somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ স্পেশাল -- মসিহা এসেছিল

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তপ্ত রোদে তৃষ্ণা পেলে সে গরুগুলোকে আরেকটু সামলে রাখার চেষ্টা করে। ভরদুপুরে হাটে ক্রেতা প্রায় নেই বললেই চলে। একটু ছায়ায় একটু জিরিয়ে নেবার জো নেই, ছায়া থাকলে তো! পানি দিয়ে মাথার তালু আর গলাটা সামান্য ভিজিয়ে নেয় সে।

নিকটেই প্রবীণ বয়সী লোকটা তার ছেলেকে নিয়ে এক রকম বিপদেই পরে, এত ভয় করলে কেন জোর করে এখানে আসা?

গরুগুলো যেন নিরবে রোদ পোহায়। গাড়ির কালো ধোয়ার গন্ধ সব সময়ই নাকে ঝাপ্টা মেরে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তার সাথে মিশ্ছে সস্তা বিড়ির গন্ধ। কাছে কোথাও নর্দমার পাক শুকিয়ে ফাটতে চলেছে। গবাদি পশুর উচ্ছিষ্টের উপর ভন ভন করছে মাছি। কেউ আলস্যে কিছু একটাতে ঠেস দিয়ে ঢুলছে।

এমন সময় হাটের বিরামহীন শব্দকে ছাঁপিয়ে কেউ চিৎকার করে উঠে, - মসিহা আসতাছে, মসিহা, মসিহা...
সবাই যেন একটু নড়েচড়ে ওঠে। কাঁচা দাড়ির দঙ্গলের ভিতর বয়স লুকিয়ে থাকা লোকটাকে সবাই সাগ্রহে ঘিরে দাঁড়ায়। তার পরনে ছিল এক টুকরো চটের কাপড়, তাতে ঘামের চিহ্ন। রোদের উত্তাপে রুক্ষ চামড়া কালো হয়ে গেছে, তবু মসিহার চোখে-মুখে যেন অদ্ভূত এক জ্যোতি!

সবাই তখন চুপ। মসিহা হঠাৎ বলতে শুরু করে, - “এই যে দুপুরের রোদে তোমরা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছ, দেখে আমার মন আর মানে না! কিন্তু তবু তোমাদের সুখবর জানিয়ে দিচ্ছি, অচিরেই তোমাদের এই কষ্টের অবসান ঘটবে”।
এ পর্যন্ত শুনে সকলের আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। মসিহা বলে যায়, - “বন্ধুগণ, সুদিন অতি সন্নিকটে। তোমাদের এই কষ্টের ফল তোমরা অবশ্যই পাবে। এমন একদিন আসবে যখন দুপুর রোদ এত জ্বালাময়ী হবে না, শীতের সকাল অসহনীয় হবে না।

আজ শত শত মানুষ ঘরে ফিরতে গিয়ে অবর্ণনীয় কষ্টে ভুগে চলেছে। সেই কষ্টেরও অবসান হবে। একদিন আসবে যখন ঘরে ফেরার জন্য লাইন ধরে কারো টিকেট কাটতে হবে না, যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে না, ভীড় হলেও সবাই হাসিমুখে চলাফেরা করবে, যেন সবাই সবার আত্নীয়।

বন্ধুগণ, আর একটু ধৈর্য ধর, সুদিন অতি সন্নিকটে
”!

সবাই তন্ময় হয়ে শুনে তার কথা। সময় কোনদিন দিয়ে কেটে যাচ্ছে কেউ টের পায় না। এমনকি মাঠের পশুগুলোও যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। শুনতে শুনতে কেমন ঘোরের ভিতর চলে যায় সবাই। যেন এক সুখ স্বপ্ন দেখছে তারা। কারো কারো চোখে জল আসে মনের অজান্তেই।

মসিহা বলে যায়, - “একদিন যানজটেরও অবসান হবে। মানুষ সময়মত ঘরে পৌছতে পারবে। চাল-ডাল-আটার দাম কমে যাবে। একেবারে নিঃস্বরাও সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস দিয়ে ভোজনের সুযোগ পাবে। পথের ভিখারীও পেট পুরে খেতে পাবে। শিশুদের সামান্য খোরাকি মেটাতে তাদের পিতার টাকার হিসাব করা লাগবে না। কোন অভাব থাকবে না কারো। দারিদ্রের কষাঘাত সইতে হবে না কারো।

অবিচার-অনাচার থাকবে না কোথাও। থাকবে না ছিনতাই-রাহাজানি-ধর্ষণ। মানুষে মানুষে থাকবে সমপ্রীতি। কেউ বেকার থাকবে না। কর্মক্ষেত্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে সবাই। সরকার সর্বদা জনগণের কথা ভাববে। সবাই সত্যিকারের শিক্ষার সুযোগ পাবে। মানুষে মানুষে থাকবে না ভেদাভেদ। তুচ্ছ কারণে একে অপরের শত্রু বনে যাবে না...

এক অদ্ভূত শান্তি বিরাজ করবে সেদিন। ধৈর্য ধর হে আমার বন্ধুগণ, সুদিন আসবে। অবশ্যই আসবে
”।

এক সময় মসিহার দীর্ঘ ভাষণ শেষ হলে এক অদ্ভূত নিরবতা নেমে আসে হাটে, যেন কাতাড়ে কাতাড়ে মানুষ নামাজে দাড়িয়েছে। ইত্যোবসরে মসিহা নিরবে হাটতে শুরু করে, যে পথ ধরে যাচ্ছিল সেই পথেই চলে যায় সে। সবাই চেয়ে থাকে মসিহার গমন-পথে, বাজারের পীচডালা পথটাতে। তখন তপ্ত রোদেও এক সুশীতল হাওয়া বয়ে যায়। মসিহার ছায়ার দিকে তাকিয়ে সবাই মনের অজান্তেই চোখ বুজে, চোখ বুজে নতুন এক আশায়।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×