
একটু ভাবুন তো, একটি পরিবার মুসলিম একটি দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জার্মানীর মত উন্নত দেশে যায়। যেই দেশ মানুষের সমঅধিকার এর কথা বলে, মুক্তচিন্তার কথা বলে সেই দেশে মুসলিম পরিবারটি যায় । তিন জনের পরিবারের এক বছরের শিশু পুত্রকে নিয়ে জার্মানীর মত “ন্যাচারালিস্ট, গে-কাপড়ছাড়া ও কাপড়ওয়ালার” দেশে যায় সেই পরিবারটি। সেই পরিবারটি নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। মুসলিম মহিলাটি নিজেকে হিজাবে আবৃত রাখেন। হিজাবকে তিনি ধারণ করেন অন্তরের অন্তঃস্থলে। শিশুপুত্রকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন।স্বপ্ন দেখেন তার বাচ্চাটি অনেক বড় হবে।সে নতুন করে গড়বে তার দেশকে, তার পৃথিবীকে। নোংরা মানুষগুলো থেকে আলাদা করে ভাবতে শিখবে তার কোলের শিশুটি।
সেইদিনকার ঘটনা, বাড়ীর বারান্দায় তিনি বাচ্চাটাকে নিয়ে দোলনায় খেলা করছিলেন । সেই দোলনাতে চড়ার জন্য এলেক্স নামের ভদ্রলোকটি(!) আসেন আরেকটি বাচ্চাকে নিয়ে। এই নিয়ে ঝগড়া হয় সেই
হিজাবী মহিলার সাথে এলেক্স এর। রাগের বসে এলেক্স তাকে অকথ্য বাসায় গালাগালি করে। এক পর্যায়ে মহিলাকে ‘টেররিস্ট’ বলে গালি দেয়। মহিলাটি হিজাবী হওয়ার কারণে তাকে শুনতে হয় ‘টেররিস্ট’ শব্দটি। যে ‘টেররিস্ট’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় লাদেন, মোল্লা ওমর, হরকত উল জিহাদ এর বিরুদ্ধে । শুধু মাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে, হিজাব পড়ার কারণে মহিলাটিকে শুনতে হয় এই ধরনের গালি। মনের কষ্টে তিনি সমঅধিকার এর দেশে মামলা করেন এলেক্স এর বিরুদ্ধে। কোন দিন, কোথায় তিনি জঙ্গী বা টেররিস্ট এর কাজ করেছেন সেটার প্রমাণ দিতে হবে অথবা আদালতের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এলেক্সকে। বিচারের দিন তিনি তার স্বামী ও তিন বছরের
শিশুপুত্রকে নিয়ে আদালতে যান। নিশ্চয়ই তিনি আশা করছিলেন, আদালত তার পক্ষেই ফয়সালা করবেন। কিন্তু সেই আদালতে এলেক্সই তাকে আক্রমন করে বসে। ছুরি হাতে আদালতের বিচারক এর সামনে আক্রমন
করে তাকে। তার শিশুপুত্রর সামনে তাকে ছুরি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে। তার স্বামী যখন তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন, নিরাপত্তা কর্মীরা (ভুলবশত!!!) গুলি করেন তার স্বামীকে। আর এলেক্স ১৮টি স্টেপ করে হত্যা করে শিবরীনিকে(সেই মহিলাকে)।
হিটলারের দেশ, নাৎসীদের দেশ যতই নিজেকে যতই উন্নত দেশ হিসাবে উপস্থাপন করুক না কেন তারা আসলে আগের অবস্থানেই রয়েছে। তাদের কারণে আজকে হিজাব পড়ার অপরাধে প্রকাশ্য আদালতে খুন হলেন আমাদের বোন মারওয়া শিবরীনি । তার স্বামী তাকে রক্ষা করতে গিয়ে হলেন প্রহরীর গুলিতে গুলীবিদ্ধ। যেখানে অপরাধীকে গুলি করার কথা, সেখানে গুলি করা হল নিরপরাধ মানুষটিকে। এই হত্যাকে জায়েয করার জন্য কত রকমের বাহানাই না করছে পাশ্চাত্য। এলেক্সকে মানসিক ভারসাম্যহীন হিসাবে উপস্থাপন করছে। যুক্তির খাতিরে আমি ধরেই নিলাম এলেক্স একজন সাইকো । কিন্তু যেই আদালতে বসে এই ধরনের ঘটনা ঘটল সেই আদালতে উপস্থিত বিচারপতি ও আইনজ্ঞদের আমি কি বলব? তারাও কি সাইকো? যে দেশ এই ঘটনাটাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন, সেই দেশের মানুষগুলোও সাইকো? আমি বুঝি না, বুঝতে চাইও না, আমি শুধু এতটুকু বুঝি, আমি যদি আজ কথা না বলি, আগামীদিনে আমার হিজাব পরিহিত মা-বোন,স্ত্রী-কন্যা আক্রান্ত হবে এই সব সাইকোদের
দ্বারা। তারা যখনই রাস্তায় বের হবে তখনই শুনবে ‘টেররিস্ট’। যে টেররিস্ট বলা হয় আল কায়েদাকে,শুধু মাত্র মুসলিম পরিচয়ের একটি পোশাক পড়ার অপরাধে শুনতে হবে সেই একই গালি।
পশ্চিমারা যখন ন্যাচারালিস্ট অথবা গে-লেসবিয়ান এর কথা বলে, যখন অবাধ যৌনতার কথা বলে, তখন কই আমরা স্বাভাবিক মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রোপাগান্ডা করিনা। আমরা তাদের নিবৃত করিনা, তাদের উপর হামলাও করি না। আমরা তাদের মুক্তচেতনার কথাগুলোকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তারাই আমাদের উপর হামলা করে শুধু মুসলমান হওয়ার অপরাধে, শুধু হিজাব পরার অপরাধে আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের শুনতে হয় একই গালি ‘টেররিস্ট’ । আমি কি বলব, নিজে বুঝে পাইনা, শুধুই চেয়ে থাকি আকাশের দিকে , আর ভাবতে থাকি,“ হে আল্লাহ ! এই যদি হয় এদের মানবাধিকার ,এদের মুক্তচিন্তা, তুমি ধ্বংস কর এই মানবাধিকার ও মুক্তিচিন্তার ধ্বজ্জাধারীদের। আমাদের তুমি নতুন করে ভাবতে শিখাও।”