আতাহারের এই মূহুর্তে টাইম মেশিনে চড়ে শায়েস্তা খাঁনের আমলে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। তার পকেটে বর্তমাণে দুই টাকার দুটি নোট পরে আছে। বর্তমাণ বাজারে চার টাকায় এক কাপ চা ও পাওয়া যায়না। শায়েস্তা খাঁনের আমলে চলে গেলে সে চার টাকায় রাজার হালে আজকের দিনটা কাটাতে পারতো। কিন্তু ইচ্ছের জন্মই হয় অপূর্ণ থাকার জন্য ।
আতাহার পকেট থেকে দুই টাকার নোট দুটি বের করলো। গম্ভীর মুখে বঙ্গবন্ধু তাকিয়ে আছেন। তার মনে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু যেন তার কষ্টে ব্যাথিত বোধ করছেন। এক সময় দু টাকার নোটে ছিল দোয়েল পাখির ছবি। আতাহারের ছোট বোন মিলি তাকে ধাঁধা জিজ্ঞেস করতো, "বলতো ভাইয়া দুই টাকায় একটা দোয়েল পাখি কিনবি কিভাবে?" আতাহার গম্ভীর মুখে মাথা চুলকে বলতো , না পারছিনা তো। তখন মিলি তাকে আনন্দের সহিত উত্তর বলতো। এখন দোয়েল পাখিও নেই ধাঁধাও নেই। এখন বঙ্গবন্ধু আছেন, কিন্তু তাঁকে তো আর দুই টাকায় কেনা যায়না।
আতাহার পেট ক্ষুধায় চো চো করছে। সে এই মূহুর্তে একটা কবিতা মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ক্ষুধা কোন সাহিত্য বোঝেনা। চার টাকায় কিছুই করা যাবে না। এক কাজ করা যায়, কোন হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে বলা যায়, ভাই আমার কাছে কোন টাকা নেই। কিন্তু এইসব ক্ষেত্রে রিএকশ্যান ভালো হওয়ার কথা নয়।
আতাহার এখন একটি কমিউনিটি সেন্টার খুঁজছে। বর পক্ষ কিংবা কনে পক্ষের হয়ে খেয়ে আসলে কেউ বুঝতেই পারবেনা। জামা কাপড় বেশী ভালো না হলেও চলার মত। ভাগ্য ভালো অল্প দূরত্বেই সে পেয়ে গেল। আতাহার এমন ভঙ্গীতে ঢুকছে যেন এখানেই তার আসার কথা ছিল।
খাবারটা ভালো হয়েছে। আতাহার বিয়ের পাত্র পাত্রীকে দেখবে কিনা ভাবছে। পাত্রীকে আতাহারের পরিচিত মনে হচ্ছে। নীতুর মত লাগছে। আতাহার একটু এগিয়ে গেল। হ্যা, নীতুই বসে আছে। একদিন নীতু বলেছিল বিয়ের শাড়ী তার পাশেই বসবে। আতাহারের দ্রুত বের হয়ে রাস্তায় চলে আসলো। তার তীব্র বমি পাচ্ছে আর মাথায় বইছে কবিতার ঝড়। সমুদ্র গুপ্তের কবিতা চীৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে তার,
'পাতাদের ঝরা কবে নেমেছিল, পাতা জানে,
আর জানে হাওয়া,
কিন্তু কিছুই রাখেনি মনে।'
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৫১