"উই আর নন-ভায়োলেন্ট টু দেম, হু আর নন-ভায়োলেন্ট টু আস"। অনেকটা দম্ভের সাথেই অহিংস আন্দোলনের প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে যিনি সমসাময়িক কালে চরম আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি হলেন ম্যলকম এক্স। কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা মার্টিন লুথার কিং যখন সবাইকে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ে উতসাহিত করছিলেন, ম্যালকম তখন এটিকে অবহেলার সাথে পাশ কাটিয়ে যান তার এই বিখ্যাত উক্তির মাধ্যমে। তার ব্যক্তিত্ব, অসাধারন বাগ্মীতা ও আপোষহীন মনোভাব তাকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির শীর্ষে। তিনি সমালোচিত হয়েছেন কিন্তু তা তাকে মোটেও দমাতে পারেনি। তিনি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারীতে থাকলেও বিন্দুমাত্র আপোষ করেন নি নীতির প্রশ্নে। নিজের অবস্হানে তিনি ছিলেন অবিচল। কোনো বাধা বিপত্তিই তাকে শংকিত করে নি কখনও। যার মাশুল তাকে দিতে হয় আততায়ীর হাতে জীবন দিয়ে। তবে আততায়ী তার জীবন কেড়ে নিলেও পারেনি নীতিকে কেড়ে নিতে। তাই আজ নর্থ আমেরিকাতে ইসলামী আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে তাকেই গন্য করা হয়। তার অগনিত অনুসারী তার কর্মময় বৈচিত্রময় জীবনকে পৌছে দিয়েছে সাধারনের মাঝে, নূতন প্রজন্মের মাঝে।
ম্যালকম প্রথমে ন্যাশন অব ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই গ্রুপের চিন্তাভাবনা মূলধারার ইসলামের সাথে কিছুটা সাংঘর্ষিক। এটি মূলত কৃষ্ণাঙ্গদের সংগঠন। এই গ্রুপে তখন মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী সহ প্রায় সব বড় বড় ফিগাররা ছিলেন। আলী তখন ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ জানান এই ভাবে, "দিস ওয়ার ইজ এগেইনস্ট মাই রিলিজিয়াস বিলিফ।" আলীর পদক কেড়ে নেয়া হয়। তিনিও একরোখা - এসব থোড়াই কেয়ার করেন। পরে অবশ্য আলীকে তার পদক ফিরিয়ে দেয়া হয়। যা হোক, আমার এই পোস্ট মূলত ম্যালকমকে নিয়ে। আমি তাতেই আলোচনা সীমিত রাখব। নতুবা প্রত্যেকের জীবন নিয়েই বিশাল ইতিহাস লেখা যায়।
ম্যলকম ন্যাশন অব ইসলামে থাকা কালে হজ্জব্রত পালন করেন। এটিই তার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। তিনি অনুভব করতে পারেন ইসলামে সাম্যের অর্থ। ইসলাম যে কালো সাদা ফকির আমীরের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না, সেটি হজ্জের মাধ্যমেই অনুধাবন করতে পারেন। তিনি ন্যাশন ছেড়ে দেন এবং হয়ে যান সুন্নী মুসলিম।
তার এই নূতন যাত্রাকে শুরুতে অনেকেই ভালভাবে নেয় নি। আলীসহ প্রায় সবাই রয়ে যান ন্যাশনের ছায়াতলে। তিনি তা বলে দমে যাবার পাত্র নন। একাই আবার গুছাতে চান সব কিছু। কিন্তু তার সেই উদ্যোগ থমকে দেয় আততায়ীর বুলেট।
ম্যালকম সমসাময়িক কালে রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য হয়েছেন সমালোচিত। প্রেসিডেন্ট কেনেডির একজন নামকরা সমালোচক ছিলেন ম্যালকম। কেনেডি নিজেও কৃষ্ণাংগ অধিকারে বিশ্বাসী ছিলেন। তার সময়ে ইউনিভার্সিটি অব আ্যলাবামাতে কালোরা ভর্তি হবার সুযোগ পায়। কাজটা ছিলো বেশ কঠিন। কারন আলাবামার গভর্নর ওয়ালেস ছিলেন কালো আর সাদার একত্রীকরনের বিরোধী। তার সময়ে "ওনলি ফর হোয়াইটস" সাইনটি ছিল দৃশ্যমান। তার বিখ্যাত উক্তি, "আই ওয়ান্ট সেগরেগেশন টুডে, আই ওয়ান্ট সেগরেগেশন টুমোরো, আই ওয়ান্ট সেগরেগেশন ফর এভার।" কিন্তু কেনেডিও অনমনীয় ছিলেন। যার ফলে ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা এট টাস্কালুসাতে কালোদের অর্ন্তভূক্তি নিশ্চিত হয়। ওয়ালেসের বিরোধিতা সত্ত্বেও।
কিন্তু তা সত্ত্বেও কেনেডির সমালোচনায় ম্যালকম ছিলেন মূখর। ম্যালকমের কেনেডি বিরোধী এই ব্যাপারটিকে আমি কখনই সমর্থন করিনি কারন আমি নিজেও কেনেডির ভক্ত। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে কেনেডিও মিথ্যা বলেছেন তবে তা যুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। কেনেডির এই শান্তিপ্রিয় মানবতাবাদী ভূমিকা তাকে অনন্য করে তুলে। কিন্তু ম্যালকম বিভিন্ন ইস্যুতে তার সমালোচনা করে নিজেও হয়েছেন আলোচিত।
ম্যালকমের ইসলামী আন্দোলনের পেছনে যার অবদানকে গুরুত্ব দিতে হয় তিনি হলেন তার স্ত্রী এমা। এমাই প্রথমে ন্যাশন অব ইসলামের আভ্যন্তরীন সমস্যাগুলো তুলে ধরেন ম্যালকমের কাছে। এমার অকুন্ঠ সমর্থনেই ম্যালকম মূলধারার ইসলামে নিজেও সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং অন্যদের সম্পৃক্ত করেছেন।
ম্যালকমকে নিয়ে আমেরিকায় যে মুভিটি হয়েছে তাতে ম্যালকমের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ডেনজেল ওয়াশিংটন। আমার এই লেখাটি অনেক আগে দেখা সেই মুভির স্মৃতি থেকে নেয়া। ভুল ত্রুটি থাকলে মার্জনা চাইছি।
কস্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ১০:০৫