অবশেষে আমি আমার ফোন নাম্বারটা ফেরত পেলাম। একরকম ভাবে বলা যায় একা একা জন্মদিন পালন করার উপহারও সেটা। আমার টিম-মেটগুলাও(এক্স) আমার জন্মদিনের আগে পরে অন্যদের জন্মদিনে উইশ করলেও কেন যেন আমার প্রতি তাদের অনীহা ছিল, এখনো আছে(আসলে দোষ তাদের না, আমার জন্মদিনটার কথা খুব কম কলিগই জানে)।
যাক সে কথা, তবে জিপির মতিঝিল কাস্টমার কেয়ারের আপামর এমপ্লইরা আমাকে না জেনে একটা উপহার দিয়েছে জন্মদিনে। তাই তাদের ধন্যবাদ। অবশ্য চাকরির ব্যস্ততার জন্য সেই শুক্রবার ছাড়া তাদের চমৎকার সার্ভিস পেতে ৪-৫দিন আগে আমন্ত্রণ জানালেও যেতে পারি নি। তারা আমাকে একটা বক্সে ভরে উপহারটা দিয়েছে, আশে পাশের কাস্টমারদের কিছুটা অবাক করে দিয়ে তারা আবার ছবিও তুলে রেখেছে সেদিন। তাদের সার্ভিসটা চমৎকার বলার কিছু যুক্তি সঙ্গত কারন আছে। এই চমৎকারের মচৎকারে পড়ে আমার পকেট থেকে যাতায়াত ভাড়া বাবদ, প্রতিবার সিমে টাকা ভরা বাবদ বেশকিছু টাকা বের হয়ে গেছে যা বলে আর কান ভারী করার ইচ্ছা মোটেই নাই।
টাকার জন্য মায়া করছি? নোপ... মনে হয় এখনো বাকি আছে আরো কিছু জানাবার। জিপির এক্স এমপ্লই হিসাবে কোন সুযোগ - সুবিধা চাই নি, যতবার কাস্টমার কেয়ারে গিয়েছি প্রতিবার একজন সাধারণ গ্রাহক হয়েই পরিচয় দিয়েছি। এক্স এমপ্লইদের কাস্টমার সার্ভিস সেন্টারে কিছুটা হলেও প্রাধান্য দিয়ে থাকে, সবাই নাহ।
০১৭**৭৭৯৯৭৭ নাম্বারটা আমি কিনি ফার্মগেটের কাস্টমার কেয়ার থেকে। এক হরতালের দিন যেয়ে কিনেছিলাম। কোন এক এমপ্লই অফারের সুবাদে নাম্বারটা আমি সিস্টেমের থেকে অর্ডার করি, আর ফার্মগেট কাস্টমার কেয়ারে সিমটা ছিলো বিধায় সেখান থেকে আমাকে সেটা কালেক্ট করতে হবে অর্ডার করার দুদিনের মধ্যে। তা নাহলে অর্ডার বাতিল হয়ে যাবে, আর তখন অন্যকেউ আবার সেটা অর্ডার করতে পারবে। আর আমার অর্ডারের দিন সন্ধ্যা থেকে হরতাল চলছিল। তাই অর্ডার করার দুদিনের মধ্যে সেটা কালেক্ট করতে পারি নি। ফার্মগেটে যাওয়া থেকে বাসার কাছের অফিসে যাওয়াটা ইজি......তাই এই হরতালের মধ্যেই আবার অফিসে যাই। অর্ডার বাতিল হবার পরে আবার অর্ডার করি সেটা। যখন সিমটা নিতে গেলাম তার সাথে ভালো আরো একটা নাম্বার ছিলো ০১৭**৭৭৯৯৫৫। আমার নাম্বারের অর্ডার দেখে প্রথমে ডেস্কের অপরপাশে বসা কাস্টমার ম্যানেজার সাহেব কেমন যেন ইতস্তত করা শুরু করল। তারপর এক সময় তিনি বলেই বসলেন
"ভাইয়া ০১৭**৭৭৯৯৭৭ নাম্বারটা যে আমাদের একটা আপু তার জন্য রেখে দিতে বলেছেন।"
"ভাইয়া আমি যে দুইবার অর্ডার করে আসলাম নাম্বারটা? সরি সেটা না নিয়ে আমি কীভাবে যাই? আমিওতো এমপ্লই।"
(চাকুরির সুবাদে এমন সুবিধা নিতেই পারেন একজন এমপ্লই, কোন অবজেকশন নাই আমার, কিন্তু ইন্টারনাল কাস্টমার বলে একটা কথা জিপিতে প্রচলিত থাকলেও সেটার কোন মূল্য নাই। কথাটা বলার কারন এমন অর্ডার করা আর একটা নাম্বার আমি নিতে আসার আগেই অন্য একজনকে দিয়ে দিয়েছেন ফার্মগেটের ম্যানেজার সাহেবরা)।এর আগে অর্ডার নিয়ে যেই ঝামেলাটা হয়েছিল সেটাও জানালাম যে আমার অর্ডার করা একটা নাম্বার এর আগে আমি এভাবে পাই নি। তখন তিনি নিরুপায় হয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নাম্বারটা দিলেন।
নাম্বার পাবার পরে কি যে খুশি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আমার তখন ধারণা হয় নি, "মাত্রতো শুরু, মজা টের পাবা।"
এইবার নিজের একটা দোষ স্বীকার করতে হচ্ছে। নাম্বারটা কেনার পরে চালু করিনি সাথে সাথে, মনে হয়েছে কিছুদিন পরে চালু করি। চালু করি জানুয়ারি ২০১৫। ঠিক তারিখ মনে নেই কিন্তু ১০ থেকে ১৫ এর মাঝেই হবে। চালু করার পরে সেটাতে আমি কোন কার্ড রিচার্জ করি নাই। এটাই আমার দোষ।
জুলাই ১৫, ২০১৫ খেয়াল করি সিমটা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের মাত্র দুই দিন আগে। আমার ইচ্ছা ছিলো ঈদের সময় পরিচিত জনদের আমার নতুন এই নাম্বারটা জানাবো। এর আগে শুধু বাসার মানুষরা নাম্বারটা জানতো। যা হোক, বন্ধ হয়ে যাবার কারন জানতে চেয়ে ১২১ কল করলাম। ততদিনে আমি এক্স এমপ্লই। ১২১ থেকে জানালো সিমটা রিপ্লেস করতে হবে। কাগজ-পত্র নিয়ে কাস্টমার কেয়ারে যান।
জুলাই ১৬, ২০১৫। বিকাল বেলা উত্তরার জসীমউদদীনের কাস্টমার কেয়ারে গেলাম। তারা জানালো এখন রিপ্লেস করলে অনেক সময় লাগবে চালু হতে।
"কারণ কি?"
"আজ থেকে আমরা ছুটিতে চলে যাচ্ছি, ঈদের দুই সপ্তাহ পরে অফিস খুলবে।"
"ঈদের দুই সপ্তাহ পর কেন? কাস্টমার সার্ভিস তো এত্তদিন বন্ধ থাকে নাহ।"
"আমাদের একটা সিস্টেম রিসেন্টলি আপডেট করা হয়েছে। আর সেটার জন্য আমাদের রাত দিন কাজ করতে হয়েছে। এর জন্য ঈদের পরে টানা দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকবে।" (নিজে এমপ্লই থাকাকালীন এমন এমপ্লই বান্ধব হতে দেখি নাই একবারো।)
বেচারা কাস্টমার ম্যানেজার(সিএম), সেই সময়ে পোস্টপেইডের সিস্টেমে একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে জানতাম, কিন্তু তার জন্য তাকে যে গ্রামীনফোন দিনরাত কাজ করিয়েছে জানতাম নাহ। আর সেও জানতো নাহ খুব বেশি দিন হয়নি আমি গ্রামীনফোনের জব ছেড়েছি, কিছু কিছু আপডেট এখনো পাই।আর তারা কীভাবে একজন কাস্টমারকে হয়রানি করে এটা তার একটা নমুনা। পড়তে থাকেন আরো নমুনা বাকি আছে।
"তাহলে সিমটা কি ঈদের আগে পাবো নাহ?"
"ঈদের আগে পেতে চাইলে আপনি আমাদের এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারে চলে যান, যমুনা ফিউচার পার্কে।"
"কিন্তু এখনতো সেখানে যাওয়া সম্ভব না।"
"ইফতারের পরে যেতে পারেন বা আপনি আগামীকালও যেতে পারেন।"
"ইফতারের পরে সেটা খোলা থাকে?"
"হ্যাঁ, রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। আর আমাদের এখান থেকে দেরি হলেও সেখান থেকে আপনাকে on the spot সিম চালু করে দিতে পারবে।"
জুলাই ১৭, ২০১৫। ঈদুল ফিতরের আগের দিন। যমুনা ফিউচার পার্ক, গ্রামীনফোন এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার।
" সিমটা অনেকদিন বন্ধ ছিলো তাই নাহ?"
" নাহ বন্ধ ছিলো নাহ।"
"কিন্তু আমার সিস্টেম দেখাচ্ছে সিম বন্ধ ছিলো।"
(অথচ এই সিম দিয়ে আমি জুলাই ১২, ২০১৫ তারিখেই কথা বলেছি কল করে।)
সিম তো পেলাম, কিন্তু ইনিও সময় নিয়ে রাখলেন। ঈদের পরে সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে।
আগস্ট ১৭, ২০১৫। ঠিক এক মাস পর আবার আসা। কারন এর মাঝে বেশ কয়েকবার আসা হলেও সিস্টেমের সমস্যা, হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি করে আরো ৪বার আমারকে ফেরত পাঠিয়েছেন তারা। সেই সময়ে কোন জব ছিলো না তাই ঈদের পরে ১মাস সময়ের মাঝে যাওয়া হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু সেদিন ধৈর্য্য হারা হয়ে ঠিক করেই গিয়েছিলাম যে, সিমটা নিয়েই ফিরবো আর ফেরার আগে সেখানে বসে সিম দিয়ে একটা সাকসেসফুল কল করে তারপর ফিরবো। এর মাঝে আমার সেই সিম আরো একবার আমাকে চেঞ্জ করে দেওয়া হয়েছে। আর জিপি কাস্টমার কেয়ার সকাল ৯টা থেকে কাজ শুরু করলেও এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার শুরু করে আরো পরে। জানা ছিল না এটা... সত্যিই একজন এমপ্লই হয়েও জানা ছিল না এটা...
এবারের সিএম একজন আপু। এর আগের সবাই ভাইয়া ছিলেন। তিনিও এবার খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন। কিন্তু বেচারির ভাগ্য খারাপ কারণ আমি সেদিন গিয়েছি কিছু একটা ফলাফল পাবার আশায়। আমাকে আবার আর একটা সিম রিপ্লেস করে বিদায় করতে চেয়েছেন্ তিনি, কিন্তু সেদিন তার সাথে অনেক উঁচু ভয়েজে কথা বলতে হয়েছে, কেরন এছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না তাদের সিনিয়রদের কারো দেখা পাবার। সেদিন এসেই কোন একজন সিনিয়রের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কারন ফ্রন্ট ডেস্কে যারা বসেন তারা কী সার্ভিস দেন আর তাদের জানার দৌঁড় কত্তদূর তা আমার জানা আছে। কিন্তু এবারে একজন কনফিডেন্ট দেখে ভালো লাগলো যদিও সেই কফিডেন্সির ভিত্তি জিরো।
যাক অন্তত ভয়েজ শুনে একজন সিনিয়র ভেতর থেকে বের হয়ে আসলেন। আশেপাশের কাস্টমার সাথে অন্য সিএমরাও এই গাঁড়ল কাস্টমারের দিকে তাকিয়ে ছিল। এবারে তিনি সব শুনলেন। তাকে আবার প্রথম থেকে সব জানাতে হয়েছে। তারপরে সেখানে প্রায় ১ ঘন্টা বসিয়ে রেখে কি কি করলেন তারা তা কেবল তারাই জানেন। সেদিনের দুর্ভাগ্য আমার কারন প্রথমদিন সিম রিপ্লেস করে আসার সময় যোগাযোগের নাম্বার হিসাবে আমি আমার পুরানো এমপ্লই সিরিজের নাম্বারটা দিয়ে এসেছিলাম। প্রায় ১ঘন্টা বসিয়ে রেখে পরে তারা আবিষ্কার করলেন আমি একজন এক্স এমপ্লই... ... ঘরের মানুষ বানায়ে এবারে অনুরোধের ঢেকি ভরে দিল আমারে। আবারো পাঠালো ফেরত এবং সেই তথা কথিত সিনিয়র দায়িত্ব নিলেন সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। পরবর্তি সপ্তাহে তাকে আর পাওয়া গেলোই নাহ... ... তিনি পারিবারিক কারনে অফিসের বাইরে আছেন।
এবারে আর কি করা। চল যাই সিম অন্য বন্দরে। গেলাম মতিঝিল কাস্টমার সেন্টারে। সেখানেও একি কাহিনী চলল। তবে এবার শুরুতেই খেয়ে গেল... আগের কিচ্চা কাহিনী বলে শুরুতেই বিষীধগার করে দিলাম। তবে এবারো যাথারীতি একজন সাধারন কাস্টমার হয়ে। সেখানে হাসিব নামের একজন আমার সাথে কথা বললেন। তবে এবারো তিনিও সিনিয়র রূপে হাজির হয়েছেন, কারন ডেস্কের ওপাশে বসা ফ্রন্টলাইনার সি এম ইতোমধ্যে কাবু।
আর লম্বা করতে ইচ্ছা করছে নাহ। এরি মাঝে চাকরি হয়েছে। ঢাকার বাইরে পোস্টিং। তাই কর্মদিবসে ঢাকায় আসাও আর হয় নাহ। তাই ফোনে ফোনে কথা হয়, আর হতাশা ঝাড়া হয় আর আশার বাণী শোনা হয়। এই করছি সেই করছি, সিম চেঞ্জ করেছি, ব্যাক অফিসে কথা বলেছি, ফিডব্যাক দিয়েছি ইত্যাদি ইত্যাদি... ... শেষে এক দিন সন্ধ্যায় আমাকে ডাকা হল... “প্লিজ প্লিজ আপনি আসুন।“
আগেই বলেছি যেতে পারিনি কেন। পরে জন্মদিনের পড়ন্ত বিকালে গেলাম তাদের কাস্টমার কেয়ারে আর সেটা অবশ্যই মতিঝিলে। উত্তরা থেকে এত্ত দূরে যাওয়া আশা এর মাঝে হয়ে গেছে কয়েকবার। তারপরেও অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে সিম দেওয়া হল আমাকে। আবার বসে থাকতে অনুরোধ করে একটা শান্তনা হিসাবে জিপি ব্রান্ডেড মগ দেওয়া হল আমাকে। আবার সেটা ছবি তুলেও রাখা হল... ... আর এটাই হচ্ছে সেদিন জন্মদিনের উপহার... আমার জন্য...।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২০