মিষ্টি চেহারার মেয়ে অরিত্রী আত্মহত্যা করেছে।
ঘটনাটি হৃদয়বিদারক।
স্কুল থেকে বহিষ্কার সংক্রান্ত ঘটনায় মেয়েটি আত্মহননকে বেছে নিয়েছে।
স্কুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়ার কারনে যদি অরিত্রীকে বহিষ্কার করা হয়ে থাকে তবে তা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। এর জন্য অন্য শাস্তি দেয়া যায়। কিন্তু বহিষ্কার নয়। সেরকম হলে জড়িত শিক্ষকদের বরখাস্ত করাটাই সমীচীন। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অরিত্রীর বিরূদ্ধে নকলের অভিযোগ আনা হয়েছে এই বলে যে পুরো বইটিই মোবাইলে কপি করে নেয়া হয়েছিল। সেরকটি হলে অবশ্য কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবার অধিকারী।
তারপরেও আমার নিজের কৈশোরকালের কথা মনে পড়ে যায়। খুব যে সুবোধ শান্ত শিষ্ট ছিলাম আমি তা কিন্তু নয়। শিক্ষক শিক্ষিকাদের বহু যন্ত্রনা দিয়েছি। ক্লাশে কথা বলা, বেয়াদবের মত অহেতুক তর্ক করা, এমনকি ক্লাশে গল্পের বই নিয়ে ক্লাশ টাইমে ডেস্কের নীচে লুকিয়ে লুকিয়ে পাঠ করা ইত্যাদি বহু অপকর্মের কারনে শাস্তি পাওয়া ছিল নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। আমার শিক্ষক শিক্ষিকারা এসব কারনে বিরক্ত হতেন। কিন্তু ক্ষমাও করে দিতেন। কখনও অতীত মনের মধ্যে পুষে রাখতেন না। দিনের শাস্তি দিনেই শেষ হয়ে যেত। পরদিন শুরু হত এক ফ্রেশ দিন। সমস্ত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাকে এবং আমার মত অসংখ্য ছাত্র ছাত্রীদের উনারা ভালবাসতেন। সেকারনে খুব বেশী কঠোর তারা কখনই হতে পারতেন না। এমনকি নকল করলেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল সেই পরীক্ষায় শূন্য পাওয়া। অনেক ঝামেলা হত, তবে সেই ছাত্রীদেরকে বহিষ্কৃত হতে হত না।
ভিকারুননেসা স্কুল এক নামী দামী স্কুল। এখানে স্কুলের শৃংখলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। এক ছাত্রী চলে গেলে আরেক ছাত্রী আসবে। এই ছাত্রীরা শুধু স্কুল চালাবার হাতিয়ার মাত্র। এই ছাত্রীরা সেই স্কুলের প্রান ভোমরা নয়।
অরিত্রীর আত্মহননের জন্য দায়ী আমাদের মন মানসিকতা। একজন ছাত্রীকে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের জন্য কেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠেই পড়তে হবে? জীবনের একটি ভুল কেন সমস্ত জীবনকে তছনছ করে দেবে? "অতীতকে ভুলে গিয়ে নূতন করে আবার শুরু কর" - টিসি দেবার সময় প্রধান শিক্ষিকা কি মোলায়েম সুরে অরিত্রীকে বুঝিয়েছিলেন যে স্কুল পরিবর্তন অরিত্রীর জন্যই ভাল হবে? অরিত্রীর বাবা মা কি তাকে বলেছিলেন যে স্কুল পরিবর্তন করেও তুমি নিজের ভবিষ্যত গড়তে পারবে?
পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতাটুকু আমাদের সবার।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫১