আমার বন্ধু মতিন উদ্দীন চৌধুরী। লেখক মতিন উদ্দীন। কিংবা আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, চটি গল্প লেখক মতিন উদ্দীন। ভানুসিংহ ছদ্মনামে সে একটি এডাল্ট সাইটে টাকার বিনিময়ে গল্প লেখে। ভানুসিংহ ছদ্মনাম নেওয়ার কারণ হলো, মতিন চটি সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ হতে চায়। তার মতে এগুলোও সাহিত্যের একটা অংশ। শুধু অংশই নয়, লেখার মাধ্যমে একজনকে উত্তেজিত করার কাজটা নাকি অনেক কঠিন। আমি এই মুহুর্তে তার বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি। কয়েকবার কলিংবেল চাপার পর মতিন এসে দরজা খুললো।
-ভাণুসিংহ সাহেব কেমন আছেন?
-তুই এত সকালে কি জন্যে?
- না তোর সাহিত্যচর্চার খোঁজ নিতে আসলাম।
-ভালোই চলছে, প্রচুর পাঠক, প্রচুর টাকা। কফি খাবি?
-নিয়ে আয়।
মতিন কফির মগ আমার হাতে দিল।
-আচ্ছা মতিন, এইসব নোংরা গল্প লিখতে তোর খারাপ লাগেনা?
-তোরা পড়ছিস বলেই লিখছি।
-আর আমি যদি বলি যে, তোরা লিখছিস বলেই লোকজন পড়ছে।
-আসলে একে অপরের পরিপূরক।
মতিনের একটা ঘটনার কথা বলে নেই।
মতিন তখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। হঠাৎ একদিন আমার হোস্টেলে এসে উপস্থিত। হাতে একটি খাম। সে লজ্জিত ভঙ্গীতে খামটা আমার হাতে দিল।
-কি এটা?
-বই। আমার একটা কবিতার বই বের করেছি। আজই হাতে পেলাম। তাই তোর জন্য দুই কপি নিয়ে আসলাম।
-কোন প্রকাশণী ছেপেছে?
-গত এক বছরের টিউশনির টাকা জমিয়ে বইটা বের করেছি। বইটা পড়িস কিন্তু।
মতিনের সেই কবিতার বইয়ের এক কপিও বিক্রি হয়নি। শ তিনেক সে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের মধ্যে বিতরণ করেছে। বইমেলায় গিয়ে কয়েকদিন চেষ্টা করেছে, কোন স্টলেই রাখতে চায়নি। তারপর মতিন আর কোন বই বের করেনি। একদিন আমাকে সে জানালো যে, সে ভানুসিংহ ছদ্মনামে এডাল্ট সাইটে লিখছে।
-কবিত শুনবি?
-হুম।
মতিন তার কবিতার বই থেকে একটি কবিতা আবৃত্তি করতে থাকে। বাইরে অল্প অল্প বৃষ্টি নামছে। কফির ধোয়ায় ভাসছে মতিনের কবিতা। মতিন উদ্দীন একদিন যে, রবীন্দ্রনাথ হতে চেয়েছিল কবিতা লিখে। বৃষ্টি বাড়ছে, মতিনের কবিতা আর কফির ধোয়া যেন এই বৈশাখের বৃষ্টিতে ভিজতে চাচ্ছে।