বিবর্তন একটি মন্থর অথচ গতিশীল প্রক্রিয়া। বহু বহু বছর ধরে পৃথিবীর প্রথম সরল এককোষী জীব বিবর্তিত হতে হতে বর্তমানে মানুষসহ অন্যান্য উন্নত জীবের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণীদের মস্তিষ্কের গঠন ও পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে বিবর্তন কিন্তু তার ব্যবহার করে চিন্তাশীল হওয়াটা আমাদের শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত। বিবর্তনের ফলে মানুষ দুপায়ে ভর দিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটার অধিকারী হয়েছে। দুহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ব্যবহারের মাধ্যমে হাতকে দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ ব্যবহার করতে শিখেছে। বিবর্তনবাদী তত্ত্ব দাবি করে যে, আদিম পৃথিবীর বুকে ৩৮০ কোটি বছর আগে একটিমাত্র জীবিত কোষের উদ্ভব হয় এবং সেটি থেকেই সকল প্রাণধারী প্রজাতির অভ্যুদয় ঘটে। একটি মাত্র কোষ কি করে লক্ষ লক্ষ জটিল জীবন্ত প্রজাতির জন্ম দিতে পারে এবং সত্যি যদি এরকম কোন বিবর্তন ঘটে থাকে তাহলে জীবাশ্মের ইতিহাসে এর কোন চিহ্নমাত্র কেন পাওয়া যাচ্ছে না এ রকম বহু প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগ এ তত্ত্ব। বিবর্তনবাদের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রাণীকুল আর্বিভাবের প্রক্রিয়াসমূহ জানা গেলেও অনুমিত বিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ সম্পর্কে, প্রথম ও প্রধান প্রশ্ন হচ্ছেঃ এই "প্রথম কোষ"-এর উৎপত্তি কিভাবে হল? বিবর্তনবাদের কাছে প্রথম কোষ কিভাবে এলো বা প্রাণ পৃথিবীতে কি ভাবে এসেছে সেই সর্ম্পকে তেমন কোন তথ্য নেই কোন ব্যাক্ষাও নেই । তবে ডারউইনের পুকুর ত্ত্ত্ব বলে একটি বিষয় বিবর্তনবাদে ঘুরে ফিরে আসে। উঞ্চু পুকুরে প্রাণ তত্ত্ব। তত্ত্বটি বলে একটি উষ্ণ ছোট পুকুর হল প্রাথমিক পৃথিবীতে একটি কাল্পনিক স্থলজ অগভীর জলের পরিবেশ যার অধীনে জীবনের উৎপত্তি হতে পারে। চার্লস ডারউইন তার বন্ধু জোসেফ ডাল্টন হুকারকে 1871 সালের একটি চিঠিতে এই সংক্রান্ত বিষয়ে ধারণা দেন। ধীরে ধীরে অনেক বিবর্তনবাদী বিজ্ঝানীরা উঞ্চ পুকুর তত্ত্ব নিয়ে গবেষনা শুরু করেন। তারা ধারনা করেন উঞ্ষ পুকুরে অন্যরকম এক আবহাওয়ার কারনে বিভিন্ন উপাদান এক হয়ে প্রথম কোষ সৃষ্টি হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী ওপারিনের বিবর্তনবাদী অনুসারীরা প্রাণের উৎপত্তি সংক্রান্ত সমস্যাটি সমাধানের জন্য অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। সর্বাপেক্ষা সুবিদিত পরীক্ষাটি চালিয়েছিলেন মার্কিন রসায়নবিদ স্ট্যানলী মিলার, ১৯৫৩ সালে। আদিম পৃথিবীর আবহাওয়ামন্ডলে যেসব গ্যাস বিরাজমান ছিল বলে তিনি দাবী করেন, একটি পরীক্ষায় সেসব গ্যাস সম্মিলিত করে তিনি সেই মিশ্রণের সঙ্গে শক্তি (এনার্জি) যুক্ত করেন, তারপর তার সঙ্গে সংশ্লেষিত করেন বিভিন্ন প্রোটিনের সংযুক্তিতে বিদ্যমান কতিপয় জৈব অণু (এ্যামাইনো এসিডস্)। মাত্র কয়েক বছর পার হতে না হতেই স্পষ্ট বোঝা যায় বিবর্তনবাদ প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উপস্থাপিত এই পরীক্ষা অসিদ্ধ। কারণ এতে ব্যবহৃত আবহাওয়ামন্ডল ছিল পৃথিবীর বাস্তব পার্থিব পরিপার্শ্ব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। দীর্ঘ নীরবতার পর মিলার স্বীকার করেন যে, তিনি যে আবহাওয়া মাধ্যম ব্যবহার করেন তা ছিল অবাস্তব। বিষয়টি অন্যরকম ছিলো।
পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে জার্মান রসায়নবিদ গুন্টার ভাস্টারশাওজার ধারণা করেন, প্রথম অণুজীব ছিল বিস্ময়করভাবে নতুন কোনো অণুজীব যেটা আমাদের জানা শোনার বাইরে। তিনি বলেন, প্রথম অণুজীব কোনো কোষ দিয়ে গঠিত ছিল না। তাদের এনজাইম, ডিএনএ বা আরএনএ বলে কিছু ছিল না। গুন্টার ভাস্টারশাওজার এর ধারণা, আদি পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল গরম লাভা মিশ্রিত পানির স্রোত। লাভা মিশ্রিত সেই পানিতে ছিল অ্যামোনিয়া গ্যাস ও খনিজ উপাদান। যখন লাভা মিশ্রিত খনিজ পানি পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হলো তখন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে শুরু করলো। বিশেষত, লাভা মিশ্রিত পানির মধ্যে দ্রবীভূত খনিজ ও ধাতব উপাদান প্রথম দিকের জৈবকণা গঠনে সাহায্য করেছিল যারা বিভাজন প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর জৈবকণায় পরিণত হয়। বিপাক ক্রিয়ার চক্রের সৃষ্টি হওয়া ছিল প্রাণ বিকাশের প্রথম বড় ঘটনা। এই প্রক্রিয়ায় একটি রাসায়নিক উপাদান কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক উপাদানে পরিণত হয়। মূল রাসায়নিক উপাদানটিও পুনরায় সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। এই প্রক্রিয়া চলাকালে শক্তি উৎপন্ন হয়ে পুরো সিস্টেমে সঞ্চারিত হয়। আর সেই শক্তি থেকেই আরএনএ, ডিএনএ, এবং অন্যান্য উপাদান সহ একটি প্রাণকোষ সৃষ্টি হয়। ১৯৮০-১৯৯০ সাল অবধি গুন্টার ভাস্টারশাওজার এর ধারনা গুলো তত্ত্ব রুপে থেকে গেলো। ১৯৮১ সালে বিজ্ঞানী করলিস তত্ত্ব দিলেন ৪০০ কোটি বছর আগের পৃথিবীতেও একই ধরণের গরম তরল জ্বালামুখের অস্তিত্ব ছিল এবং ঠিক সেখানেই প্রাণের সূচনা ঘটেছিল। কিন্তু স্ট্যানলি মিলার এতে আপত্তি তুললেন। ১৯৮৮ সালে তিনি লিখলেন, জ্বালামুখ যে পরিমাণ গরম থাকে তাতে সেখানে অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি হলেও তা আবার ধ্বংসও হয়ে যাওয়ার কথা। প্রচণ্ড তাপে অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রধান উপাদান চিনি জাতীয় শর্করা বড়জোর কয়েক সেকেন্ড টিকে থাকতে পারবে। ১৯৮০ সালে গ্লাসগোতে স্কটিশ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সেন্টারের প্রফেসর মাইকেল রাসেল কাছে মনে হলো, আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পরিবেশই ভাস্টারশাওজারের জৈবকণা উৎপন্ন হওয়ার সূতিকাগার। তিনি অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পাশ থেকে জীবাশ্ম পেয়ে গেলেন এবং তিনি বললেন অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের আশে পাশে প্রাণের উদ্ভব সম্ভব।রাসেল বললেন প্রাণের বিকাশ ঘটেছে সমুদ্রের তলদেশেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সমুদ্রের গভীরে গরম তরল জ্বালামুখের চারপাশের সহনীয় গরম পানিতে নরম জেলিসদৃশ বস্তু পাইরাইটের কাঠামো গঠনের জন্য উপযুক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভাস্টারশাওজারের প্রস্তাবিত জৈবকণা সৃষ্টির জন্য পাইরাইট বুদবুদ পূর্বশর্ত। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পানি থেকে রাসায়নিক শক্তি সংগ্রহ করে প্রাণ যখন সবে যাত্রা শুরু করে, তখনই আরএনএ অণুজীবের সৃষ্টি প্রক্রিয়াও শুরু হয়। এমনকি তখনই ঝিল্লির মতো পাতলা আবরণ সৃষ্টি করে একটা সত্যিকারের জীবকোষ বা প্রাণ হয়ে ওঠে। কোষের জন্ম সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষ পাথরের ছিদ্র ছেড়ে পানিতে যাত্রা শুরু করে। এই অনুপ্রেরণা থেকেই রাসেল প্রাণের উৎপত্তির রহস্য সমাধানে গবেষণার সর্বজন স্বীকৃত একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে ফেললেন। বিভিন্ন প্রমান ও গবেষনা রাসেলের তত্ত্বকেই সঠিক বলে মেনে নিতে বাধ্য হলেন। এই তত্ত্ব এখন পর্যন্ত প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কিত নেতৃস্থানীয় তত্ত্বগুলোর একটি হিসেবে গণ্য হয়। রাসেলের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত পাওয়ায় ডারউইনের পুকুরতত্ত্ব আর কার্যকরী থাকলো না। কোষ সৃষ্টি সংক্রান্ত ব্যাপারে বিবর্তনবাদ বা চালস ডারউইন সঠিক তথ্য দিতে পারে নাই। যা দিয়েছে তারা সাধারন জীববিজ্ঞানী। বিবর্তনবাদীরা অনেক বড় বড় কথা বললেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের স্বকীয়তা র্ব্যথতায় পর্যবসিত হয়। যেমন চালস্ ডারউইনের পুকুর তত্ত্ব অনুমান লব্ধ তত্ত্ব যার সাথে বাস্তবতা বা যুক্তির গ্রহনযোগ্য কোন সামঞ্জস্যপূণতা নেই। কোষ উৎপাদনের আধুনিক যে তত্ত্বটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটি হলো সমুদ্রের গভীরে ইউকিউবেটরে প্রাণ উৎপত্তি বিষয়ক রাসেলের তত্ব। ভাসেলডরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর উইলিয়াম মার্টিন এবং গ্লাসগোতে স্কটিশ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সেন্টারের প্রফেসর মাইকেল রাসেল প্রথম কোষ সৃষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন “প্রাণ সৃষ্টির আগে কোষের জন্ম হয়। প্রথমে কোষ জীবন্ত ছিল না। এটি মৃত ছিল এবং এর সৃষ্টি হয় আয়রন সালফাইড হতে।” বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, জীবনের সৃষ্টি হয়েছিল সমূদ্রের তলদেশে অন্ধকারে জলমগ্ন ক্ষুদ্র পাথুরে পরিবেশে অর্থাৎ আয়রন সালফাইড পাথরের তৈরি অতি ক্ষুদ্র প্রোকষ্ঠ ইনঅরগ্যানিক ইনকিউবেটরে। তাদের বর্ণনা অনুসারে সতন্ত্র ও সংরক্ষিত কোন স্থানে বা আধারে প্রথমে জীব কোষের গঠন সম্পন্ন হয়। প্রথমে কোষ মৃত ছিল। পরবর্তীতে তা প্রাণের মলিকিউলে পূর্ণ হয় অর্থাৎ কোষে প্রাণ সঞ্চার ঘটে।”
আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ঘাটিত তত্ত্বটি বিবর্তনবাদীদের নয় বরং সাধারন জীববির্জ্ঞানীদের। এবং সাধারন এই জীববিজ্ঞানীগন সকলের গ্রহনযোগ্য মতবাদটি আল কোরআন গ্রহন করেছে। আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন এটি আবার আল কোরআনের গ্রহনের কি বিষয় আছে? আসুন আমরা এই তত্ত্বটি তুলে ধরে আল কোরআনের সাথে একটু মিলিয়ে নিই। আল কোরআনের কিছু আয়াত নিয়ে আমরা আলোচনা করি। আল কোরআন বলছে-‘মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।’ (সুরা : তারিক, আয়াত : ৬)আল কোরআনের অসংখ্য আয়াতে পানি থেকে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে।যেমন সূরা আম্বিয়ার তিরিশ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,"প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।" আল কোরআন পানি থেকে প্রাণ সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ করেছে। আরেকটি আয়াত লক্ষ্য করুন (সূরা মুরসালাত-আয়াত ২০-২৩)পানি থেকে প্রাণ সৃষ্টির কথা বললেও এই আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হচ্ছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। তাহলে এই স্ববেগে স্খলিত পানি কি? রাসেলের তত্বের মূল ধারনাকারী গুন্টার ভাস্টারশাওজার ধারনা করেছিলেন-আদি পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল গরম লাভা মিশ্রিত পানির স্রোত। লাভা মিশ্রিত সেই পানিতে ছিল অ্যামোনিয়া গ্যাস ও খনিজ উপাদান। যখন লাভা মিশ্রিত খনিজ পানি পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হলো তখন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে শুরু করলো। বিশেষত, লাভা মিশ্রিত পানির মধ্যে দ্রবীভূত খনিজ ও ধাতব উপাদান প্রথম দিকের জৈবকণা গঠনে সাহায্য করেছিল। আল কোরআন এই তত্ত্বের স্বপক্ষে সমর্থন দেখালো। এবার আসি আরেকটি স্থানে-আল কোরআন বলে “আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ তরল থেকে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি তা রেখেছি সংরক্ষিত আধারে। এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। অতঃপর আমি পরিমিত আকারে সৃষ্টি করেছি, আমি কত নিপুণ স্রষ্টা।” লক্ষ্য করুন পানি থেকে সৃষ্টি এটি প্রকাশ্য। সেই পানি তুচ্ছ তরল পর্দাথ বা কোন উপাদান সমৃদ্ধ তরলে পরিনত হয় এবং যেটিকে সংরক্ষিত আধারে রাখা হয়। তাদের বর্ণনা অনুসারে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল গরম লাভা মিশ্রিত পানির স্রোত। সেই পানিতে দ্রবীভূত খনিজ ও ধাতব উপাদানসমৃদ্ধ ছিলো। সেই উপাদান সমৃদ্ধ তরল পানি স্বতন্ত্র ও সংরক্ষিত কোন স্থানে দ্রবীভূত আকারে ছিলো দীর্ঘসময়। ধীরে ধীরে খনিজ ও ধাতব উপাদান সংযুক্ত করে প্রথম দিকের জৈবকণা গঠন করে বা প্রথমে জীব কোষের গঠন করে। প্রিয় পাঠক লক্ষ করুন আল কোরআন ঠিক একই কথা বলছে। আল কোরআনে তার সাংকেতিক ভাষায় বা রুপক ব্যাক্ষায় বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী রাসেলের তত্ত্বটিকেই সমর্থন করছে। এবার আসুন আমরা পরবর্তী আলোচনায়। জীববিজ্ঞানী রাসেল বলছেন-প্রথমে কোষ মৃত ছিল। পরবর্তীতে তা প্রাণের মলিকিউলে পূর্ণ হয় অর্থাৎ কোষে প্রাণ সঞ্চার ঘটে। আল কোরআন রাসেলের গবেষনার প্রতিটি বক্তব্যের সত্যতা নিরুপন করছে। আল কোরআন এর সুরা আনামে বলছে ‘‘তিঁনি প্রাণহীন থেকে জীবনের প্রবাহ ঘটান’। আজকের বিজ্ঞান পরীক্ষা নীরিক্ষায় একই কথার পুনঃরাবৃতি করছে। অতএব আল কোরআন আমাদের ডারউইনের উষ্ণ পুকুর তত্ত্বকে গ্রহন করে নাই বরং গ্রহণ করেছেন ভাসেলডরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর উইলিয়াম মার্টিন এবং গ্লাসগোতে স্কটিশ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সেন্টারের প্রফেসর মাইকেল রাসেল প্রথম কোষ সৃষ্টি সংক্রান্ত গবেষণা তত্ত্বটি। এটাকেই আল কোরআন গ্রহণযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। বিবর্তনবাদ কোষ সৃষ্টি সম্পর্কে সঠিক সত্য তথ্য দিতে পারে নাই। আল কোরআন মাইকেল রাসেল এর কোষ সৃষ্টি তথ্যকেই সাপোর্ট দিচ্ছে। কোষ সৃষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব সঠিক কোন ব্যঅক্ষা দিতে না পারলেও বিবর্তনবাদের একটি বিষয়কে আল কোরআন সমর্থন দেয়। বিবর্তনবাদ অনুসারে পৃথিবীতে সমস্ত জীবজগতের আবির্ভাব হয়েছে একটি সরল এককোষী জীব থেকে–যা “সাধারণ পূর্বপুরুষ” নামে পরিচিত। আল কোরআনও ঠিক একই কথা বলছে একটি নফস্ বা একটি প্রান যা থেকে তার জোড়া সৃস্টি করে। এককোষি প্রানি এ্যামিবা যেভাবে নিজেকে বিভক্ত করে তার জোড়া সৃষ্টি করে। লক্ষ্য করুন আল কোরআনের এই আয়াতটি “তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই নফস থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন ৩৯:৬” প্রিয় পাঠক এই আয়াতটি গভীর ভাবে লক্ষ্য করুন-আয়াতটির প্রথম অংশে বলা হচ্ছে তিনি সৃষ্টি করেছেন একটি নফস থেকে তারপর তা থেকে তিনি তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। নফস শব্দের আভিধানিক অর্থ আত্মা বা প্রান। একটি প্রাণ থেকে অথাৎ এককোষি জীব এ্যামিবা যা একটি প্রাণ। যারা নিজেদেরকে দ্বিখন্ডিত করে বংশবিস্তার করে। অথাৎ একটি কোষ বিভক্ত হয়ে যেভাবে তার জোড়া কোষটি সৃষ্টি করে। আল কোরান সেই বিষয়টিই তুলে ধরেছে। আল কোরআনে প্রিক্যামব্রিয়ান যুগের সেই সময়কালের কথাই বলা হচ্ছে যখন পৃথিবী জুড়ে শুধু এককোষি প্রানিরই তান্ডব।
এখন প্রশ্ন হল এই প্রতিলিপি তৈরীকরণ ক্ষমতা ভারী অনুর মধ্যে কিভাবে এলো? আমরা এর ব্যাক্ষা কিভাবে পেতে পারি? তার উত্তর আজকের বিজ্ঞানের কাছেও নেই। প্রকৃতিবাদী বিজ্ঞানীরা একে প্রকৃতির নির্দেশণা বা নিয়ম বলে চালিয়ে দিয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন, যদি কোন জৈব অনুর মধ্যে প্রতিলিপিকরণ ক্ষমতা থাকতো তবে প্রকৃতিতে সংশ্লেষণের মাধ্যামে একটি অণু তৈরী হওয়াই যথেষ্ট, নতুন অনু সৃষ্টির জন্যে কাঁচামালের প্রয়োজন হতনা, প্রথমটির প্রতিলিপি করণও ভাঙন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি বায়ো অনুতে ভরে যেত ,কিন্তু এমনটা বাস্তবে দেখা যায়না; এমনকি প্রাণকোষস্থিত বায়ো অনু ছাড়া প্রকৃতিতে অন্যান্ন অসংখ্য বায়ো অণুর কোনটাই স্বতস্ফূর্তভাবে তাদের প্রতিলিপি তৈরী করতে পারেনা। বিজ্ঞান বলছে, বর্তমান কালের কোষে নির্দেশণা দানকারী দুই প্রকার ভারী অণু তথা নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন রয়েছে, যাদের মধ্যে নিউক্লিক এসিড নিজের প্রতিলিপির নির্দেশণা দানের ক্ষমতা রাখে। নিউক্লিক এসিডে পরিপূরক নিউক্লিওটাইডের (সূত্রক) মধ্যে খাড় জোর থাকার ফলস্রুতিতে তার নিজের সংশ্লেশনের নমুনা প্রদান করতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে আর এন এ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়ায় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। একই ভাবে এটি একদিকে যেমন প্রতিলিপিকরণের নমুনা প্রদান করে অন্যদিকে প্রতিলিপিকরনকে ত্বরাণ্বিত করে। এই আর এন এ কে মনে করা হয় বংশানুক্রমিকতার প্রাথমিক উপাদান। আরও মনে করা হয়ে থাকে জৈব রাসায়নিক বিবর্তন আর এন এ অনুর উপর ভিত্তি করেই শুরু হয়েছিল। আর এন এ ও এমাইনো এসিডের মধ্যে নির্দেশিত পারস্পরিক বিক্রিয়ায় (Ordered অনুমুদিত/ নির্দেশিত interactions) সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান বংশানুক্রমিকতার কোড ডি এন এ, যা ক্রমে ক্রমে আর এন এর স্থান দখল করেছে। আধুনীক বিজ্ঞানের পর্যোবেক্ষণ ও পলীক্ষা লব্দ ফলাফল, কিন্তু বিজ্ঞান গলদগর্ম হয়েও এই আর এন এ তৈরীর কৌশল বলতে পারছেনা প্রকৃত পক্ষে আর এন এ কিন্তু কোন প্রাণ কোষ নয়, এটি প্রাণকোষস্থিত একটি অনু। তা হলে আরও ধরে নিতে হবে যে, আর এন’র মধ্যেও বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিস্ক রয়েছে যেটি চিন্তাভাবনা করে কোষ গঠনের বাকী অনুগুলোকে সংশ্লেষিত করে এক আদর্শ প্রাণকোষ গঠন করতে পারে। বিজ্ঞান কিন্তু এ কথা স্বীকার করেনা; এমন কি প্রকৃতিতে কোন চিন্তাশীল স্বত্তা আছে বলেও বিজ্ঞান স্বীকার করেনা। তাহলে যৌক্তিকভাবেই স্বীকার করতে হচ্ছে প্রকৃতিতে আপনা আপনি প্রতিতিলিপি করণ ক্ষমতা সম্পন্ন কোন বায়ো অনু সৃষ্টি হতে পারেনা। তার জন্যে প্রয়োজন নীল নকশা ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান। উপরের আলোচনায় আমরা যে বিষয়টা বুঝতে পারলাম তা হল, পৃথিবীর আবহমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রনে সৃষ্টি হয়েছে সরল প্রকৃতির বায়ো অনু যা ক্রমে ক্রমে সংশ্লেশিত হয়ে তৈরী হয়েছে ভারী অণু, এই ভারী অণুগুলেই সৃষ্টি করেছে জীবনের বিল্ডিং ব্লক আর এন এ, আর এন এর মধ্যে ‘কোন উপায়ে’ প্রতিলিপিকরণের নির্দেশণা সংশ্লিষ্ট হয়েছে। বিজ্ঞান এই উপায়টাকে খুঁজে পাচ্ছেনা। অতএব বায়ো অনু এক্ষমতা পেলো কোথা থেকে? উত্তর একটিই একটি কনসাসনেস। মহাজাগতিক কনসাসনেস যিনি আরএনএ ও ডিএনএকে গঠন করেছেন নির্দেশনা দান করেছেন। বায়ো অনু গঠন করেছেন নির্দেশনা দান করেছেন। স্রষ্টা ছাড়া যারা প্রাণ উৎপাদনের ধারনা করতে পারে তারা আসলে পানিতে থেকেই কুমিরের সাথে যুদ্ধ করে। তারা কত নির্বোধ! ি
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:১৭