(২১)
‘নানী বা দাদীর সাথে কদিন কাটালে মনে হয় ওরা আনন্দই পাবে’।
একটু থেমে আমার স্বামী বললো, ‘ভালবাসা আছে যেখানে,কোন ঝড় সেই সর্ম্পক নাড়াচাড়া দিয়ে তছনছ করে দিতে পারে না।ভালবাসা একটা প্রিজমের মত,একই ছবির দেখা,দেখা হয় ভিন্ন ভিন্ন সুরে,একটার সাথে আরেকটার কোন মিল নাই,জীবনটা ভঁরে যায় রংধনুর সাজে।যে বোঝে না,সে শুধু অযথার যন্ত্রনাটা খুঁজে নেয়।আর সবচেয়ে দুঃখজনক কি জান?মারিয়ানের মত মানুষ আছে যারা অস্থির হয়ে থাকে,বাইরের পৃথিবীর কে কি ভাবছে?মনে রাখবে,তোমার জীবনে তুমিই গুরুত্বপূর্ন,কে কি ভাবছে এটা নিয়ে অস্থির হওয়াটা বোকামী ছাড়া আর কিছু না’।
আমি স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে সান্তনা খুঁজছিলাম,আমার যা বলার ছিল,একেবারেই অপ্রয়োজনীয় জঞ্জাল মনে হচ্ছিল।আমার স্বামীর যেন সব কিছুই জানা ছিল,যে
ভাবে সে সমস্যাটার বিশ্লেষণ করে এগিয়ে গেল,সেটা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না,
কোনভাবেই।
বেশ ক বছর আগের কথা,ষ্টক বাজারে এক অভিনব কায়দায় সবাইকে অবাক করে এক কোম্পানী বেশ ধাই ধাই করে উপরে উঠলো,আর সবকিছুর কৃতিত্ব ছিল একজনের।আর সেই দশজন ধনীর একজনের সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়লো,লোকটা মন্তব্য করছিল,এটা খুবই সহজ;ষ্টক মার্কেটে পয়সা বানানো,তবে পয়সা হারানো আরও সহজ।সেই ধনীর সম্পত্তি হারাতে বেশী সময় লাগেনি,যখন সবাই জানতে পারলো তার ব্যাবসা আর কিছু না শুধু মানুষকে স্বপ্ন দেখানো।চেষ্টা করছিলাম তার বক্তব্যটা বোঝার জন্যে,তাই সম্পাদককে বললাম মানুষের মানসিক নির্যাতন নিয়ে লেখার কথা।
‘মানুষের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া,শুধু জানা দরকার কি ভাবে কোনটা বিক্রি করতে হবে,যা মানুষ চায়’।
দামী সুট,পরিপাটি চুল,গম্ভীর গলায়,চমৎকার উপস্থাপনায় লোকটা বলছিল, ‘বলা খুবই সহজ,আর স্বপ্ন বিক্রি করার কথা বললেই কি আর হয়?সেটা কেনার লোকও থাকা দরকার।শুধু ব্যাবসায় না,রাজনীতি,ভালবাসার ক্ষেত্রেও একই কথাই সত্যি,বরং বলা যায় জীবনের প্রতি পদক্ষেপে।আমি জানি,এটা অনেকেরেই জানা,কর্মচারী,চার্ট…কিন্ত মানুষ শুধু চিন্তাধারায় ভেসে যায় না,তারা দেখতে চায় ফলাফল’।
সপ্তাহখানেক হয়ে গেল জেকবের ম্যাসেজটার,উত্তর দেয়া হয়নি,উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে বেশ কটা দিন জেনেভার রাস্তায় এলেমেলো ভাবে ঘুরলাম,হয়তো এক পাশ থেকে কেউ একসময় বলবে, ‘টিকেটের কথাটা ভুলে যেও না’।
ভালবাসাও জানতে চায় পরিনতি,যদিও অনেকেই বলে ভালবাসায় আছে শুধুই ভালবাসা,ওখানে নাই কোন হিসেব।আসলে কি তাই?স্বামীর দেয়া পশমের কোটটা পড়ে ঘুরে বেড়াব,আর হাসি মুখে বলবো, ‘ভালবাসি তোমাকে’।কিন্ত সেটা কি সত্যিই আমার মনের কথা?অবশ্যই না,আমি ভালবাসি আমাকেও,আমিও কিছু চাই-হাত ধরা হাত,চুমু,ঘেমে যাওয়া শরীরে শরীর খেলা,ভাগ করার একটা স্বপ্ন,ছেলেমেয়ে,ভালবাসার মানুষটার পাশাপাশি বুড়ো হওয়া।
‘সব কিছুরই একটা নিয়ম আছে’,আমার সামনে বসে থাকা মানুষটা বলছিল।
হয়তো আবার অস্থির হয়ে যাচ্ছি অযথাই,এই নীরস সাক্ষাৎকারটা আমাকে মানসিক টানাপোড়েনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।ভাবছি ছন্দ হারা ছন্দে,ভাবছি হয়তো আলাপ আলোচনা শুনে কিছুটা লাভ হবে,কিন্ত ডুবে যাচ্ছি ঐ আবেগের চোরাবালিতে।
‘আশাও একটা সক্রামক রোগ…’।
এক সময়ের তথাকথিত প্রতিভাবান ধনী লোকটার কথার জোয়ার থেমে ছিল না,হয়তো তার ধারণা,আমি অবাক হয়ে যাব তার চিন্তাধারায়,আর সেটা বড় বড় অক্ষরে দেখা যাবে পত্রিকার পাতায় পাতায়।এ ধরনের সাক্ষাৎকার বেশ মজার,ছোট্ট একটা প্রশ্ন করে,ঘণ্টাখানেক ধরে শুনে যাও উত্তরটা।অনেকটা কিউবান ওঝার মত,পার্থক্য এটাই,কিউবান ওঝার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম,এখানে শোনার আগ্রহ তেমন একটা নাই।রের্কডার চলছে,তবে সব কিছু কাঁটা ছেঁড়ার পর দাঁড়াবে মিনিট পাঁচেকের একটা আলাপ।
লোকটা আবার বললো, ‘আশা খুবই সক্রামক একটা রোগ,আর আশার থেকে উদ্ভব সফলতার’।
আশা সক্রামক না,তাহলে শুধু ভালবাসার মানুষটার কাছে ছুটে গিয়ে সব কিছু সাজিয়ে বললেই সমস্যার সমাধান।কিন্ত তাতে কি আর কাজ হয়?বলা হয় না,বলা যায় না।সক্রামক হলো মনের ভঁয়,ভঁয় চলার পথের শেষের একাকীত্বে,পাশে যদি কাউকে না পাওয়া যায়।একাকীত্বের ভঁয়ে আমরা কি না করি,ভুল মানুষটার হাত ধরে ছুটে যাই,ছোট্ট একটা বিশ্বাস ঐ আমার মানুষ,বিধাতার পাঠানো বিশেষ একটা চেহারা।আশ্রয় হয় ভালবাসা,আর অনেক কিছুই সহজ হয়ে আসে।অনুভুতিকে বাক্সবন্দী করে একপাশে ছুঁড়ে ফেলি আমরা।
লোকটা আবার বলছিল,‘অনেকেই বলে,দেশের গন্যমান্য অনেকের সাথেই আমার বেশ ভাল যোগাযোগ আছে।আমার পরিচিতদের মধ্যে রাজনীতিবিদ,ব্যাবসায়ী,উঠতি চিন্তাধারার মানুষ,কে নাই।আমার কোম্পানীর এই দেউলিয়া অবস্থা,একেবারেই সাময়িক।খুব শীঘ্রিই আমরা ফিরে যাব আগের চেয়েও ভাল অবস্থায়’।
(আমার সাথেও খুব একটা কম লোকের যোগাযোগ নাই,আমার সাথেও যোগাযোগ আছে একই ধরণের লোকজনের,কিন্ত আমার ফিরে আসার প্রস্ততি নেয়ার দরকার নাই,দরকার অসহনীয় যোগাযোগের একটা সহনীয় সমাপ্তি)।
কোন কিছু ঠিকভাবে শেষ না হলে সেটা সবসময়ই একটা পিছু টান থেকে যায়,হঠাৎ করে ফিরে আসে পুরোনো সুর পুরোনো জায়গা।আমি ও ভাবে থাকতে চাই না,তবে বেশীর ভাগ মানুষই আঁটকে আছে ও ধরণের সর্ম্পকে।কি বলছি এ সব,ভালবাসা আর অর্থনীতি দুটো দুই জগতের।
জেকবের সাথে যোগাযোগের সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেছে।কেটে গেছে একটা সপ্তাহ,
ফায়ারপ্ল্যাসের আগুনে মদের গ্লাসে বসে পুরোনো পর্ব খোঁজার।ফিরে পাওয়া যায় কি পুরোনো আকাশটা কখনও?
বসন্তের আগে আমি ছিলাম সাধারণ কেউ একজন।একদিন মনে হলো,যা কিছু আছে চারপাশে,সবই তো তছনছ হয়ে যেতে পারে,সাধারণ একজনের মত আমি মেনে নিতে পারিনি সবকিছু,ভয়ে ভরে গেল মনটা।বদলে যাওয়া এই সুর টেনে নিয়ে গেল আমাকে উদাসীনতায়।ঘুম ছিল না চোখে,কোথায় যেন হারিয়ে গেল আমার আনন্দ।ছুটে গেলাম অন্যদিকে,হোক না নিজের ধ্বংস,সেটা।যে ভাবেই হোক আমার যোগাযোগ হলো এমন একজনের সাথে,যে আমাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে গেল পুরোনোয়-জমে থাকা ধুলো আড়ালের ঝকঝকে মানুষটার কাছে।
কিন্ত কথাটা সত্যি না,ঐ সুখ অনেকটা নেশা করার সুখ,যত ক্ষণ আছে আমেজে,আছে আনন্দ,নেশা কেটে গেলে হতাশার মেঘ ছড়ায় সারা আকাশে।ধনী লোকটা(মানে এখন কি আর তাকে ধনী বলাটা ঠিক হবে)আবার টাকাপয়সার কথা বলছিল।যদিও কোন প্রশ্ন করিনি আর তাকে,তবে যে স্বপ্ন বিক্রি করে উপরে উঠে,তাকে কি আর থামানো যায়?পৃথিবিকে তার বড়ই জানান দেয়া দরকার প্রাচুর্যতার কথা যদিও সেটার কোন অস্তিত্ব নাই।এউ উন্নাসিকতা আর সহ্য হচ্ছিল না,ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম।
‘তোমার হাতে কি সময় আছে সন্ধ্যায়?তা হলে না হয় খাবার আর ডিঙ্ক্রসে আলাপটা শেষ করবো,আমরা’,লোকটার প্রস্তাব করলো।এটাই প্রথমবারের মত না,বলতে গেলে এ ধরণের ঘটনা ঘটে প্রায়ই।যদিও মারিয়ান কোনিগ হয়তো স্বীকার করবে না,দেখতে শুনতে আমি বেশ ভালই,বেশ বুদ্ধিমতীও লোকজন বলে,এটা আমাকে সাহায্য করে অনেক উত্তর জানতে,যা হয়তো সহজে জানা সম্ভব হতো না।তবে পুরুষ…হায়রে পুরুষ!তারা দূর্বলতা ঢাকবার জন্যে কি না করে,আর সুন্দর একটা মুখ তাদের খুব সহজেই বিচলিত করে।
লোকটাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম,আগের কিছু অনুষ্টান আছে যা এড়ানো যাবে না কোনভাবে।ইচ্ছা হচ্ছিল তাকে জিজ্ঞাসা করার,তার ভেঙ্গে পড়া সামাজ্রের কথা জানার পর নতুন যুবতী বান্ধবীর প্রতিক্রিয়াটা কি।রাস্তার ওপারে গেলাম,রু ডে ৩১ডিসেম্বর এর এক কোনার আইসক্রিমের দোকানটায়।রাস্তাটা আমার বেশ পচ্ছন্দ,কেন না ওটা জানান দেয় নতুন আরেকটা বছর আসছে,নতুন বছরটার জন্যে সাজাবো আর ও নতুন কিছু প্রতিশ্রুতি।
পেস্তা বাদাম আর চকলেট মেশানো আইসক্রিম খেতে খেতে জেনেভা শহরের আকাশ ছোঁয়া ফোয়ারার খেলা দেখছিলাম।যারা বেড়াতে আসে ফোয়ারার কাছে গিয়ে ছবির পর ছবি তুলে,তার চেয়ে এটা সহজ হতো না,একটা ছবি কার্ড কেনা?
আমরা দেখি,ঘোড়ায় চড়া যোদ্ধারা,যাদের অনেকের নাম মানুষ ভুলে গেছে,তবু বসে আছে ঘোড়াটাতে।বিজয়ের আনন্দের মেয়েরা যাদের তলোয়ার ছুঁয়ে যাচ্ছে আকাশ,যদিও নামটা হয়ে গেছে অজানা।অচেনা শিল্পীর ঘন্টার পর ঘন্টা তুলির আঁচড়ে ইতিহাস হয়ে থাকে তারা।
একটা শহরের চিহ্ন তার মূর্তিতে না,বরং তার অসাধারণ মানুষের আবেগের সুর।
আইফেলের বিশ্বমেলার জন্যে তৈরী করা লোহার টাওয়ার যে একদিন প্যারিসের প্রতীক হয়ে যাবে সেটা ছিল তার চিন্তার বাইরে,লুভ মিউজিয়াম,আর্ক ডে ট্রিয়ামপে,সুন্দর বাগানগুলোকে একপাশে ফেলে রেখে।আর আপেল হলো নিউইয়র্কের প্রতীক,টাগুস নদীর একটা ব্রিজ,সেটা আবার লিসবনের প্রতীক,গাউডির অসমাপ্ত গির্জা,দাড়িয়ে আছে বার্সিলোনার প্রতীক হিসাবে।
জেনেভায় লেমান লেক যেখানে রোনে নদীর সাথে মিশে সেখানে আরম্ভ হলো বিদ্যুত তৈরীর কারখানা,তবে দেখা গেল নির্মান কাজ শেষ হলে,ভালভ বন্ধ করার দেখা গেল পানির চাপ এতই বেশী,যে টারবাইনাটাই ভেঙ্গে গেল।
শেষমেষ এক প্রকৌশলীর পরিকল্পনায় অতিরিক্ত পানি বের করার একটা ফোয়ারা তৈরী হলো।পরে অবশ্য সমস্যার অন্যভাবে সমাধান হলে,অপ্রয়োজনীয় ফোয়ারাটা থেকে গেল জেনেভার জনসাধারাণের অনুরোধে।তবে জেনেভায় তো ঝর্না অনেক,লেকের মাঝখানে আর কি ভাবে লোকজনের কাছে আর্কষনীয় হতে পারে,সেটা নিয়ে তর্ক বির্তক হলো অনেক!
আর জন্ম হলো জেনেভা শহরের দর্শনীয় আকাশ ছোঁয়া ফোয়ারার।শক্তিশালী পাম্পের এর সাহায্যে ফোয়ারার প্রায় শ পাঁচেক লিটার পানি ছুটে যায় আকাশে।লোকে বলে আর সেটা সত্যিও,আকাশের তিরিশ হাজার ফুট উঁচু স্পেশ ষ্টেশন থেকেও নাকি দেখা যায় ফোয়ারাটা।না বিশেষ কোন নাম নাই ঐ ফোয়ারার,লোকজন বলে জেট ডে ইয়াও(পানির ফোয়ারা),শহরের হাজারো ঐতিহাসিক মুর্তি,নাম করা লোকজনের মুরাল ছেড়ে ফোয়ারাটা হয়ে গেল,জেনেভা শহরের প্রতীক।
কোন এক সুইস বিজ্ঞানী সাক্ষাৎকারে একবার বললো, ‘আমাদের শরীরের বেশীর ভাগটাই তো পানি,আর সেই পানি দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায়,মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রনে আমাদের সমস্ত কার্যকলাপ।একটা অংশ হলো ভালবাসা,যার আবেগের স্রোতে ওঠানামা আমাদের।আর এই জেট ডে ইয়াও কোন এক মানুষের ভালবাসার নির্দশন’।
জেকবের অফিসে ফোন করলাম,তার ব্যাক্তিগত টেলিফোনে কল করতে পারতাম,তবে কি
দরকার।জেকবের সেক্রেটারীকে বললাম,জেকবের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি,তাকে যেন জানায়।সেক্রেটারী আমাকে অপেক্ষা করতে বললো,বললো জেকবের সাথে কথা বলে সে জানাচ্ছে।কয়েক মিনিট পরে সেক্রেটারী ফোন করে বললো,জেকব খুবই ব্যাস্ত,এখন দেখা করার সময় হবে না তার।পারলে সামনের বছরের কোন এক সময়ের তারিখ ঠিক করে আমাকে জানাবে।আমি বললাম,খুব দরকারী আজই দেখা করা দরকার,আমার।
‘খুবই দরকার’,কথাটায় খুব সহজেই খুলে যায় অনেক বন্ধ দরজা।জানি দেখা হওয়ার সম্ভাবনা বেশ ভালই।মিনিট পাঁচেক পরে সেক্রেটারী বললো,সামনের সপ্তাহে কোন এক সময় দেখা করলে বরং ভাল হয়।বললাম মিনিট কুড়ির মধ্যেই আমি যাচ্ছি,ধন্যবাদ দিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।
অফিসে যাওয়ার পর,গালে কয়েকবার চুমু দিয়ে জেকব সামনের চেয়ারে বসতে বললো।
মনটা বলে দিচ্ছিল জেকব ভঁয়ে কত অস্থির হয়ে আছে।জেকব জানতে চাইলো,কি জন্যে এই সাক্ষাৎকার?তার ব্যাস্ততার কথা তো আমার অজানা না!আর কদিন পার্লামেন্টের অধিবেশন শেষ হয়ে যাবে এ বছরের জন্যে,ব্যাস্ততার মাত্রা এই সময়টায় আরও বেশী।তা ছাড়া ম্যাসেজে সে তো সাবধান করেই দিল,তার বৌ বিশ্বাস করে আমরা দুজনে একটা অবৈধ সর্ম্পকে জড়িত?দিন কয়েক অপেক্ষা করা দরকার,আবহাওয়া অন্ততঃ কিছুটা ঠান্ডা হোক।
‘সবকিছুই আমি অস্বীকার করলাম,শুধু তাই না আমার ক্ষোভটা দেখাতেও দ্বিধা করিনি,অযথার এ ধরণের সন্দেহ,আমার মর্যাদার হানি।মারিয়ানই তো মন্তব্য করলো,ঈর্ষা সংসারের ধ্বংস ঢেকে আনে।তার ব্যাবহারে ঈর্ষা তো উগলে পড়ছিল’।
আমাকে অবাক করে জেকব বললো,তেমন কিছুই বলেনি মারিয়ান, “বোকার মত কি সব যা তা বলছো”।আমি কোন অভিযোগ করছি না,তবে বুঝতে পারছি তোমার ইদানীং এর এত আদর যত্নের কারণটা’।
জেকবের কথা শেষ হওয়ার আগেই,সার্টের কলারটা ধরে তাকে কাছে টেনে নিলাম।ও হয়তো ভাবছিল তাকে মারধর করে অপদস্থ করবো।তবে আমার ইচ্ছা ছিল অন্য কিছু,জেকবকে জড়িয়ে চুমুতে ব্যাস্ত হয়ে গেছি,যদিও জেকব সেই আনন্দে যোগ দেয়নি।জেকব ভাবছিল আমি নাটকীয় কিছু একটা করবো।আমি তখন চুমু খেতে খেতে তার টাই খুলতে ব্যাস্ত।জেকব আমাকে ধাক্কা দিয়ে এক পাশে সরানোর চেষ্টা করছিল,ওর গালে জোরে একটা থাপ্পড় মারলাম,আমি।
সোফায় নগ্ন হয়ে শুয়ে শুয়ে অফিসের ছাঁদের ফ্রেসকো,আর দেয়ালে সাজানো কাঠের প্যানেলগুলো দেখছিলাম।জেকব বললো,সরকারী অফিস,শরীর খেলার জায়গা না,কাপড়চোপড় পরে বাইরে কোথাও যেতে হবে,জানাজানি হলে শুধু কেলেঙ্কারী না,জেলেও যেতে হবে।
বিচলিত জেকব,বারে বারে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিল।লাঞ্চের সময় শেষ হয়ে গেছে,সেক্রেটারী এসে হাল্কা ভাবে দরজায় নক করলো, ‘মিটিং আছি’,উত্তর দিল জেকব।প্রায় মিনিট চল্লিশ পার হয়ে গেছে,হয়তো কয়েকতা মিটিংও বাতিল হয়ে গেছে।
‘তুমি কি ভাবলে?আমি তো দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছিলাম,তোমার মত আমিও দেখা করার জন্যে উদগ্রীব হয়ে ছিলাম’।চাবি দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল,জেকব।আমার গায়ে আন্ডারওয়ার ছাড়া আর কিছু ছিলই না,অস্থির হয়ে আমি জেকবের কাপড় খুলছিলাম,আর জেকব ব্যাস্ত ছিল আমার স্তনের খেলায়।চীৎকার করছিলাম আনন্দে,জেকব হাতটা মুখে দিয়ে চীৎকার বন্ধ করার চেষ্টা করছিল,কোনভাবে মাথা একপাশে নিয়ে তবুও আমি সীৎকারের সুরে মত্ত।একবার শুধু কটা কথা ছিল আমার, ‘মান সম্মান সবই রসাতলে গেল’।
শরীর খেলার গানের সুরটাই আকাশ ছোঁয়া আনন্দের।শরীর খেলার আবেগের স্রোতে ভেসে গেছি তখন আমি,জেকবের লিঙ্গ মিয়ে আপনমনে খেলায় ব্যাস্ত।আর সে আমার মাথাটা হাত দিয়ে ধরে সামনে পেছনে নিয়ে যাচ্ছিল।আমি চাইনি তার বীর্যটা মুখে আসুক,তাই একসময় ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গেলাম সোফাতে।জেকব থেমে থাকেনি ছুটে এসে যোগ দিল, না থেমে জিভ দিয়ে খেলা আরম্ভ করলো।প্রথম স্খালনে আমি চীৎকার না করার জন্য নিজের হাতে কামড় দিচ্ছিলাম,আনন্দের স্রোত যেন থামবে না আর,জোয়ারের পর জোয়ার।
জেকবকে বললাম,আমি চাই তার লিঙ্গটা,আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছা করুক সে আমার কোন আপত্তি নাই তাতে।যৌনসঙ্গম আরম্ভ করলো জেকব,লিঙ্গটা যোনীতে,আর সে চুলটা টেনে বর্বরের মত টানা হেঁচড়া করছিল আমাকে।আমার পা দুটো তুলে ধরে ছিল জেকব,আর তার শরীর তখন জোরে জোরে নাড়াচ্ছিল,বললাম ওতো তাড়াতাড়ি স্খালন না করতে,আমি যে আরও চাই।
এক সময় জেকব মেঝেতে নিয়ে কুকুরের মত খেলা আরম্ভ করলো পেছন দিয়ে,আমিও কোমর দুলিয়ে খেলায় যোগ দিতে দ্বিধা করি না।জেকবের চীৎকার বেড়েই যাচ্ছিল,বুঝলাম জেকবের স্খালনের খুবই কাছাকাছি,জেকবকে থামিয়ে বললাম সামনের দিক দিয়ে সঙ্গম করার জন্যে,আর আমার চোখে তাকিয়ে নোংরা কথাগুলো বলে যাক ইচ্ছেমত।আমিও বদলে গেছি তখন,খিস্তিতে মুখটা ভঁরে গেছে,যা আমার কাছে ছিল একেবারেই অবিশ্বাস্য।জেকবকে নাম ধরে জিজ্ঞাসা করছিল,এলেমেলো ভালবাসার কথা।জেকবকে বললাম,আমার সাথে যেন সে অচেনা কোন বেশ্যার মতই ব্যাবহার করে,সম্মান,ভালবাসা পড়ে থাক একপাশে।
শরীর শরীরের ধাক্কায়,আনন্দের জোয়ারে আমি ভেসে গেছি স্বপ্নের দেশে,আর অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম স্বপ্নের রাজকুমার,জেকবকে।দেখলাম জেকব কনডম ছাড়াই স্খালন করবে,বললাম তাড়াতাড়ি বের করে নিতে,কোন অজুহাত না করে কথাটা মেনে নিল জেকব।আমাকে জড়িয়ে জেকব বারে বারে জানাচ্ছিল,তার ভালবাসার সমুদ্রের গভীরতা।
তারপর আবার বাস্তবতার ঝড়ো লূ হাওয়ায়,তাড়াতাড়ি কাপড়চোপড় পরার জন্যে অনুরোধ করলো জেকব,ফিরে গেছে পুরোনো সুবোধ প্রেমিক থেকে রাজনীতবিদের চেহারায়। প্রশ্ন করলো,হঠাৎ কেন তার সাথে দেখা করতে গেলাম?
‘কি ব্যাপার কি চাও,তুমি’?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১:৫৫