Genre : Drama | Romance
ভালোবাসার ব্যাপার গুলো সব সময় কেন জানি একটু অন্য রকম হয়… ব্যাপার গুলো ঠিক কেমন হয় তা আসলে বলে বা লিখে বোঝানো একটু কঠিন… ব্যাপার গুলো জাস্ট অনুধাবনীয়… আবার এই ভালোবাসার ব্যাপার-স্যাপার গুলোর শুরুটা খুব ইন্টারেস্টিং… কতো কাহিনি কতো অপ্রস্তুত ঘটনার মাধ্যমে একটি ভালোবাসার গল্প নির্মিত হয়… এই রকম-ই একটি অপ্রস্তুত ঘটনা দিয়ে পরিচালক Ritesh Batra তার লেখনির যাদু দিয়ে তৈরি করেছেন “দ্য লাঞ্চবক্স"
“প্রেম-ভালোবাসার কোনো বয়স নাই”এই বানীর আবারও চাক্ষুস প্রমাণ পেলাম মুভিটা দেখে… মুভিতে একটা ডায়ালগ আছে যা সম্পূর্ণ মুভির শানে নূযূল…”কোনো কোনো সময় ভুল পথও আমাদের সঠিক জায়গায় নিয়ে যায়”… এই ডায়ালগ-ই মুভির থিম ডায়ালগ বলা যায়…
একজনের স্ত্রী নেই(মারা গেছে),আরেক জনের স্বামী থেকেও না থাকার মতো…তারা ২জন হলেন ইরফান এবং নামরিতা কৌর… ইরফান প্রায় বয়স্ক একজন মানুষ, যিনি আর কিছুদিন পর চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করবেন আর ঐদিকে নামরিতা বিবাহিতা একজন নারী… যিনি সর্বদা তার স্বামীর একটু ভালোবাসা,স্নেহ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল… তিনি সবসময় চেষ্টা করেন তার স্বামীকে খুশি রাখতে… তার কাছে স্বামীকে খুশি করার একটা-ই অস্ত্র আছে…আর তা হলো তার রন্ধন প্রতিভা… সারাদিন এই নিয়ে-ই ব্যস্ত থাকেন… তো ঘটনা ক্রমে একদিন নামরিতার স্বামীর লাঞ্চবক্স চলে যায় নারীহারা পুরুষ ইরফানের কাছে… তো যেকোনো ভাবে নামরিতা বুঝতে পারে যে তার স্বামীর লাঞ্চবক্স অন্য কারো কাছে যাচ্ছে… নামরিতা এবার লাঞ্চবক্সের সাথে একটা চিঠি পাঠায়… যাতে ইরফান বুঝতে পারে যে সে অন্য কারো লাঞ্চ নিজের মনে করে খাচ্ছে্ন… ইরফানও নাদান পারিন্দের মত চিঠির জবাবে রান্নার প্রশংসা না করে উলটো জানায় যে খাবারে লবণ আর ঝাল পরিমাণ মতো হইনি . যদিও নামরিতা আর ইরফান ২জন-ই বুঝতে পারছি্লেন যে কাজটা ঠিক হচ্ছে নাহ… কিন্তু কি আর করার তারাও তো রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ তাদেরও তো মন চাও নিজের মনের কথা কারো সাথে শেয়ার করতে… এভাবে প্রতিদিন লাঞ্চবক্সের সাথে সাথে চলতে থাকে চিঠি আদান-প্রদান… চলতে থাকে একাকিত্ব দুরীকরণের প্রয়াস… কিন্তু এর শেষ কোথায়…!!!!!!
পরিচালনায় যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন পরিচালক সাহেব… চিত্রায়নও যথেষ্ট প্রশংসার দাবীদার… সব চাইতে মজার ব্যাপার হলো মুভিতে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নেই … জাস্ট সঞ্জয় দত্তের “সাজান” মুভির একটা গান কাহিনীর প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়… মুভিটা দেখতে দেখতে এমন ভাবে ডুবে গিয়েছিলাম যে অর্ধেক দেখার পর মনে পড়েছে মুভিতে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নাই…
মুভির ডায়ালগও বেশ ভালো ছিলো… লাঞ্চবক্সে করে যতোবার ইরফানের কাছে চিঠি আসতো তখন কেন জানি মনে হইতো চিঠিগুলো আমার কাছে আসছে…আমি চিঠিটা পড়ছি ,আমি-ই চিঠির জবাব দিচ্ছি… এই সব-ই পরিচালক সাহেবের খেলা…মুভির কাস্টিং টাও খুব ভালো হয়েছে… ইরফান খানের কথা কি বলবো… সবার সাথে আমিও তাল মিলিয়ে বলবো বলিউডের তিন-খান আছে… কিন্তু আমার লিস্ট একটু ব্যতিক্রম… আমার লিস্টে এই তিন খান হলেন আমির,শাহরুখ,ইরফান…
সত্যি just amazing একজন অভিনেতা… তার ডায়ালগ ডেলিভারি…চাল-চলন…এক্সপ্রেশন সব কিছু-ই একটু অন্য লেভেলের… একজন বয়স্ক প্রেমীকের চরিত্র তাকে জটিল মানিয়েছে… তার সাথে সাথে নামরিতাও খুব ভালো করেছেন… আরেক জন অভিনেতার কথা বলবো যার আমি সেরাম ফ্যান…তিনি হলেন নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিক… কবির খানের new York মুভিতে তার কিছু সময়ের অভিনয় দেখে আমি তার ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম, তারপর বাকিটা ইতিহাস… এই মুভিতেও তিনি যথেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন… মুভির প্রথম দিকে নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিক যত বার এন্ট্রি করেছেন, ঠিক ততবার-ই খুব হাসি আসছে(তার এন্ট্রি করার স্টাইল দেখে)… পরের দিকে মোটামুটি সিরিয়াস অভিনয় করেছেন…
মুভিটা দেখতে দেখতে কেন জানি একসময় মনে হয়েছে আমি বলিউডের কোনো মুভি দেখছি নাহ… মনে হচ্ছে কোনো ইরানী মুভি দেখছি… জাস্ট মুভির মেকিং-ই এই ফিল দিতে পেরেছেন… আমরা অনেকে-ই হয়ত জানি যে এই মুভি Asia Pacific Screen Awards আর Asia-Pacific Film Festival-এ বেস্ট Screenplay এওয়ার্ড পেয়েছে… Screenplay এওয়ার্ড ছাড়াও এই মুভি আরো অনেক গুলো ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায়…
যারা মুভিটা এখন অব্দ্যি দেখেন নাই আশা করি তারা তাদের করণীয়তা সম্পর্ক অবগত হয়ে গেছেন… এইটা বলিউডের অন্যতম মাস্টারপিস বললেও ভুল বলা হবে নাহ…
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩