somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরির সাথে সময়গুলো... Tuesdays With Morrie

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিচ এলবম-এর সাথে মরির দেখা হয়নি ১৬ বছরেরও বেশি সময়। হয়তোবা তাদের দেখাও হতো না আর। মরি মারা যেতেন, যেভাবে সবাই চলে যায়, সেভাবেই তাঁর সৎকার হতো, পত্রিকার পাতায় শোকবার্তায় তাঁর নাম দেখে মিচ দুঃখ পেতেন, স্ত্রীকে ডেকে হয়তোবা ছবিটা দেখিয়ে বলতেন তার প্রিয় শিক্ষকের কথা। এরকম কিছুই হবার কথা ছিল হয়তো, কিন্তু হলো না। টিভি চ্যানেল পাল্টাতে গিয়ে এক রাতে টেড কপোলের 'নাইটলাইন' শো-এ মরি শোয়ার্টজ-এর নাম শুনে একই সাথে সব স্মৃতি হুড়মুড়িয়ে মনে পড়ে গেল মিচের। এই গল্পের শুরু তখনই। মিচ এলবম লিখেছেন তার ৭৮ বছর বয়েসী সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক মরি শোয়ার্টজকে নিয়ে এই 'Tuesdays with Morrie' বইটিতে তার অভিজ্ঞতাগুলো।

মরি তাঁর মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পান ১৯৯৪ এর গ্রীষ্মে। একজন উচ্ছল মানুষ মরি যেই বুধবারে গীর্জার 'ড্যান্স ফ্রী' অনুষ্ঠানে নাচতে পারলেন না, তখনই তিনি বুঝলেন তাঁর কিছু একটা খারাপ অসুখ হয়েছে। তারপরে আস্তে ধীরে তাঁর শরীরের অবস্থার অবনতি হলে, তাঁর চিকিৎসক জানালেন, তাঁর যে রোগটা হয়েছে সেটার নাম সংক্ষেপে ALS [amyotrophic lateral sclerosis] বা Lou Gehrig's disease। স্নায়ুতন্ত্রের এই কঠিন রোগে একটা একটা করে মানুষের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এএলএস হলো একটা জ্বালানো মোমবাতির মতো, এটা আস্তে আস্তে শরীরের সব স্নায়ুগুলোকে গলিয়ে শরীরটাকে এক দলা গলিত মোমের মতো পদার্থে পরিণত করে। সাধারণত শুরু হয় পা থেকে, এবং আস্তে ধীরে পুরো শরীরটাকে ছিবড়ে বানিয়ে দেয়। শেষমেশ বেঁচে থাকা মানুষটি হয়তোবা নিঃশ্বাস নিবে গলায় ফুটো করে ঢোকানো নল দিয়ে, যখন তার সজীব সত্তাটা হাসফাস করবে অথর্ব শরীরটার ভিতরে, যেটা হয়তোবা শুধু চোখ নাচাতে আর জিভ নাড়াতে পারে। মরি প্রথমে ভয় পেলেও মেনে নিয়েছিলেন ভাগ্যকে। কিন্তু আশা ছাড়েননি। যতদিন পেরেছেন শিক্ষকতা করে গেছেন Brandeis বিশ্ববিদ্যালয়ে। করে গেছেন স্বাভাবিক সব কাজই। চিকিৎসক সময় দিয়েছিলেন দুই বছর। মরি কাজে লাগিয়েছিলেন পুরো সময়টাকেই, প্রমাণ করেছেন 'মৃতপ্রায়' শব্দটা 'বাতিল' বা 'অকেজো'-এর সমার্থক নয়। মরি জীবিতাবস্থাতেই তাঁর শেষকৃত্য করেন তাঁর প্রিয় আত্মীয় বন্ধুদের সাথে, কারণ তাঁর কাছে মনে হয়েছে তিনি যখন বেঁচে আছেন তখনই সবাই বলে যাক তাঁকে কতটুকু ভালবাসে তাঁর বন্ধুরা। তাঁর শেষ কাজ ছিল মিচ-এর সাথে তাঁর এই শেষ প্রজেক্ট, যার ফল এই বইটি। পুরো বইটি জুড়ে মিচ প্রতি চ্যাপ্টারের শেষে ১৯৭৬ সালে মরির সাথে তাঁর নিজের শিক্ষাজীবনের কেটে যাওয়া সময়গুলোকে নিয়ে লিখেছেন। ১৯৯৫ এর মরি আর ১৯৭৬ এর মরি। বইটির প্রতিটি পাতায় একজন অদ্ভুত মানুষ ফুটে উঠেছে, যে বাঁচতে জানতো, চারপাশের মানুষকে নিয়ে, সাদাকালো চারপাশটাকে রঙিন করে নেবার ক্ষমতা ছিল মরির। তাঁর চারপাশের মানুষগুলোর জীবনে আক্ষরিক অর্থেই মরি ঘুরিয়েছেন 'জাদুর ছড়ি'। মিচের ভাই পিটার, যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জীবন থেকে, আত্মীয়-বন্ধুদের থেকে নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়েছিল, তাকেও মরি শিখিয়ে দেন যে জীবন পরাজিত হবার জন্যে নয়, জীবনে সবাই জয়ী হতে পারে, নিজের ভাবনাটাকেই পাল্টে ফেলে। এরকম জাদুর ছড়িওয়ালা মানুষ খুব অল্পই আসে পৃথিবীতে, তাই বা কেন হয়?

কিছু কিছু অংশ পড়ে আমি চোখের পানি আটকাতে পারিনি, ভেবেছি, আমার নিজের যদি এমন একজন শিক্ষক থাকতেন তাহলে হয়তোবা আমি কখনও তাঁর সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করতাম না। মরি কেমন পড়াতেন তা ব্যাখ্যা করার কিছু নেই, কিন্তু একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রের কাছে কতটুকু হতে পারে, তা এই বইয়ের প্রতিটা পাতায় পাওয়া যায়। আমি হয়তোবা বইয়ের রিভিউ ভালো লিখতে পারছিনা, কিন্তু একজন পাঠক হিসেবে আমি এই বইটা পড়ে শিখেছি অনেক কিছু। মানুষের জীবনে কিছু বই থাকে, যা তার জীবনের মোড়গুলো পাল্টে দিতে পারে। আমার জীবনে এই সত্য কাহিনীটার গুরুত্ব ততখানিই। আগেই বলে দিচ্ছি, এখানে বইটার যেটুকু আমি তুলে ধরেছি সেটুকু কিছুই নয়। আর আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক বলে যে, এই বইটা অন্তত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একবার পড়ে দেখা উচিত। 'Tuesdays with Morrie' আমার সবচে' প্রিয় বইগুলোর একটা। এর ট্যাগলাইনঃ 'An old man, an young man and life's greatest lesson' কথাটা আসলেই সত্যি। শুধু মনে হয়, যদি একবার মরির সাথে আমার দেখা হতো!

আমি মূলত গল্পের বইয়ের পাঠক, ভাবগম্ভীর বইপত্র আমার খুব একটা পড়া হয়ে ওঠে না। পড়তে ভালো লাগে বলে যখন তখন বই নিয়ে বসে যেতে পারি, তা বাসেই হোক বা ক্লাসে! ব্যাগে সর্বক্ষণ একটা গল্পের বই আমার থাকবেই। তবু কখনও ভাবিনি, কোনও বই নিয়ে সেটার রিভিউ লিখব। লিখিছিনা বেশ কিছুদিন। আর চারপাশের মানুষজনের লেখা পড়ে নিজের আবজাবগুলো আজকাল আর ফোল্ডার থেকেই নামাই না। তাই যখন খুব লিখতে ইচ্ছা করলো তখন ভাবলাম আমার প্রিয় বইগুলোর একটাকে নিয়েই নাহয় লিখি। তাই আজ এই পোস্ট। বইটা নিয়ে বলতে গেলে আসলে প্রতি পাতা থেকেই কিছু না কিছু বলতে হয়... আমি সেই দিকে গেলাম না... ঢাকায় এই বইটা আমি একবার দেখেছি "ওয়ার্ডস 'এন' পেজেস" এ। আর কোথাও দেখিনি। হয়তো এখন 'ফ্রেন্ডস'-এ খুঁজলে বা আজিজ-এ পাওয়া যেতে পারে। আমার কাছে এক কপি আছে, তবে অনেক হাত ঘুরে সেটার অবস্থা বেহাল। নেটে পাওয়া যায়, আগ্রহীরা বইটা পাবেন এখানে।

Tuesdays With Morrie
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৪:০০
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×