'মামী ও মামী' শব্দটা কানে আওয়াজ শুনতে শুনতে আমার গাঢ় ঘুম ভেঙ্গে গেল। আজ কেন যে মিনুকে স্বপ্নে দেখলাম? তাও দেখলাম করুণ আর্তনাদ......! ধুর যা! আজ সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেল। মিনুকে দেখলাম ভালো কথা অনেক দিন ওকে দেখিনি। মিনু হল আমাদের কাজের মেয়ে। তার যখন তিন কি চার বছর বয়স ছিল তখন তার মা আমাদের বাসায় এনে দিয়েছিলো পেটের দায়ে। মিনুর মাকে বলেছিলাম মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য; বলল ''আফাগো গরীব মাইনষের আবার স্কুল, লেহাপরা ওইসব দিয়া কি করুম? বাফে থাইকাও নাই কহন ফালাইয়া গেছে চাইরটা পুলাফান রাইখা। আমিতো ছুডু ছুডু পুলাফাইনরে রাইখা কোন কাজ করতে হারিনা।''
তার মায়ের সাথে সে হারিয়ে গেছে এই কয়েক মাস না হয় বছরখানেক হবে। কোথায় যে চলে গেল আজও তার সন্ধান পাওয়া গেলোনা। হয়তোবা মেয়েকে নিয়ে অন্য কোন কাজে দিয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে আজ আমি মেয়েটিকে মিস করছি। মিস করছি তো ভাল কথা তাই বলে এই আর্তনাদ! কেন দেখলাম? তাইলে কি ভেবে নিবো সে কোন বিপদে পড়েছে। না না এমন হতে পারেনা। ধুর যা, কি যা তা ভাবছি। সে হয়তো ভালই আছে। স্বপ্ন তো স্বপ্নই তাইনা।
সত্যিই তো তার পৃথিবী এমন হল কেন? আজ তার স্কুলে যাবার কথা ছিল? বন্ধুদের সাথে খেলা-ধুলা করার সময়। একুশ মানে কি জানার বয়স। এই বয়সে একুশের চেতনা তার বুকে জন্ম নেওয়ার কথা ছিল। যে ভাষায় সে কথা বলে বাংলা ভাষা! কি করে জন্ম হল? যুগ যুগ ধরে যে ভাষায়- আমরা কথা বলি। বাংলার গান গাই। আমাদের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা- বাংলা। আর আজ আমাদের ভাষার সাহিত্য পৃথিবীর প্রথম সারিতে ঠাই করে নিয়েছে। মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন কত বাংলা মায়ের দামাল সন্তানেরা। তাইতো আমরা স্বাধীনভাবে মাতৃভাষায় প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছি। এই সব কথা মিনুর চিরদিনের জন্য অচেনাই রয়ে গেল। আদৌ জানা হলোনা তার।
গরীব মানুষের যে দু'মুঠো ভাতের জন্য কতই না সংগ্রাম করতে হয়। নিজের বাচ্চাকে বুক থেকে ছিন্ন করে অন্যের বাসায় কাজ করায়। মায়ের উষ্ণ হাতের ছোঁয়া জোটেনা তাদের বেলায়। আমিওতো একজন মা! আমার বাচ্চা আর তার বাচ্চার মধ্যে কোন তফাৎ দেখিনা। তারপরেও কেন স্বপ্নের কাছে অসহায় আমি?
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এখনও মিনুর সন্ধান পাইনি। একটি আলোকিত জীবনের পথ খুঁজে পেয়ে মাথা রাখার ঠাঁই যেন হয় মিনুর। যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক একটু বাঁচার অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৫:৫৩