অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকদের বিরূদ্ধে লেখা চুরির অভিযোগ উঠেছে। এবং এই অভিযোগ এসেছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে।
এই ঘটনা পত্রিকায় পড়ার সাথে সাথে আমার জীবনের ছোট একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। একবার আমার ট্রান্সক্রিপ্ট ট্রান্সলেশনের দরকার হয়। আমি একটি সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমার সাথে চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার করে এবং ট্রান্সক্রিপ্ট মূল্যায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর কারন আর কিছুই নয়, আমার ট্রান্সক্রিপ্ট বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ, এখানকার সবকিছুই জাল, দুই নম্বরী ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো কথা বলছিল।
শেষে আমি বললাম, "ট্রান্সক্রিপ্ট মূল্যায়ন করবে না ভাল কথা। তুমি আমার টাকাটা ফেরত দেবে তো?" সে বলল, "হ্য, টাকা ফেরত পাঠাচ্ছি।" টাকা অন্ততপক্ষে ফেরত পেয়েছিলাম সেইটাই ছিল সাত্ত্বনা।
এইরকম ঘটনা যতই বেদনাদায়ক হোক না কেন, আমাদের বাংলাদেশীদের তা অহরহ তাড়া করে বেড়ায়। দুর্নীতি এই দেশটিকে দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে ফিরছে। আমরা চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিং এ শীর্ষ স্থানে চলে আসুক। অথচ আমরা গবেষনার মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে গড়িমসি করে।
প্ল্যাগিয়ারিজম গবেষনার সাথে জড়িত একটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ন বিষয়। গবেষনামূলক লেখার মৌলিকত্ব থাকতেই হবে। অন্যের কাজ অবশ্যই উল্লেখ করা যাবে তার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে।
শিকাগো প্রেস সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ এনেছে সামিয়া রহমান এবং মারজানের বিরূদ্ধে। “A New Dimension of Colonialism and Pop Culture: A Case Study of the Cultural Imperialism,” টাইটেলের এই লেখাটি ছাপা হয় গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি জার্নালে। লেখাচুরির এই অভিযোগ কোন পক্ষই অস্বীকার করছে না। কিন্তু একজন আরেকজনের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। সামিয়া বলছেন মারজান তার অনুমতি ছাড়াই ড্রাফ্ট লেখা সাবমিট করেছেন। অন্যদিকে মারজান বলছে সামিয়া যেহেতু ফার্স্ট অথার এবং চুরি করা অংশটুকু তার অংশেই রয়েছে, সুতরাং দায় দায়িত্ব সম্পূর্ন উনার ঘাড়ে বর্তায়।
এখানে উল্লেখ্য যে কোন পিয়ার রিভিউড জার্নালে রিভিউ কমিটি থাকে যারা লেখার গুনগত মান এবং মৌলিকত্ব নিশ্চিত করে থাকে। সামিয়া আর মারজানের লেখায় প্রায় পাচ পৃষ্ঠা (নাকি আরো বেশী?) হুবহু কপি পেস্ট করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত অত্যন্ত গুরুতর একটি অভিযোগ। সামিয়া বলেছেন অনুমতি ছাড়াই তার অংশ মারজান সাবমিট করেছেন, যা তিনি পরে জার্নাল কমিটিকে জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি তো এটা জানান নি যে এই অংশ তার লেখা নয়, অন্যের লেখা। সেক্ষেত্রে ছাপা হয়ে গেলেও জার্নাল কমিটি লেখাটি শিকাগো প্রেস থেকে এই অভিযোগ আসার আগে ভাগে প্রত্যাহার করে নিতে পারত। দেরীতে হলেও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়বদ্ধতা প্রমান হত।
সামিয়া রহমান একজন অত্যন্ত কৃতিমান ব্যক্তিত্ব। তার পেশাগত জীবন অত্যন্ত বর্নাঢ্য। তার বিরূদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসাটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। জানিনা সামিয়া কি করে এই ঘটনার দায় এড়াবেন! সামিয়া আর মারজান ছাড়াও যারা এই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না, তারা হলেন রিভিউ কমিটি। এটা নিশ্চিত যে রিভিউ কমিটির অবহেলার কারনে এই ঘটনা ঘটেছে। রিভিউ কমিটির দায়িত্ব ছিল প্ল্যাগিয়ারিজম নেই এটা নিশ্চিত করা। অথচ ১৯৮২ সালে বিখ্যাত জার্নালে ছাপা হওয়া একটি লেখার থেকে চুরি করা হয়েছে - এটাও তারা ধরতে পারেন নি। কি অদ্ভূত! তারা কি একেবারেই অযোগ্য, নাকি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।
বিষয়টির তদন্ত চলছে। এটাই আমাদের মনে এখনো আশা জাগিয়ে রেখেছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন তার সম্মান রাখতে পারে, দেরীতে হলেও সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে। আমরা চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন পৃথিবীর বুকে শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার আসন অক্ষুন্ন রাখতে পারে।
[উপরের ছবিটি সামিয়ার একটি বইয়ের ছবি যা নিয়েছি আমাজন থেকে। লিংক হল : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৭