ভয়ংকর এক দুর্ঘটনায় সাত বছর বয়সে তাঁর ডান হাতটি হারায় জয়। এরপর থেকে জয় এতোটাই ভেঙে পড়ে যে, কিছুতেই তাঁর মা-বাবা তাকে সান্ত্বনা দিয়েও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারছিলেন না। জয়কে উৎসাহ দেয়ার জন্য তাঁর বাবা তাকে টেনিস খেলা শেখার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। ছোটবেলা থেকেই জয়ের টেনিস খেলার প্রতি আগ্রহ ছিলো ভেবে তাঁর বাবা তাকে খুশি করার জন্য এমনটি করলেন। সবাই খুব অবাক হলো এটা ভেবে যে, এক হাত দিয়ে কীভাবে এই ছেলে টেনিস খেলবে! তবে টেনিস স্কুলের কোচ জয়কে তাঁর শিক্ষানবিস হিসেবে পেয়ে বেশ খুশি হয়েছিলেন। আর টেনিস স্কুলের অন্য সবাইকে দেখে জয় খুব বিব্রত বোধ করতো। চিন্তায় পড়ে যেতো যে, টেনিস খেলার জন্য তো দুই হাতেরই সমান তালে জোর থাকা জরুরী। তাহলে কীভাবে সে এক হাত দিয়ে খেলবে আর কীভাবেই বা খেলায় জিতবে!
তবুও বাবা আর তাঁর কোচের অনুপ্রেরণায় হাল না ছেড়ে খেলে যাচ্ছিলো সে। অনেক সময় ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পরও স্কুলে থেকে খেলার চর্চা করতো জয়। এক পর্যায়ে এসে খুব ভালো খেলা শুরু করে জয়। তবুও ক্লাসের পর তাঁর খেলা বহাল থাকতো। নিজের সেরাটা দেয়ার জন্য সে যেন ছিলো বদ্ধ পরিকর। টানা চৌদ্দ মাস অনুশীলনের পর কোচ জয়কে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত করেন। জয় তো কিছুতেই মানতে রাজি না। জয়ের বাবাও এবার কিছুটা বেঁকে বসলেন। কোচ জয় আর তাঁর বাবাকে বোঝালেন যে, তিনি যা করছেন তা বুঝে শুনেই করছেন। আর জয়কে বললেন নিজের উপর বিশ্বাস রেখে শুধু চর্চাটা চালিয়ে যেতে।আশেপাশের অনেকেই নানান কথা বলে ও ঠাট্টা বিদ্রুপ করে জয়কে বরাবরই নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছিলো। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে জয় তাঁর পরিশ্রম আর একাগ্রতার জোরে সেমি ফাইনালে জায়গা করে নিলো।
এরপর ফাইনাল খেলার প্রথম দিকে বেশ ঝক্কি পোহাতে হলো জয়কে। কারণ প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সাথে তুখোড় হওয়া সত্ত্বেও জয় পেরে উঠতে পারছিলো না। খেলায় যখন কিছুক্ষণের জন্য বিরতি চলছিলো, তখন অন্যান্য কোচরা জয়ের বাবা ও তাঁর কোচকে বুঝিয়ে বললো যে, প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় বেশ শক্তিশালী। তাই জয় যতদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছে, তাতেই সন্তুষ্ট থেকে খেলা থামিয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। জয় নিজেও অনেক খুশি ছিলো যে, সে এইটুকু পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে জয় তাদের কথা মতো খেলা থেকে সরে আসবেন বলে ঠিক করে ফেলেছিলো। তাঁর বাবারও এই সিদ্ধান্তে ছিলো পূর্ণ সম্মতি। তবে জয়ের কোচ বললেন যে, অবশ্যই জয়ের খেলা উচিত। অনেক উদ্যম আর প্রচেষ্টা নিয়ে জয় খেললো এবং প্রতিপক্ষকে হারিয়ে খেলায় জয়ী হলো। জয়ের বাবা তো বেজায় খুশি। কারণ জয়ের মুখে এরকম হাসি দেখার তাঁর এই প্রতীক্ষাটা যে বহু দিনের! আর জয়ের আনন্দ যে বাধ ভেঙেছে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না!
জয়ের কোচ তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললেন, “যেটাকে তুমি তোমার দুর্বলতা মনে করতে সেটাই যে তোমার আসল শক্তি তা আজ তুমি প্রমাণ করেছো জয়। তোমার ডান হাত না থাকায় বাম হাতের জোর অনেক বেশি যা তোমাকে অসাধারণ একজন খেলোয়াড় হতে সাহায্য করেছে। তুমি প্রথম দিন খেলার সময়ই আমি বিষয়টি লক্ষ করেছি। আর আমার উদ্দেশ্য ছিলো তোমার এই শক্তিটাকেই কাজে লাগিয়ে তোমাকে জয়ী করা।“ জয় মুগ্ধ হয়ে কোচের কথা শুনছিলো আর ভাবছিলো যে, তাঁর শক্তিটাকেই তাঁর দুর্বলতা ভাবা কতোটা বোকামি ছিলো।