somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি

২৫ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সিনেমায় কোনো আগ্রহ খুব একটা ছিলো না , অভিনয়ে করে পুরো সময়টা পার করতে চেয়েছিলেন থিয়েটারে-ই, যদিও সেখানে এক-ই রোল টানা প্লে করতে হতো , তবুও তার কাছে ঐটা-ই ভালো লাগতো । সেই সময়ে মঞ্চ নাটকে দর্শক বেশি পছন্দ করতো কমেডি জনরা । আর এই কমেডি রোলে-ই সবচে বেশি করেছেন তিনি(যদিও এই রোল প্লে করতে মোটেও পছন্দ করতেন না ) । এমনও হয়েছে টানা পঞ্চাশের উপরে শো করেছেন ঐ এক-ই রোলে । কাদতে খুব ভালো পারতেন, তিনি যে থিয়েটারের হয়ে কাজ করতেন ঐ থিয়েটারে তার চেয়ে ভালো কেউ কাদতে পারতো না , কাদতে পারার প্রতিভা থাকলে দর্শক তাকে ঐ চরিত্রে খুব একটা চাইতো না কারণ তার কমেডি টাইমিং খুব ভালো ছিলো ।




৫০টাকাকে ৫০০টাকা করতে গিয়ে ঐ ৫০টাকাও হারিয়ে ফেলেন বন্ধুর বোকামীর কারণে , ৫০টাকার কষ্ট ভুলে যেতে সন্ধ্যায় ঐ বন্ধু-ই তাকে নিয়ে যায় থিয়েটারে শো দেখতে , আর এভাবে-ই ঢুকে পড়েন থিয়েটারে । তিনি এখন যে পর্যায়ে আছেন তার পুরো ক্রেডিট তিনি তার ঐ বন্ধুকে দেন, যদি সে বন্ধু তাকে থিয়েটারে না আনতো তাহলে তিনি হয়তো বাকি রুমমেটদের মতন গ্রামে চলে যেতেন আর গ্রামে দুটো বিজনেস-ই চলে হয় গান্না ( আখ) আর নাহয় GUN । থিয়েটারে মূলত মানোজ বাজপাইয়ের অভিনয় তাকে বেশি মুগ্ধ করতো । মানোজ বাজপাইয়ের অভিনয়-ই তার উপর প্রভাব ফেলে । এরপর থেকে তিনি ঐ থিয়েটারে কাজ শুরু করে দেন ।
থিয়েটারে সাত বছর টানা অভিনয় করার পর একদিন এক কাস্টিং ডিরেক্টর আসেন তাদের থিয়েটারে । থিয়েটার পরিচালকের সাথে কথা বলে বলেন যে তার এমন একজন এক্টর দরকার যে ভালো কাদতে পারে । এভাবে-ই সারফারোশ সিনেমায় কাজের সুযোগ পান(মূলত এই রোল যার প্লে করার কথা ছিলো সে না থাকায় এই রোল তিনি পেয়ে যান) । টর্চারিং রোলে খুব ভালো আউটপুট দিতে পারতেন এই জোড়ে-ই টানা বেশ কয়েকটা সিনেমা ঐ এক-ই রোল থাকে প্লে করতে দেখা যায় । সারফারোশের আগে অনেক টিভি সিরিয়ালে কাজ করলেও সেগুলোতে তার স্ক্রিনিং এতো-ই কম ছিলো যে এক সময় সেসব থেকে তার মন উঠে যায় । সারফারোশে প্রায় মিনিটখানেক অভিনয় করে নিজের ভেতরে এক প্রকার কনফিডেন্ট ফিরে পান যা ঐ টিভি সিরিয়াল করার পর হারিয়ে ফেলেছিলেন ।



ওয়াচম্যান হওয়ার ঠিক আগে ছিলেন কোনো এক পেট্রোক্যামিক্যাল কোম্পানীর ক্যামিস্ট । কিন্তু ক্যামিস্ট্রির বিক্রিয়াগুলো দেখে তার খুব ভয় লাগতো , খুব ভয়ে ভয়ে ল্যাবে কাজ করতেন । কোনো বিক্রিয়া করার পূর্বে তার সহকর্মীদের তিন/চার করে বিক্রিয়ার নোট দেখাতেন যে ইকুয়েশন ঠিক আছে কি না , এর কারণ ছিলো ক্যামিস্ট্রি ল্যাবে তার মন কখনো-ই থাকতো না । দিনের বেলা যখন ল্যাবে থাকতেন তখনও সন্ধ্যার থিয়েটারে কিভাবে রোল প্লে করলে দর্শকের মন জায়গা করতে পারবেন তা ভাবতেন । এই ভয়ের কারণে-ই ঐ চাকুরী ছেড়ে দেয়া । তিনি মনে করেন ওয়াচম্যানের চাকরী ইজ বেটার দ্যান ক্যামিস্ট ।

আনুরাগ কাশ্যাপের একটা অভ্যাস ছিলো যেসব এক্সট্রাদের অভিনয় তার কাছে ভালো লাগতো তিনি তাদের বলতেন "আমি আপনাকে আমার সিনেমায় কাস্ট করাবো" । এমনিতে-ই সারফারোশের অভিনয় তার মনে কনফিডেন্ট গ্রো করে দিয়েছিলো তার উপর আনুরাগের দেয়া আশ্বাস সিনেমার প্রতি টানকে আরো জোরালো করে দেয়, যে কিনা সিনেমায় আসতে চায়নি সে এখন ছুটছে রোলের পেছনে । কাস্টিং ডিরেক্টরদের সাথে খুব ভালো সম্পর্কে রাখতেন । এমনও হয়েছে কাস্টিং ডিরেক্টর তাকে নিয়ে গেছেন সিনেমার পরিচালকের কাছে, পরিচালক তাকে দেখে বলে এইটা কে ? তিনি বলেন উনি এক্টর(এক্সট্রা) । পরিচালক বলেন ডিরেক্টর বললে হয়তো বিশ্বাস করতাম । এভাবে-ই রিজেক্ট হতে হতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন রিজেকশনের সাথে ।



সিনেমায় প্লে করা নাওয়াজ উদ্দিনের বেশির ভাগ রোল-ই কোনো না কোনো ভাবে রিয়েল কারো লাইফ থেকে ইন্সপায়ার্ড । যেমন দ্য লাঞ্চ বক্সে করা "শেখ" ক্যারেক্টার পুরোপুরি তার এক রুমমেট থেকে ইন্সপায়ার্ড । সিনেমায় দেখা যায় নাওয়াজ যখন-ই ইরফান খানের সাথে দেখা করে তখন-ই ইন্ট্রোডিউসিং এক প্রকার এন্ট্রি সাথে অদ্ভুত এক প্রকার নম্রতা যা তার ঐ রুমমেট থেকে ধার করা । তার ঐ রুমমেটও এক্টর হওয়ার জন্য-ই মুম্বাই আসে । এই সিনেমার পরে যখন তার ঐ বন্ধু কোথাও অডিশন দিতে যায় তারা বলে "ভাই প্লিজ এই রোল করবেন না এইটা নাওয়াজ উদ্দিন দ্য লাঞ্চ বক্সে করেছেন পারলে নতুন কিছু করে দেখান" । এছাড়া GOW-এ করা ফায়জালের খানের রোল প্লে করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে । প্রথম কয়েকদিন তিনি তার ক্যারেক্টার ধরতে পারেননি । বেশ ভয়ে ছিলেন এই চরিত্র নিয়ে , এরপর যখন রিয়ালাইজ করলেন তিনি-ই ফায়জাল খান তারপর তার জন্য খুব কম রিটেক নেয়া হয়েছে GOW সিনেমায়, বেশির ভাগ শট একবারে ওকে করেছেন ।



সিনেমা চয়নের ক্ষেত্রেও বেশ সাবধানী নাওয়াজ । টিপিকাল স্টোরি নিয়ে কেউ অফার করলে সরাসরি "না" করে দেন । GOW এর পরে প্রায় দেড়শ এর মতন সিনেমার অফার আসে তার কাছে । কাহিনী-GOW-দ্য লাঞ্চ বক্স-কিক-বাজরাঙ্গি ভাইজান দিয়ে নাওয়াজ উদ্দিন উপরে উঠলেও patang (2011) সিনেমার মাধ্যমে প্রথম লিড রোলে আসেন নাওয়াজ ।

সিনেমায় আসার আগে মাত্র পাচটি সিনেমা তার দেখা ছিলো । তাহলে অভিনয়ের পোকা কিভাবে মাথায় ঢুকলো ? তার গ্রামে চলতো সব সি গ্রেডের সিনেমা, ঐ সিনেমার নায়কগুলোকে দেখে খুব ইচ্ছা করতো যদি নায়ক হতেন তাহলে কতো মজা-ই না হতো । গ্রাম থেকে ৪৫কিলোমিটার হেটে যেতেন ঐসব সিনেমা দেখতে, বাসায় এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে নায়কের ডায়লগ দিতেন । এক এসময় ভাবলেন তাদের গ্রামের সিনেমা যদি এমন হয় তাহলে মুম্বাইয়ের সিনেমা তো আরো বেশি উপভোগ্য । NSD থেকে পাস আউট হওয়ার স্ট্রিট প্লে করতেন । পাচ/ছয়জনের গ্রুপ ছিলো তাদের, তারা বিভিন্ন গভমেন্ট প্রোডাক্ট বিভিন্ন জায়গায় এড করতেন, মজার ব্যাপার হলো তিনি কখনো সামনে থাকতেন না, সামনে থাকলে হয়তো NSD এর কোনো স্টুডেন্ট যদি দেখে ফেলে তাহলে বিব্রত হতে হবে । হয়তো এইটা ভাববে কাজ না পেয়ে স্ট্রিট প্লে করছে NSD থেকে পাস করে । চার বছরের মতন স্ট্রিট প্লে করেন তারপর চলে যায় মুম্বাই । এরপর মুম্বাইয়ের স্ট্রাগল । মঞ্চে করা রোলগুলো প্রথম দিকে খুব-ই ছোট ছিলো , চার/পাচ লাইনের ডায়ালগের জন্য মুখিয়ে থাকতেন সব সময় । যখন একটু ভালো ডায়ালগওয়ালা রোল পেতেন ঐ রোল নিয়ে-ই সারাদিন ডুবে থাকতেন । ১৭/১৮ঘন্টা নিয়মিত প্রাক্টিস করতেন, শেকসপিয়ারের নাটকের বিশালাকার ডায়ালগ অনর্গল বলে ফেলতেন বিভিন্ন অডিশন । শুধুমাত্র আউটলুকের কারণে রিজেকশনের খাতায় নাম উঠে যেতো



The Theory of Everything এর স্টেফেন হকিং তার খুব প্রিয় চরিত্র , সুযোগ পেলে এই চরিত্র অভিনয় করার ইচ্ছা আছে আর The Wolf of Wallstreet এ লিও এর অভিনয় তাকে ব্যাপক ভাবে ইমপ্রেস করে, লিও এর এক্টিং লেভেল আর এনার্জি অন্য সব সিনেমা থেকে আলাদা মনে হয়েছে এই সিনেমায় । সব এক্টরের ড্রিম থাকে কোনো এক চরিত্র প্লে করার, এই প্রসঙ্গে মুগলে আযাম সিনেমার রিমেক হলে সেখানে সেলিমের চরিত্রে অভিনয় করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাওয়াজ ।

এই অভিনেতা বলিউডের সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে অভিনয়ের জোরে...
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×