছিলাম। তোমার লেখা এত সুন্দর! এত সুন্দর ভাবনা তোমার! আমি তোমাকে উৎসাহ দিতে লাগলাম তোমার লেখার ব্যাপারে। তুমি তখন বলেছিলে, আমার জন্যই শুধু তুমি এত কষ্ট করে খাতাগুলো বয়ে নিয়ে এসেছো। তুমি ক্লাস এইট থেকে লেখালেখি শুরু করেছ। এগুলো হল তোমার লেখার পান্ডুলিপি। আমি তোমাকে বললাম, তুমি লিখে যাও। আগামীবার যখন আমরা দেশে যাব, একুশে বই মেলায় তোমার একটা বই ছাপাবো। আমি তোমার লেখা বই সবাইকে দেখিয়ে বলব, দ্যাখো! আমার রুহ এর লেখা বই!
সব সুখেরই মনে হয় শেষ আছে, তেমনি তুমি একদিন হারিয়ে গেলে আমার কাছ থেকে। একটা কার এক্সিডেন্ট তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিল। তোমাকে আমি হারালাম। তাতে কি? তোমার স্মৃতিগুলো তো আমি হারাইনি। মনে আছে, তুমি বলতে, আমার যদি একে অপরের দোষগুলোকে ক্ষমা করতে না পারি তাহলে অন্যদের কিভাবে ক্ষমা করব? একটা চাদর যেভাবে আমাদের শরীরকে ডেকে রাখে সেভাবেই আমরা আমাদেরকে ঢেকে রাখবো।
রুহ, আমি জানি আমি তোমাকে কতটুকু ভালবাসি। সারাটি জীবন তোমার স্মৃতি নিয়েই আমি বেঁচে থাকতে চাই। আমি জানি তুমি কতটুকু পবিত্র ছিলে। আমি বলে দিতে পারি, তুমি জান্নাতে যাবে আর সেই জান্নাতে আমার সাথে তোমার দেখা হবে। সেই আশায় আমি দিন গুনছি, গুনেই যাচ্ছি প্রতিটি দিন...
(এইটা একটা গল্প। যা আমার আশেপাশের মানুষের জীবন থেকে নেয়া। আমিও স্বপ্ন দেখি এই রকম একটা মেয়ের যে শুধুই আমার স্ত্রী হবে না, হবে আমার চাদর.....)
' style='border: 1px solid #ccc;align:center;clear:both' />
রুহ, তোমাকে আমাকে এভাবে হারাতে হবে আমি জীবনেও ভাবিনি। তুমি আমার জীবনে এসেছিলে একটি প্রদীপ হয়ে। সেই প্রদীপটি যে এভাবে নিভে যাবে তা তো আমি ভাবিনি। তারপরও আমি নিশ্চিত যে তোমার সাথে আমার দেখা হবেই।
মনে আছে রুহ, আমার সাথে তোমার কোথায় দেখা হয়েছিল। হ্যা, সেই বেইলি রোড এর চাইনিজ এর দোকানটাতে। তোমাকে দেখে আমার প্রথমেই ভাল লেগে গিয়েছিল। তোমার সাবলীল কথাবার্তা, সুন্দর শব্দচয়ন সবকিছুই আমাকে আকর্ষণ করেছিল। আমি তখন সুইডেন থেকে মাস্টার্স শেষ করে বাংলাদেশে ফিরেছি, পিএইচডির জন্য বিভিন্ন জায়গায় এপ্লাই করে যাচ্ছি। হাতে বলতে গেলে সময় তেমন একটা ছিলনা। বাবা মায়ের একান্ত চাপেই আমি বিয়ে করতে তখন রাজি হয়েছিলাম।
সেসময় তুমি ছিলে ঢাকা মেডিক্যাল এর ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্ট। তোমার পরিবার থেকে বিয়ের ব্যাপারে বিশাল রকমের তোড়জোড় চলছে। তোমার বিয়ে দিতে পারলেই মনে হয় উনারা মুক্তি পান! এদিকে আমি সারাক্ষন ব্যস্ত থাকি রিসার্চ প্রপোজাল লেখা নিয়ে। এর মাঝখানেই তোমার সাথে আমার দেখার ব্যবস্থা করা হয়।
আমি সবসময় মনের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি, সেদিক থেকে তুমি ছিলে অনন্য। আমি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করার সুবাদে অনেক অনেক মেয়ের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছে। আমি জানি মেয়েরা কেমন হয়। কিন্তু আমি একথা জোর দিয়ে বলতে পারি, তাদের থেকে তুমি ছিলে সম্পুর্ণই ভিন্ন। যেমন ছিল তোমার রূপ তেমনি মনের সৌন্দর্য।
আমার ব্যস্ততার কারণেই মূলত তোমার সাথে আমার বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। এরই মধ্যে দুই পরিবার রাজি হয়ে বিয়ের ব্যবস্খা করে ফেলল। তখন হাতে সময় ছিল মাত্র সাতদিন। আমি তখন প্রচন্ড ব্যস্ত। এই ধরনের সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে আমিও বিষয়টা নিয়ে এতটা ভাবিনি। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর দিন থেকেই আমার মাথায় তোমার সাথে বসে আমার ভেতরের কথাগুলো শেয়ার করার ভুত চেপে গেল।
এদিকে এ কথাটা আমার বোনকে বলাতে সে খেপে গেল। 'তোমার এতদিন কথা বলার সময় হয়নি, এখন কথা বলার মানে বোঝ? তুমি কথা বলার কারণে বিয়েটা ভেঙে গেলে আব্বা আম্মা খুব দু:খ পাবেন'। আমি চিন্তা করলাম, ভেঙে গেলে আসলেই আব্বা আম্মা দু:খ পাবেন। কিন্তু এই বিয়ে হওয়ার পর যদি ঝামেলা হয় তখন সবাই আরো বেশি দু:খ পাবেন। সুতরাং, যা করার আমাকেই করতে হবে। তাই আমি চুপি চুপি তোমাকে ফোন দিলাম। সেই চাইনিজ এর দোকানটাতে তোমাকে আসতে বললাম। তুমিও হয়ত তখন ভড়কে গিয়েছিলে। কিন্তু হু কেয়ারস! আমি তোমার সাথে দেখা করে আমার জীবনের গল্পগুলো এক এক করে বলতে লাগলাম। সব গুলোই তুমি শুনলে। অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনলে। বললে, এগুলো কোন ব্যাপার না। সবার জীবনেই এই রকম কিছু ঘটনা আছে। আমার ওই কথাগুলো শোনার পর আমার প্রতি তোমার দুর্বলতা আরো বেড়ে গেল।
বিয়ের দিন তোমার সাথে আমার দেখা। সত্যিই অপূর্ব লাগছিল সেদিন তোমাকে। বিয়ে মানেই হল একসাথে পথ চলা। এই পথ চলাটা অপার্থিব জীবন পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাইছিলাম আমরা দুজনে। অনেক হাসিকান্না দুজন দুজনের হয়ে ভাগাভাগি করে নেব এটাই ছিল আমাদের একমাত্র প্রত্যয়।
বিয়ের পর আমাদের হাতে সময় একেবারেই ছিল না। এদিকে তোমার ফাইনাল এগজাম এসে গেল। আর আমি প্রফেসরকে মেইল করতে বিজি। কোথাও যে তোমাকে নিয়ে যাব সে অবস্থাও ছিল না আমার। এত ব্যস্ততার পরও তোমার সাথে কথা বললেই মনটা ভাল হয়ে যেত। আমি যখনই বলতাম তোমাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছি না, তখন তুমি বলতে, পুরো জীবনটাই তো তুমি আমার সাথে থাকবে। নো প্রবলেম। নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নাও।
এক মাসের ভেতর আমি আমার পিএইচডি এর যাবতীয় কিছূ রেডি করে ফেললাম। আমি ইংল্যান্ড এর একটা ভার্সিটিতে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেলাম। এবার আমার যাওয়ার পালা। এদিকে তোমার ইন্টার্ণি, তোমাকে সাথে নেয়ার শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি তোমাকে সাথে নিতে পারছি না।আমি জানি, বিয়ের পর এভাবে আলাদা থাকা অনেক অনেক কষ্টের। তারপরও আমি তোমার থেকে আলাদা হলাম। সেদিন এয়ারপোর্ট এ বিদায় নিয়ে আসার সময় তোমার দুই চোখে যে কান্না দেখেছিলাম সেটা আজও আমার মনে পড়ে।
প্রবাসে দিন যায়, সময় আর কাটেনা। পাক্কা একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে তোমার জন্য। এই একটা বছর আমার কাছে মনে হচ্ছিল একটা যুগ। আমি আসার পর আমার বাসায় বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছিল তোমাকে নিয়ে । কিন্তু তুমি একটা বারের জন্যও আমাকে বুঝতে দাওনি। তুমি শুধুই বলতে আমি ভাল আছি কিনা? আমি ভাল থাকলেই তুমি ভাল থাকবে।
সেদিন এর কথাটা মনে আছে, আমি তখন আমার থিসিস রিপোর্ট লেখার কাজে বিজি ছিলাম। সে সময় আমি ঠিকভাবে তোমার সাথে যোগাযোগও করতে পারছিলাম না। এক সপ্তাহ তোমার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। তারপরও আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল আজকে তোমার একটা কিছু আছে। তাই আমি তোমাকে চমকে দিয়ে তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, আজকে নিশ্চয়ই কোন বিশেষ দিন। হ্যা,আসলেই সেই দিন বিশেষ দিন ছিল । সেদিনটি ছিল তোমার জন্মদিন। আমি এতই ব্যস্ত যে তোমার জন্মদিন মনে রাখার সময়টুকু করে উঠতে পারিনি। তারপরও কোন এক অদৃশ্য কিছূর সুবাদে আমি জানতে পারলাম। আমি আসলেই সেইদিন আশ্চর্য হয়েছিলাম।
অবশেষে তোমার ইন্টার্নি শেষ করে তুমি আমার কাছে চলে এলে। আমার সংসারে কিছুই ছিলনা। শুধু তুমি আমি আর আমাদের স্বপ্ন। প্রচন্ড স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতাম আমরা দুইজনই। নতুন দিনের স্বপ্ন, সোনালি দিনের স্বপ্ন। বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন।
বাংলাদেশ থেকে আনা তোমার লাগেজ দেখে আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়েছিলাম। তোমার বইগুলোর অধিকাংশই ছিল খাতা। আমি এক এক করে বের করে পড়তে লাগলাম। তোমার লেখাগুলো পড়ে আমি অবাক হচ্ছিলাম। তোমার লেখা এত সুন্দর! এত সুন্দর ভাবনা তোমার! আমি তোমাকে উৎসাহ দিতে লাগলাম তোমার লেখার ব্যাপারে। তুমি তখন বলেছিলে, আমার জন্যই শুধু তুমি এত কষ্ট করে খাতাগুলো বয়ে নিয়ে এসেছো। তুমি ক্লাস এইট থেকে লেখালেখি শুরু করেছ। এগুলো হল তোমার লেখার পান্ডুলিপি। আমি তোমাকে বললাম, তুমি লিখে যাও। আগামীবার যখন আমরা দেশে যাব, একুশে বই মেলায় তোমার একটা বই ছাপাবো। আমি তোমার লেখা বই সবাইকে দেখিয়ে বলব, দ্যাখো! আমার রুহ এর লেখা বই!
সব সুখেরই মনে হয় শেষ আছে, তেমনি তুমি একদিন হারিয়ে গেলে আমার কাছ থেকে। একটা কার এক্সিডেন্ট তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিল। তোমাকে আমি হারালাম। তাতে কি? তোমার স্মৃতিগুলো তো আমি হারাইনি। মনে আছে, তুমি বলতে, আমার যদি একে অপরের দোষগুলোকে ক্ষমা করতে না পারি তাহলে অন্যদের কিভাবে ক্ষমা করব? একটা চাদর যেভাবে আমাদের শরীরকে ডেকে রাখে সেভাবেই আমরা আমাদেরকে ঢেকে রাখবো।
রুহ, আমি জানি আমি তোমাকে কতটুকু ভালবাসি। সারাটি জীবন তোমার স্মৃতি নিয়েই আমি বেঁচে থাকতে চাই। আমি জানি তুমি কতটুকু পবিত্র ছিলে। আমি বলে দিতে পারি, তুমি জান্নাতে যাবে আর সেই জান্নাতে আমার সাথে তোমার দেখা হবে। সেই আশায় আমি দিন গুনছি, গুনেই যাচ্ছি প্রতিটি দিন...
(এইটা একটা গল্প। যা আমার আশেপাশের মানুষের জীবন থেকে নেয়া। আমিও স্বপ্ন দেখি এই রকম একটা মেয়ের যে শুধুই আমার স্ত্রী হবে না, হবে আমার চাদর.....)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:৫৯