হঠাৎ নেমে আসে এ কি দূর্যোগ! সারাদেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়। মানুষ কি করবে ভেবে পায় না। অফিস-আদালত ইত্যাদির কাজ প্রায় স্থবির। হাসপাতালে চিকিৎসায় দেখা দিয়েছে জটিলতা। এই দিনের বেলা হয়তো বোঝা যায় না, তবে রাত নামলেই এক ভূতুরে অবস্থার সৃষ্টি হবে বলে সবার আশংকা।
এদিকে একটি মফস্বল এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। নারী-পুরুষ, ছোট ছোট বাচ্চা সবাই পানির বালতি এবং কলসি নিয়ে এদিক-ওদিক করছে। কোথায় পাওয়া যাবে একটু খাবার জল?
এমনি সময় কে যেন চিৎকার করে উঠে, - মসিহা এসেছে.....মসিহা !!!
সামান্য এক টুকরো কাপড় আর মুখ ভরা জটাধারী দাড়ি নিয়ে মসিহার মুখ শীতের আগমনীতে একটু ফুটিফাটা হয়ে গেছে। অথচ তার বুদ্ধি-দীপ্ত চোখ দুটোর কি তেজ!
দেখতে দেখতে তাকে ঘিরে জটলা পাকায় সবাই। সবার চোখে-মুখে কেমন একটা আশার চিহ্ন। কি বলবেন আজ মসিহা? আজকের এই বিপর্যয়, এই জলের আশায় ইতিউতি ছুটে বেড়ানো, তাদের কি একটু আশার বানী শোনাবেন না? বলবেন না সব সেরে যাবে? কারো কারো মনে হয়, মসিহার পিপাসা তেষ্টা পায়নি তো? একবার ভাবে কলসের সামান্য পানিটুকু তাকে দিয়ে দেবে।
কেউ কেউ ভাবে কয়েকদিনের লাগাতার হরতাল আর সংঘাত নিয়ে কিছু আলোকপাত করলেও করতে পারেন। অথবা বিচারের মাধ্যমে জাতির কলংক-মুক্ত হবার কথা বলবেন তিনি? আচ্ছা, এই বিষয়ে তার মত তো কোনদিন জানা হল না? তিনি কি আদৌ এইসব নিয়ে ভাবেন? শত হোক, তিনি এ দেশেরই লোক।
আবার কেউ কেউ ভাবছে দেশে নাস্তিক মানুষের উত্থান নিয়ে তিনি কিছু বলবেন। তারা কিভাবে একদিন ধ্বংস হবে তাই বলবেন। মসিহা তো ধর্মের এই অবমাননা সহ্য করবেন না!
এমনি ভাবতে ভাবতে এই দুই শ্রেণীর মনে হঠাৎ প্রশ্ন জাগে মসিহা কোন পক্ষের লোক? অবশ্যই দেশের দুটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কোনটা তাকে হতে হবে। সবাই মনে মনে কামনা করতে থাকে মসিহা যেন তাদের দলের হয়। কারণ আমরাই তো সঠিক।
আশ্চর্যের ব্যাপার মসিহা কিছু বলে না, কারো দিকে তাকায় না পর্যন্ত। নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে সবাই। চিত্রবৎ স্থির সব। মসিহার পানে চেয়ে আছে সকলে কিছু শুনবে বলে, কিন্তু মসিহা নিরব।
হঠাৎ ভীরের ভিতর একটা দশ-বারো বছরের শিশুকে দেখে তার মাথায় হাত রাখে মসিহা। তার চোখের দিকে তাকিয়ে গুরুগম্ভীর সুরে শুধু বলে, - "সবুর কর!"
তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে মসিহা তার গমনপথের দিয়ে হেটে হেটে চলে যায়। পিছন থেকে চেয়ে থাকে সবাই। হতাশ!
তবু যেন তার ছায়ার পানে তাকিয়ে তারা এক শীতলতার ছোয়া পায়।