পরিচয়
একটি ছেলে নাম ঈশ্বর একটি মেয়ে কে ভালোবাসে। হতাশ হচ্ছেন তাই না ? পুরানো কাহিনী কিন্তু আমি এটাই জানি। কি আর করা. চলুন কাহিনী শুরু করা যাক.....
মেয়েটির নাম আলো । সে আমার জীবনে এসেছিলো আলো হয়ে, ইশ্বরের আলো হয়ে।
ছেলেটি মেয়েটি কে তাদের এলাকায় সবসময় দেখত। কিন্তু কখনই তার সাথে কথা বলার সাহস করে উঠতে পারেনি। যদি পাত্তা না দেয়? যদি রেগে যায়?
একদিন মেয়েটি বেড়াতে আলো ছেলেটির বাসায় তার মা সহ । ছেলেটি খালি বার বার মেয়েটি কে আড় চোখে দেখছে। তাদের মা রা যখন কথা বলায় ব্যস্ত , এই সুযোগে তারা পরিচিত হলো ।
--আপনার নাম ?
--ঈশ্বর।
--আপনার ?
--আলো।
--কি করেন? বলছে মেয়েটি
--আমি এস এস সি দিবো।
--আপনি?
--আমি অষ্টম শ্রেণীতে।
ঠিক এইভাবে শুরু।
শুরু হলো তাদের দেখা হওয়া ,ভাব বিনিময় চলতে লাগলো এবং একটি বন্ধুত্ব গড়ে উঠে । কিন্তু কেও কোনদিন তাদের ভালোবাসার কথা বলেনি । তারা শুধু মনে মনেই ভালোবাসতো. বলতে সাহস করতো না, প্রতাখ্যান হবার ভয়ে ।
একদিন ছেলেটি দূর দেশে চলে গেলো উচ্চ শিক্ষার জন্যে। যাবার আগে মেয়েটির সাথে দেখা করলো। তারা পরস্পর কিছু সময় কাটালো এবং ছেলেটি মেয়েটিকে এক বাক্স চকলেট উপহার দেয়। আর মেয়েটি দে একটি কলম।
ছেলেটি যখন বিদেশে প্রথম দিকে মেয়েটির সাথে কিছু যোগাযোগ হত। তারপর সে মেয়েটিকে ধীরে ধীরে ভুলে গেলো । নতুন দেশ , নতুন বন্ধু , আর পড়াশুনা তো আছেই। দীর্ঘ ৫ বছর পর ছেলেটি ফিরে এসেছিলো।
এসেই তার পুরনো দিনের কথা মনে পারে গেলো. কোথায় সেই মেয়েটি ? কেমন আছে সে? তাকে কি মনে আছে?
আসুন এইবার কাহিনী ঈশ্বর এর মুখ থেকে শোনা যাক।
ভালোবাসা
বাড়ি ফিরার পরদিন ঘুম থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখলাম , একটি অপরিচিত মেয়ে মার পাশে বসে আছে। চেনা চেনা লাগছে কিন্তু ঠিক চিনছি না। মেয়ে টা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে এবং বললো কেমন আছেন মিস্টার? একি! এতো আলো . আমি বললাম
--আলো তুমি?
--জী আমি।
--কেমন আছেন?
--তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। বড় হয়ে গেছ।
অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। পরিপূর্ণ এক নারী । আমার তার দিকে তাকিয়ে থাকতে লজ্জা লাগছিলো.। কেনো জানি সেদিন মনে হয়েছিলো একে না পেলেই নয়। এইভাবে শুরু হলো আমাদের ভালোবাসার আর এক পর্ব। কি ভাবে তাকে আমার ভালোবাসার কথা বলেছিলাম , কিভাবে সে রাজি হয়েছিলো সেটা ইতিহাস। শুধু জানি আমরা একটি সুন্দর গতিময় জীবনের মধ্যে ছিলাম। এতো ভালোবাসা, এতো সুন্দর জীবন যে পরম করুণাময় দিতে পারে আমার সেটা বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তখন শুধু মনে হতো জীবন টা অনেক সুন্দর। আলো যতক্ষণ আমার পাশে থকত শুধু মনে হতো ইসস সারা জীবন যেনো সে আমার আলো হয়ে থাকে। শুধু রবীন্দ্রনাথের হৈমনিতর মতো মনে হতো ,”আমি ইহাকে পাইলাম”। কিন্তু পরম করুণাময় আমদের এই সুন্দর জীবনে আঘাত হেনেছিলো।
বিচ্ছেদ
বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর আমি একটি চাকরি তে যোগদান করি. বাবা মা আমার বিয়ের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পরে। অনেকে ভাবতে পারেন সমস্যা কি, আলো কে বিয়ে করলেই তো হয়। না হয় না। আলো আর আমার ধর্ম এক ছিলো না। তাদের পরিবার ছিলো ইসলাম ধর্মালম্বী , আর আমরা ছিলাম অন্য ধর্মের। আমার মা প্রায় আফসোস করে বলতো ,”ইসস মেয়েটা যদি আমাদের ধর্মের হত”। আলো প্রথমে তার পরিবার কে রাজি করাতে চেয়েছিলো, কিন্তু পারেনি। সে আমাকে বলেছিলো পালিয়ে যাই। কিন্তু বাবা মার এক মাত্র সন্তান হবার জন্যে তাও করতে পরি নি। তাছাড়া আলোর পরিবার , এবং আশ পাশ থেকে আমাদের পরিবার কে হুমকি দেয়া হচ্ছিলো। এরপর খুব দ্রুত আলোর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের আগে আলো শেষ বারের মতো আমার সাথে দেখা করে। অনেক কেঁদেছিল সে। পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো আমার সাথে । আমি পারিনি, সাহস করে উঠতে পারিনি।
পুনশ্চ :
অনেক বছর পার হয়ে গেছে। সেইসব দিন গুলি আজ শুধু ইতিহাস। আমি আর বেশিদিন বাচবো না। কিডনি জনিত জটিল রোগে আক্রান্ত আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে সেইসব দিনের কথা চিন্তা করি। আজ শুধু মনে হয় কি হতো যদি একটু সাহস দেখাতাম। ইসস একবার যদি সেই সময়ে ফিরে যেতে পারতাম। শুধু একবার তবে ঠিক আলো কে নিয়ে পালিয়ে যেতাম। জীবনের আলো আর বেশিদিন নেই আমার জন্যে। ছোটট এই জীবনে অপূর্ণতা রয়ে গেলো। হায় ঈশ্বর আমাকে আরেকবার সুযোগ দাও !
হও
হা আমি এটা হাতে দেবো। আমি ঈশ্বর অন্তত আমার লেখায়। আমি সবার ধর্ম এক করে দেবো। ইশ্বরের কোনো কিডনি রোগ হবে না। সে তার আলো কে নিয়ে পুরা জীবন কাটাবে। আমি আমার রচনায় যা খুশি করতে পরি। আমি এখানে সর্বশক্তিমান। আমি শুধু বলবো , “হও”।