[ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অগ্নিসংযোগ, হেফাজত কর্তৃক]
মুজিববর্ষ, মুজিবশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী সবমিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। ১৭ মার্চ থেকে ভিভিআইপিদের চাপে ঢাকার জনজীবন প্রায় বিধ্বস্ত বলতে হয়। তবুও উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ অনুষ্ঠান। কিন্তু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে বলতে হয়। কিন্তু সমস্যা এক জায়গায়, মোদিকে আনা যাবে না। এ নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে চাপাচাপি, মারামারি, কাটাকাটি সে কী অবস্থা। বলতে গেলে পুরো লেজেগোবরে একাকার। (কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার, সরকার কোনভাবেই এ ব্যাপারটাকে পাত্তা-ই দিলো না। একটি দেশের অগ্রযাত্রায় সরকারের এ ধরণের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। সব ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাতে গেলে আসল কাজ বাদ পড়ে যায়)।
মোদির প্রশংসা করছি না। মোদি কেমন মানুষ তা আমার চিন্তার বিষয়ও নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী এদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছে, আমাদের উচিত তার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা। না পারলে অন্তত বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি না করা।
অপরদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ব্যক্তি মোদিকে দাওয়াত দেয়া হয়নি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। ক্ষমতায় মনমোহন বাবু থাকলেও তাকেই আনা হত, সেক্ষেত্রে মোদি নিঃসন্দেহে দাওয়াত পেত না।
ধর্মীয় উগ্রতায় মোদির বদনাম বেশ স্পর্শকাতর। বলতে গেলে ভয়াবহ ব্যাপার। অনেকে মোদিকে কসাই নামে ডেকে থাকে। মোদি উগ্র, মনমোহন সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা নিয়ে চলে, গান্ধীও সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা লালন করতেন, নেহেরুও ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক ছিলেন। কিন্তু ইন্ডিয়া দুভাগ হয়েছিলো কেন?
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিলো না তাই। হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই তাদের সাথে টিকে থাকা মুশকিল ছিলো। অবশেষে বিচ্ছেদ। এক দেশ। দুভাগ। ভারত পাকিস্তান। এই ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ আজকালকার বিষয় নয়। এটি কয়েকশত বছরের ইতিহাস। বলতে গেলে প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস। পৃথিবীর ইতিহাসেও ধর্মীয় উগ্রবাদ মারাত্মক বিষফোঁড়ার ভূমিকা পালন করে চলেছে আজ অবধি। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই।
মোদিকে পছন্দ না হতে পারে। তাকে না আনার ব্যাপারে এটা নিয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করা যেত, স্মারকলিপি দেয়া যেত, সংবাদ সম্মেলন করা যেত। কিন্তু না, বাংলাদেশের উগ্রগ্রুপ ধরেছে সেই চিরচেনা পথ। ‘জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’।
বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপ্রিয় মানুষ।
কিন্তু আজ পর্যন্ত শান্তির নমুনা কোন দল দেখায়নি। সকলের দাবী আদায়ের জন্য জ্বালাও পোড়াও করতেই হবে। ভাংচুর করতেই হবে। হরতাল অবরোধ দিতেই হবে। অগ্নিসংযোগ করতেই হবে। কিন্তু কেন?
দাবী আদায়ের শান্তিপূর্ণ পথ নেই?
মোদি গুজরাটে উগ্রতা দেখিয়ে মানুষ মেরেছে। আর আমাদের মহান মোল্লারা সেই উগ্রতার বিপক্ষে শান্তির প্রসার ঘটাচ্ছেন উগ্রতা দিয়েই। ব্যাপারটা হলো,
দু’দেশ যুদ্ধে জড়িয়েছেঃ
- কেন?
- শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
শান্তি আনতে হয় যুদ্ধ করে। সেটা কেমন শান্তি বুঝতেই পারছেন। এ শান্তির পদ্ধতিই ভিন্ন।
মোদি যেমন তার উগ্রতার জন্য নিন্দনীয়, অনুরূপ বাংলাদেশী উগ্র মৌলবাদও নিন্দনীয়।
কেউ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভাংচুর করছে, আর কেউ নিজের সম্প্রদায়ের জন্য জ্বালাও পোড়াও করছে। দুটার উদ্দেশ্য এক। উভয়ই নিজের জন্যই করছে।
কুইজঃ
তাহলে এখানে কে সেরা?
ক) মোদি
খ) হেফাজত
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:৫২