আমেরিকাতে সমকামী বিবাহের বৈধতা দিয়ে বিল পাশ হয়েছে। ব্যাস, ওমনি হৈহৈরৈরৈ পরে গেল। ভালোবাসার জয়জয়কার আর রংধনুর ছড়াছড়ি। যারা এ নিয়ে এত মাতামাতি করছে এদের সবাই-ই উদার এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার লোক হিসেবে পরিচিত, অথবা কিঞ্চিত বাম ঘরনার। সেক্সচুয়াল মাইনোরিটির দোহাই দিয়ে চলছে সমকামীতার পক্ষে লড়াই। অথচ সবাই বেমালুম ভুলে গেছে যে এইটা আসলে আমেরিকা -- যে আমেরিকা মানবাধিকার লঙ্গন করেছে বহুবার, সামান্য অজুহাতে আক্রমন করেছে অনেক দেশে, এবং এই সেদিনও যে দেশে পুলিশের গুলিতে "কালো মানুষে"র মৃত্যু হয়েছে।
সমাকামিতার পক্ষে বার বার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণের দোহাই দেয়া হলেও আদপে কি এতে ভোগবাদী চিন্তাধারাই চরমভাবে প্রকাশ পাচ্ছে না? জেনেটিক কিংবা হরমনাল কারণে সমকামী হওয়ার বিষয়টা কতটা অকাট্টভাবে প্রমাণিত আমার ঠিক জানা নেই। তবে সাধারণভাবে বলা হচ্ছে অধিক সন্তান ধারণ-ক্ষমতা-সম্পন্ন নারীদের একটা বিশেষ জিন নাকি এ আচরণের জন্য দায়ি, তাদের তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে এটা প্রকাশ পায়। সে হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনায় দেশে সমকামীতে ভরে যাওয়ার কথা! মজার ব্যাপার হল, যমজ সন্তান যাদের জেনেটিক গঠন হুবাহু এক, তাদের ক্ষেত্রে উভয়ে সমকামী হবার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ জিনগত কারণে সমকামী হবার বিষয়টা নিয়ে এখনো সন্দেহ আছে।
হরমোনের সমস্যা কিংবা এক্স-ক্রোমোজোমের ডিফেক্ট হলে অনেক সময় ছেলেদের মেয়েলী আচরণ আর মেয়েদের ছেলেদের মত আচরণ প্রকাশ পেতে পারে। তাদের প্রাইমারী সেক্সচুয়াল বৈশিষ্ট্য (অর্থাৎ যৌনাঙ্গের গঠন) হয়তো কিছুটা দুর্বল হতে পারে, সেকেন্ডারী বৈশিষ্ট্য (আচরণগত) অতটা উন্নত হয় না। খুব সম্ভব এটাকেই সমকামিতার কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু ডিফেক্টের কারণে তাদের স্বাভাবিক যৌন-জীবন একেবারে ব্যাহত হচ্ছে না। আমাদের সমাজে এ ধরণের মানুষ আমরা সহজেই খুজে পাই। এরা অনেক সময়য় হাসির খোরাকও যোগায়। ওই মানুষগুলো কি দিব্যি বিয়ে-থা করে সংসার চালাচ্ছে না? তাদের তো সমকামী হবার দরকার পরে নি!
এবং এ কারণেই সমকামিতাকে পুজিবাদী-ভোগবাদী চিন্তাধারার বাইরে প্রাকৃতিক কোন বিষয় ভাবতে আমি নারাজ। সমকামী আচরণের সাথে নিশ্চিতভাবে শারিরীক সম্ভোগের ব্যাপারটাকেই মূল্য দেয়া হচ্ছে বেশি। সমকামী পুরুষেরা নিজের পছন্দ মত কোন স্বাভাবিক পুরুষকেও নিজের কাছে টানার চেষ্টা করবে, কামনা করবে, সিডিউজ করবে -- সমকামিতা নিয়ে গড়ে উঠবে বিশাল পর্ণ-সাইটের বাজার, নিত্য-নতুন সিনেমা তৈরি হবে, সেগুলো বড় বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভুষিত হবে, সমকামী মানুষের ব্যবহার্য নিয়ে নিত্য-নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টি হবে, পাশাপাশি আরো মানুষকে সমকামিতার ফ্যাশনে ডুকানোর চেষ্টা চলবে। ব্যস, সবাই খুশি!
অথচ সেক্সচুয়াল মাইনোরিটি হিসেবে নিগৃত গোষ্ঠী আসলে হিজড়ারা। হিজড়াদের এমনকি পারিবারিক স্বীকৃতিও নেই, পিতা-মাতা তাদের স্নেহের সাথে আপন করে নিতে পারে না, সমাজে কন সম্মান-জনক কাজ পায় না, সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণার চোখে দেখে, কাছে ভিড়তে দেয় না, ছোয়া লাগা তো দূরের ব্যাপার, পারিবারিক বন্ধন নেই কিছুই নেই। তারা অনেক কিছু থেকেই আজীবন বঞ্চিত রয়ে যায়।
এই হিজড়াদের নিয়ে সেই তথাকথিত উদার মানুষগুলোর কিছু করার নেই, তারা এদের পক্ষে কোন আন্দোলনে দাঁড়ানোর সময়য় পায় না, তাদের জন্য কেউ ফেসবুকে রঙ মাখে না, তাদের পক্ষে এত এত লেখা প্রকাশ পায় না, আইন পাশ হওয়া নিয়ে বিপুল হইচই হয় না, হয়তো দু'একটা স্বাগতম জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করে। আদপেই হিজড়া ইস্যু নিয়ে ব্যবসা ফাদার পথ তেমন নেই। শারিরীক সম্ভোগের কোন ব্যাপার নেই, ভোগবাদের কাছে তাই তারা মূল্যহীন।
এ কারণেই যেই প্রেমের জয় নিয়ে এত মাতামাতি, রঙ মাখামাখি, সেই প্রেমটা মানবিক আর থাকল না, বরং একেবারে চাছাছোলাভাবে শারিরীক এবং বস্তুগতই থেকে গেল। এবং হটকারী মনভাবের কিছু লোক না বুঝে না ভেবেই এই বস্তুগত বিষয়টাকেই পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে গেল। আফসোস!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৩