মাহী গা ঘেঁষে বলল , ‘ভাইয়া , একটা গল্প বল না ; ভূতের গল্প ?’
আসলে গল্প টল্প ইদানিং তেমন আর বলতে পারি না । তার উপর আবার ভুতের গল্প ! বললাম , ‘অন্য কিছুর গল্প বলি ?’
কিন্তু ও রাজী হয় না । ছোট ভাইয়ের আবদার রাখতেই হয় ।
‘সেদিন রাত অনেক হয়েছে । ঘুম আসছিল না । তাই ভাবলাম একটু পিসিতে বসি । কিন্তু কপাল খারাপ ! পিসি অন করতে না করতেই কারেন্ট চলে গেল । আর কারেন্ট যাওয়া মানেই তো অন্তত একঘন্টা ।
কিছুক্ষন বসেই থাকলাম পিসির সামনে । ইউপিএস টা আসলেই লাগবে । উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম । আমার আবার বারান্দায় বেশ বাতাস । চারিদিকে কি জোছনা – আকাশে বেশ বড় একটা চাঁদ ।
হঠাৎ নীচে কাল একটা কুকুর দেখে বুকটা ধক করে উঠল । মনে হল সোজা বারান্দায় আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । ভেতরে চলে যাব কি না ভাবছি , এসময় , যেন আমার অস্বস্তি বাড়াবার জন্যেই , চাঁদটাকে ঢেকে দিল এক টুকরো মেঘ ।
চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসল । থমথমে পরিবেশ । তার উপর কুকুর টার কথা ভেবে একটু ভয়-ই লাগছিল – এমন সময় কারেন্ট চলে আসল ।
একটু অবাক হলাম , কারেন্ট যাওয়া তো বিশ মিনিট-ও হয় নি ! তা যাক গিয়ে , আগে আসলে তো আমার-ই ভাল । এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকলাম এবং আবারো একটা ধাক্কা খেলাম ।
ঘরে লাইট –ফ্যান চলছে – সুইচ অন করাই ছিল । কিন্তু পিসিও অন এবং মনে হল কার্টুন চলছে । সামনে গিয়ে দেখি একটা বাচ্চা মেয়ে – Tom & Jerry দেখছে ।
প্রথমত, বাসায় কোন বাচ্চা মেয়ে নেই , এই রাত দেড়টাতে আসার কোন প্রশ্নই আসে না ; আর কম্পিউটার রিসেট করা হয়েছে গতকাল, মেমরিতে কোন কার্টুন থাকার কথা না ।
বাচ্চাটার পাশে গিয়ে বসলাম । ধবধবে সাদা একটা বাচ্চা , মুঠি বন্ধ করে হাত দুটো কোলের উপর রেখেছে । চোখ দুটো স্ক্রিনে স্থির ।
কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ।
‘ তোমার নাম কি ? ’
বলতে গিয়ে বুঝলাম , গলাটা শুকিয়ে এসেছে ।
কোন প্রতিক্রিয়া নেই । হাতগুলো ধরতে গিয়ে বিস্ময়ে সরে আসলাম । কি প্রচন্ড ঠান্ডা হাত !
এবার আমার দিকে ঘুরে তাকাল । চোখের দৃষ্টি দেখে ঠান্ডা একটা স্রোত পিঠের ভেতর দিয়ে নেমে গেল । একি কোন শিশুর চোখ ! একেবার ভাবলেশহীন – কালো চোখের তারা গুলো যেন জ্বলছে । বলার মত কিছু আবার খুঁজে পেলাম না ।
‘কিছু খাবে ?’
আবার আমার দিকে ফিরল , এবং আমি আবার শিউরে উঠলাম । তবে এবার মাথা নেড়ে বোঝাল , হ্যাঁ ।
আমি উঠে রান্না ঘরে গেলাম , ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে গরম করতে শুরু করলাম । আমার যুক্তিবাদী মন আমার সামনে অনেক গুলো প্রশ্ন তুলে ধরছে , যার কোনটার উওর-ই আমার জানা নেই । এত শীতল হাত – সেই দৃষ্টি – আবার ওর সামনে যাবার ইচ্ছা বা সাহস দুটোর অভাব-ই বোধ করছি ।
কৌতুহলের কাছে হার মানল ভয় । গ্লাসে দুধটুকু নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হলাম এবং আবার চারদিকে ঢাকা পরল অন্ধকারে ।
কোন মতে আধারে হাতরে হাতরে মোম বাতি ধরালাম ।
একহাতে মোম আর একহাতে দুধের গ্লাস নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি চেয়ার ফাকা ।
সবগুলো রুম খুঁজে দেখলাম , কোথাও নেই । বাসার দরজা ভেতর থেকে আটকানো ।
আরো বিশ মিনিট পরে কারেন্ট আসল । আসলে প্রথম বার কারেন্ট যাওয়ার পরে থেকে এতক্ষনে একঘন্টা হল । তাহলে কি সব হ্যালুসিনেশান ? কারেন্ট কি আসেনি ? বাচ্চা মেয়েটা কি শুধুই কল্পনা ?
পিসির সামনে গিয়ে বসি । কি মনে হতে মনিটরের উপর হাত দিলাম । গরম !
তাহলে কি আসলেই কেউ এসে ছিল ?
‘কেউ’ না ‘কিছু’ ? ’
আমি থামতেই মাহী বলল , ‘তখন আমরা কোথায় ছিলাম ? বাসায় তুমি একা ছিলে ?’
‘বাসার সবাই নানুকে দেখতে রাজশাহী গিয়েছিল , আমার পরীক্ষা বলে বাসাতে একাই ছিলাম । ’
‘আর কোন্ দিন দেখনি ওকে ?’
‘না’
এবার আরেকটু কাছে এসে বসল মাহী । ‘ভাইয়া, ওটা কি ভুত ছিল ?’
পুরোনো প্রশ্ন গুলো ফিরে এল আবার ।
আসলে কি ছিল সেটা ? ভূত , আত্মা , না আমার কল্পনা ?
আসলেই কি ভূত বলে কিছু আছে ?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৪