১
পৃথিবীর প্রাচীনতম নগরী দামেশক।ব্যাস্ততম শহর দামেশক আজ জনশূন্য। রাস্তাই নেই কোন মানুষ। বাজারে নেই কোন কোলাহোল।
হ্যাঁ! দামেশক নগরী আজ বিরাণভূমির মত।
জনগনের সমাগম আজ 'খেলাফত-প্রসাদে'।অর্ধ পৃথিবী শাসনের কেন্দ্রবিন্দু -রাজধানী 'দামেশক '।সেখানেই রয়েছে খলিফার প্রসাদ।
উমাইয়া খলিফার প্রসাদ প্রাঙ্গণে আজ দামেশক নগরীরর সর্বস্থরের মানুষের ভীড়।
প্রসাদের বারিন্দায় শহরের বড় বড় নেতৃবৃন্দদের মুখ দেখা যাচ্ছে।সবার চোখে মুখে এক ধরণের অস্থিরতারর ছাপ।মনে হচ্ছে সবাই অনাকাঙ্খিত কিছুর অপেক্ষায় আছে।
কারন, উমাইয়া খলিফা সুলাইমান বিন আব্দুল মালিক এখন মৃত্যু শয্যায় শয়িত।জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি।
খলিফার পাশে শুধু মাত্র তার আস্থাভাজন এবং উপদেষ্টারা-ই রয়েছে।আর কেউ নেই।
২
মহলের বাহিরের মত ভিতরের অবস্থাও একি-ই রকম।উমাইয়া নেতৃবৃন্দদের বিবি এবং কন্যা-জায়ারা নতুন সংবাদ শোনার জন্য ব্যাস্ত।তাদের অগ্রভাগে রয়েছে ইয়াজিদ,হিশাম,মাসলামাদের স্ত্রী এবং খলিফার বোনেরা।সবাই খুশির সংবাদ শুনতে চাচ্ছে যে, "আমার স্বামী-কেই পরবর্তী খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করা হোক।"
একদিকে তারা খলিফার মৃত্যুতে চিন্তিত,শোকাহত।অন্যদিকে তারাই আবার খলিফার মৃত্যু কামনা করে, ক্ষমতার লাগাম ধরার প্রতিযোগীতায় ব্যাস্ত।
মারাত্নক আশ্চার্য!!!
৩
মহলের এক কোনে বসে আছে সুন্দরী এক যুবতী। মান-সম্মানে উঁচু পর্যায়ের এক যুবতী। তার পরণে এমন মূল্যবান চাকচিক্যময় কাপড় রয়েছে,যা মহলের কারো কাছে নেই।তার মুখ থেকে শান্ত-সুন্দর মর্যাদাময় ভাব প্রকাশ হচ্ছে,যা অন্য নারীর চেহেরায় নেই।
মনে হচ্ছে মহলের অন্যান্য যুবতীদের আশা-উদ্দীপনায় তার অংশীদারিত্ব নেই।সে তার অর্জন নিয়েই তুষ্ট,সন্তুষ্ট।
বাস্তবে সে সবকিছুই পেয়েছে, যা প্রতিটি যুবতী আশা করে।সৌন্দর্য এবং সম্মান,ভদ্রতা এবং যোগ্য স্বামী।উচ্চ বংশ,আরাম আয়েশ এবং স্বাচ্ছন্দ।সবকিছুই তার অর্জিত।
আমিরুল-মু'মিনিনের বাসভবনে,খিলাফতের বিছানায় তার জন্ম।সম্মান এবং ইজ্জতের কোলে তার প্রতিপালন।সুখ-শান্তির মধ্যে তার দিন গুজরান।
সে চেয়েছে,কিন্তু পায় নি।এমন কিছু নেই।যা চেয়েছে সব পেয়েছে।যা ইচ্ছা সব পুরণ করেছে।
চিত্র এবং চরিত্রের দিক দিয়ে সে ছিল সৃষ্টিগত সুন্দরী। তার জামাল(সৌন্দর্য) এবং কামাল(পরিপূর্ণতা)ছিল ভরপুর।
তার চারপাশে সে যাদেরকে পেত,সবাই তাকে আদর করত,ভালবাসত।নৈরাশ কি জিনিস!তা তার জীবনে ছিল না।
জানেন সেই যুবতী কে?কে তার মহান পিতা??
জানেন,আজকের মরক্কো থেকে সিন্দু পর্যন্ত, রাশিয়া থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত কতগুলো রাষ্ট রয়েছে???
তার পিতা একাই সবগুলো রাষ্টের শাসক ছিলেন।এসব রাষ্টে তার উপর আর কোন 'রাষ্টপতি' ছিল না।
হ্যাঁ!
তার পিতার নাম আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান।উমায়্যা খলিফা।
আর সেই রূপসী যুবতীর নাম হল,ফাতিমা বিনতে আব্দুল মালিক।
ফাতিমা!খলিফা তনয়!
ফাতিমা!খলিফার বোন,পরে খলিফার স্ত্রী!।
ফাতিমা যখন যুবতী।
উমাইয়া গোত্রের সকল যুবকদের দৃষ্টি তার দিকে।সবাই তাকে কামনা করতে লাগল।
কিন্তু,তার পিতা তার জন্য নির্বাচিত করলেন উমাইয়া বংশের শ্রেষ্ঠ যুবককে।উমাইয়া বংশের সম্মান-মর্যাদা এবং গৌরব ভিত্তি করে যার উপর।যে উমাইয়া বংশের শ্রেষ্ঠ খলিফা।সে হচ্ছে ওমর ইবনে আব্দুল আযিয।
আব্দুল মালিকের প্রিয় ভাতিজা।ফাতিমার চাচাতো ভাই।
৩
ফাতিমা এখন খলিফার প্রসাদ থেকে ভাবি খলিফার প্রসাদে।বিলাসিতার এক সাগর সাতঁরিয়ে সে এখন আরেক সাগরে।
তার সচ্ছলতা আরো বেড়ে গেল।সুখ-শান্তি তার চারপাশে ভীড় করতে লাগল।
............
...................
.........................(ক্রমশ...ইতিহাসের কথা সিরিজে আমাদের সঙ্গে থাকুন....