somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদ্রাসা শিক্ষা সমাচার। পর্ব-১

১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা কি? ইংরেজী শব্দ 'এডুকেশন' ও ল্যাটিন শব্দ 'এডুকেয়ার' হতে 'শিক্ষা' কথাটি চয়ন করা হয়েছে যার অর্থ হলো কাউকে কে শিক্ষিত করা বা লালন পালন করা। শিক্ষা মানুষের আচরণের উন্নতির লক্ষ্যে জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, কৌশল ইত্যাদি বিষয়ের বাঞ্চিত পরিবর্তন আনয়ন করে। অর্থাৎ এক কথায়, 'শিক্ষা হলো এমন এক পক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষের আচার-আচরণের অর্থাৎ জ্ঞানে, মনোভাবে, দৃষ্টিভঙ্গিতে, দক্ষতায় ও নৈপুণ্যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সাধিত হয়ে থাকে।' অন্য ভাবে বলতে গেলে, মানুষ যা কিছু শিখেছে তা মূলত প্রকৃতি থেকেই শিখেছে তাই প্রকৃতির বিরুদ্ধে লরাই কিরে যে জ্ঞান অর্জন করা হয় তা ও শিক্ষা।
শিক্ষার উদ্দেশ্য কি?
১. সক্রেটিসের মতে ''সত্যের আবিষ্কার ও মিথ্যার বিতাড়ন''
২. প্লেটোর মতে ''মনের ও দেহের পরিপূর্ণ উন্নতি ও বিকাশ সাধনই শিক্ষার উদ্দেশ্য''
৩. এরিস্টটল বলছেন ''সুপ্ত শক্তির বিকাশ সাধনই শিক্ষার মূল লক্ষ''।
৪. হার্বাট এর মতে ''শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুর সম্ভাবনা ও অনুরাগের পূর্ণ বিকাশ এবং তার চরিত্রের আকাঙ্ক্ষিত আত্নপ্রকাশ।''
৫. ডিউই বলছেন ''শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে মতবাদের ধারাবাহিক পুনর্বিন্যাস।''

এবার আসি মাদ্রাসা শিক্ষায়, মাদ্রাসা বলতে সাধারণত ইসলাম ধর্মভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কে বোঝায়। 'মাদ্রাসা' আরবি শব্দ, যার অর্থ 'বিদ্যালয়'। একটি দৈনিক পত্রিকায় ''মাদ্রাসা শিক্ষা'' প্রবন্ধে কথা সাহিত্যিক বশির আল হেলাল লিখেছেন, ''আরবি দারস শব্দটির অর্থ শিক্ষার পাঠ, বক্তৃতা। মাদ্রাসা শিক্ষালয়, পাঠশালা, স্কুল। দারস ও তদ্ঘটিত শব্দগুলো যেহেতু আরবি, আরব অঞ্চল থেকে ইসলাম বিকশিত ও প্রচারিত হয়, আমাদের এসব বৃহত্তর অঞ্চলে মাদ্রাসা বলতে ক্রমে ক্রমে ইসলামি বিদ্যালয় হয়ে উঠে''
মাদ্রাসা শিক্ষা ভাববাদের উপর নির্ভরশীল, এই শিক্ষায় শুধু মাত্র ইসলাম ধর্মের ইতিহাস নবী রাসুলদের জীবন, ইসলামের দৃষ্টিতে জীবন বিধান এবং জীহাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এই শিক্ষার সাথে আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, সমাজ, সংস্কৃতির সাথে সম্পর্ক খুব নগণ্য। এই শিক্ষার মূল ভাষা আরবি। মূল ভাষা আরবি হওয়ায় মাতৃ ভাষার প্রতি আগ্রহ কম থাকে এবং আন্তর্জাতিক ভাষার তো মূল্যই থাকে না।
ইসলাম ধর্ম শিক্ষা কিংবা ইসলাম ধর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার বিষয়, বিধি, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের ১৪০০ বছর ধরে একই রকম ছিল না এবং ভিন্ন ভিন্ন দেশে তার যেমন ভিন্নতা আছে, আবার একই দেশের ভিতরেও নানা ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান। নবী ও খলিফাদের আমল থেকেই প্রথমে নতুন ধর্ম হিসাবে ইসলামের যৌক্তিক ব্যাখা, ঐতিহ্যগত গৌত্রীয় সংঘাতের বদলে নব সম্প্রদায়গত মেলবন্ধন ও সেই আলোকে মানবিকতা, অন্যান্য ধর্ম বিশেষ বিশেষ করে খ্রিষ্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক, অগ্নি উপাসক ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মাচরণের সাথে পার্থক্য এবং সম্পর্ক বিষয়ক আলোচনা তাবু, ঘর কিংবা পর্বতের গুহা-ছায়ার মধ্যে হতো। তারপর মসজিদকেন্দ্রিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রধানত মৌখিকভাবে দেওয়া হতো।
খলিফা ওসমানের সময়কালে মুসলমানদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ কোরান লিখিত রূপে প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে কোরান পাঠ, আয়াতসমুহ কণ্ঠস্থ করা, লিখন রীতি আয়ত্ত করা, উৎকর্ষ সাধন, ইসলাম ধর্মভিত্তিক জীবনাচরণ নীতি-আদর্শ, মুল্যবোধ ইত্যাদি শিক্ষার বিসয়বস্তু হয়ে উঠলো। মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারের সাথে সাথে সামন্তীয় ইসলামী শাসন-প্রশাসন ও তার ও তার প্রতি অনুরাগের ধরন, হাদিস ও বহুবিধ নৈতিক উপদেশবলী তার সাথে সম্পৃক্ত হয়। ইসলাম ধর্মে নবীর উপদেশবানীর মধ্যেই রয়েছে বিদ্যা শিক্ষার জন্য সুদূর প্রাচীন চীনদেশে যাওয়ার কথা। ফলে ইসলাম ধর্মের একটা কাল পর্যন্ত তার তাগিত ছিলো। এই পর্যায়ে গ্রিস, রোম ইত্যাদি প্রাচীন সভ্যতার দেশসমূহের দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদির বিকাশ হয়েছিল। এ সমস্ত বিষয় আত্নীকরনণের একটা প্রচেষ্টাও মুসলমানদের মধ্যে ছিলো। যার ফলে পুরনো সকল ধর্ম ও তৎকালীন সমাজ সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা নতুন এই ধর্মের আবেদন উদার চেতনা নিয়ে তুলনামূলকভাবে অবরুদ্ধ ও পশ্চাৎপদ বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। অষ্টম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বছর আরব ভূখণ্ডে মুসলমানদের দ্বারা জ্ঞান ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল।
যদিও মাদ্রাসা শিক্ষা ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা, কিন্তু আমাদের এই উপমহাদেশে মুসলিমরা মাদ্রাসা শিক্ষা প্রথম আনতে পারেনি। ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পেছনে ইংরেজদের উদ্দেশ্য কি ছিল তা ওয়ারেন হেস্টিংস এর মনোভাবে বোঝা যায়, তিনি বলেন ''কোলকাতার মুসলমানদের তুষ্ট করতে মুসলমান ভদ্রলোকের সন্তানদেরকে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ও লোভনীয় পদগুলোর উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে, এবং আদালতের কর্মকর্তাদের যেসব পদ খালি হবে সেগুলোতে মাদ্রাসার সার্টিফিকেটধারী যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতে হবে।''
আসছে দ্বিতীয় পর্ব..................
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাল ভারত

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৩:৫২


পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের পাহাড়ি অঞ্চলের কাছে একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এ হামলায় এক শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুম্মাবার

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

জুম্মাবার
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

প্রতি শুক্রবার ইমাম এর নেতৃত্ব
মেনে নিয়ে আমরা মুসলিমরা
হই একত্রিত, হই সম্মিলিত
ভুলে যাই সবাই হৃদয় ক্ষত!
খুতবা শুনি আমরা একাগ্রচিত্তে
চলে আসি সকলে একই বৃত্তে।
কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মসজিদ
ঐক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসলে "ওরফে গফুর" এর উদ্দেশ্য কি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭

আসলে "ওরফে গফুর" এর উদ্দেশ্য কি....


'ওরফে গফুর' এর লেখা আমি বহুবছর থেকেই পড়ি। ওনার লেখা পড়ে ওনার মতবাদ, আদর্শে আমি বিভ্রান্ত হয়েছি বারবার। কারণ, কোন এক পত্রিকায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষেরা একজোট হতে চাই

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৭ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫১



ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে কি করতে পারি আমরা? একজন নীতিবান, যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে একক এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। চলুন নিচে দেখা যাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×