উত্তম চরিত্র হলো- ভালবাসা, উদারতা, সম্মানবোধ, ক্ষমাশীলতা, লজ্জাশীলতা, শান্ততা, নম্রতা, অন্যকে অগ্রাধিকার, ন্যায় বিচার, সততা, বন্ধুত্ব, সকলের সাথে পরামর্শ করা ইত্যাদি। ব্যক্তির আখলাক যদি সুন্দর হয় তবে তার জীবন ও সমাজের সুখ-শান্তিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর যদি ব্যক্তির চরিত্র খারাপ হয় তবে সে নিজেও দুঃখী হয় এবং সমাজের সকলকে দুঃখী ও দুর্ভাগা করে।
এজন্যই ইসলাম তার অনুসারীদের অন্তরে উত্তম চরিত্র ও সৎগুনাবলী স্থাপন করতে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। তাদেরকে এসব গুনাবলী আঁকড়িয়ে ধরে রাখতে উৎসাহিত করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহাকে তাঁর নবুয়াতের প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণ করতে প্রেরিত হয়েছি”। (বায়হাকী শরীফ)। মানুষ যে সর্ববৃহৎ সভ্যতা (ইসলাম) সম্পর্কে অবগত হয়েছে সে সভ্যতাকে যুগে যুগে শক্তিশালী ও মজবুত করতে ইসলামের মিশনই যেন ছিল উত্তম চরিত্র গঠন। ইসলামের নবী এ রিসালাতের আলো পৌঁছাতে ও মানুষকে এ সভ্যতার উপর ঐক্যবদ্ধ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। মানুষকে সুন্দর আখলাক, উত্তম আদর্শের মাধ্যমে পবিত্রকরণ ও তাদের চোখের সম্মুখে পূর্ণতার আলো উদ্ভাসিত করতে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন, ইহাকে তিনি ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন অতিথির সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন উত্তম কথা বলে বা চুপ থাকে”। (মুসনাদে আহমদ)। এমনিভাবে ইসলাম মানুষের ঈমানের সত্যতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে তাদের অন্তরে উত্তম চরিত্রের গুনাবলী অর্জনের উপর নির্ভর করেছে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “প্রত্যেক দুর্বল, নম্র, সহজ ও মানুষের নিকটতম ব্যক্তিদের উপর জাহান্নাম হারাম করা হয়েছে”। (তিরমিজি)। তিনি অন্যত্রে বলেছেনঃ “সব ভাল কাজই সদাকা, হাসি খুশী চেহারায় কারো সাথে মিলত হওয়া ও তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতি ভরে দেয়াও (বিশেষ করে যখন পানি উঠানোর রশি না থাকে) সৎকাজের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি)।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক সাহাবীকে বলেছেনঃ “তোমার মাঝে দু’টি বৈশিষ্ট্য আছে, যা আল্লাহ তায়া’লা পছন্দ করেনঃ ধৈর্যশীলতা ও ধীরতা”। (মুসনাদে আহমদ)।
প্রকৃত সুখ ও উত্তম আখলাকের মাঝে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। উত্তম চরিত্রই মানব সন্তানের একমাত্র সুখ-শান্তির পথ। উত্তম আখলাক ছাড়া শান্তি আসতে পারে না। আখলাক ব্যতীত মানুষ জীবনে হতাশা, দুঃখ, দুর্দশা, বিষণ্ণতা ও কষ্ট ছাড়া কিছুই লাভ করতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২২