ইসলাম ধর্মের ন্যায় অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ নেই যা জ্ঞানীদের মর্যাদা সুউঁচু করেছে, তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে বলেছে, জ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করেছে, বিবেককে কাজে লাগাতে বলেছে ও চিন্তা-গবেষণা করতে আহবান করেছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এক মহা সভ্যতা গড়েছেন, যা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এজন্যই তাঁর আগমনকে জ্ঞান পিপাসু ও জ্ঞানীদের নিকট প্রকৃত জ্ঞানের এক মহাবিপ্লব হিসেবে গণ্য করা হয়। তাইতো ইসলাম জ্ঞান দিয়েই শুরু করেছে। খোদায়ী হেদায়েতের আলোতে পৃথিবী আলোকিত করেছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন: ‘তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?’ (সূরা মায়েদা: ৫০)। ইসলাম ধর্মে অজ্ঞতা, সন্দেহ, ধারণা বা সংশয়ের কোন স্থান নেই। নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামের উপর প্রথমেই অবতীর্ণ হয়: ‘পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না’। (সূরা আলাক: ১-৫)। আল্লাহ তায়া’লা যারা জানে ও যারা জানে না তাদের মাঝে সমতা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেন: ‘বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান’। (সূরা যুমার: ৯)।
এ থেকেই বুঝা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিন্মোক্ত বাণী মোটেও অতিরিক্ত নয়। তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের পথে চলবে আল্লাহ তায়া’লা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিবেন। জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টিকরণে ফেরেশতারা তাদের ডানা বিছিয়ে দেয়। ইলম অন্বেষণকারীর জন্য আসমান ও জমিনের সবাই ইস্তিগফার করতে থাকে, এমনকি পানির নিচের মাছও। আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা যেমন সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রের উপর চাঁদের মর্যাদা। উলামাগণ আম্বিয়াদের ওয়ারিশ। আর আম্বিয়া কিরামগণ দিনার বা দিরহামের (অর্থকড়ির) ওয়ারিশ করেননি, তাঁরা ইলমের ওয়ারিশ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম লাভ করল, সে পূর্ণ অংশই প্রাপ্ত হলো”। (মুসলিম শরীফ)।
পবিত্র কুরআনে “ইলম” শব্দটির বিভিন্ন রুপান্তর পরিসংখ্যান করে দেখা গেছে ইহা (৭৭৯) বার এসেছে, অর্থাৎ কুরআনের প্রত্যেক সূরাতে প্রায় সাত বার করে এসেছে! আর ইহা শুধু তিন অক্ষরের “ইলম” শব্দটির ব্যবহার। তবে ইলমের সমার্থক অর্থে ব্যবহৃত শব্দ অনেক বার এসেছে। যেমন: ইয়াকিন, হেদায়েত, আকল, ফিকির বা চিন্তাভাবনা, নজর বা দৃষ্টিপাত, হিকমা বা প্রজ্ঞা, ফিকহ, বুরহান বা প্রমাণ, দলিল, হুজ্জাত বা প্রমাণ, আয়াত বা নিদর্শন, বাইয়্যেনাহ বা স্পষ্ট প্রমাণ এবং এভাবে ব্যবহৃত অনেক শব্দাবলী যা ইলমের অর্থ বুঝায় ও ইলমের প্রতি উৎসাহিত করে। অন্যদিকে রাসুলের সুন্নতে ইহা এত বেশি সংখ্যক বার ব্যবহৃত হয়েছে যে, এর পরিসংখ্যান করাই প্রায় কঠিন ও অসম্ভবপর। ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক “রবার্ট বায়ের জোসেফ” বলেন: “নিঃসন্দেহে ইসলাম - জ্ঞান বিজ্ঞানের ধর্ম- ইহা তার অনুসারীদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞান ও আমলের দ্বারা পাথেয় সংগ্রহ করতে সর্বদা আহবান করে। এতে কোন সঃন্দেহের অবকাশ নেই; কেননা আল কোরআনের সর্বপ্রথম আয়াতই হলো: পড়ুন আপনার রবের নামে”।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩