বস্তুবাদের, তথাকথিত পুঁথিগত বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে বহুকাল ধরেই অনেকে নাস্তিক হয়ে আসছে। এই প্রবণতা নতুন নয়। তারা নানা রকম খন্ডিত তথ্য পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে তত্ত্ব দেয় যে ঈন্দ্রীয়গ্রাহ্য জগতই সবকিছু, পরকাল বলে কিছু নেই, ঈশ্বর বলে কিছু নেই। তাদের এই বাগাড়ম্বরে বাদ পড়ে যায় এই মুহুর্তে ঈন্দ্রীয়ের নাগালে না থাকা জগতের শাশ্বত অস্তিত্বের কথা। হাজার হাজার বছর ধরে গবেষণা করতে করতে যাকে আর শেষ পর্যন্ত ধরা যায় না সেই জগৎই আধিবিদ্যিক জগত। এই জগত হচ্ছে সেই জগত যাকে ধরা যায় না কিন্তু সর্বদা আমাদের সাথে রয়েছে।
ঈশ্বর মৃত্যুর পরে আমাদের কৃতকর্ম অনুসারে পুরস্কার অথবা শাস্তি দেবেন এই মূলনীতির উপর তৈরী হয়েছে একদিকে বিভিন্ন ধর্ম অন্যদিকে নীতিদর্শন। দুটোর মধ্যে কিন্তু উদ্যেশ্যের জায়গা থেকে খুব বড় কোন পার্থক্য নেই। নীতিদর্শন ধর্মকে তাত্ত্বিক ভিত্তিদেয়। অপরদিকে ধর্ম আর নীতিদর্শন দুটোরই মূলগত শক্তি হচ্ছে অধিবিদ্যা। তাই অধরা জগতের উপরে নিশ্চিন্তে আস্থা রেখে যূগ যূগ ধরে মানুষ মঙ্গলময় ঈশ্বরে আস্থা রেখে আসছেন।
নাস্তিকেরা চিরকালই ছিল। যতদিন ধরে পৃথিবীতে আস্তিক আছে ততদিন ধরেই নাস্তিক আছে। নাস্তিকেরা বরাবরই বলে এসেছেন ঈশ্বরকে দেখি না। তিনি কোথায় জানিনা। তাঁকে মানবো কেন? এই কথা গুলি তারা ব্যবহার করেছে ইচ্ছামতো ভোগের রাস্তা পরিস্কার করার জন্য। আগে যখন প্রকৃতি থেকে উৎপাদনে মানুষ সন্তুষ্ট ছিল সেই সামন্তসমাজ পর্যন্ত নাস্তিকদের ঠেকিয়ে রাখে গেছে। কিন্তু যখন যন্ত্র আবিস্কার করে অনেক অনেক বেশী উৎপাদন শুরু হলো তখনই এইসব বেশী বেশী উৎপাদন করা জিনিস বিক্রি করে মুনাফা গোনার প্রশ্ন সামনে এসেছে। বেশী বিক্রি করতে গেলে বেশি বেশী ভোগের নীতি প্রচারের বিকল্প নেই। এই কারণে শিল্পবিপ্লবের পর থেকে পৃথিবীতে নতুন করে নাস্তিকদের আস্ফালন শুরু হয়। গত দেড়শ বছরের যত যুদ্ধ যত দুর্ভিক্ষ যত অশান্তি সবকিছুর মূলে এই শিল্পবিপ্লব। যন্ত্র আরো উন্নত হয়েছে। আরো বেশী উৎপাদন হয়েছে। মানুষের ভোগবাসনা আরো বেড়েছে। অথচ ক্ষেতের দুমুঠো ধান আর পোষা গরুর দুধে কিন্তু মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে মন্দ ছিল না।
বর্তমান সময়ে দেরীতে হলেও অনেকের মধ্যে এই বোধোদয় এসেছে যে আমাদেরকে ক্রমশ শিল্পোৎপাদনের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। ফিরে যেতে হবে সনাতন সমাজে। যে সমাজ লাভের খাতার বদলে মানবিক মূল্যবোধে পরিচালিত হয়। যে সমাজে মানুষ কোন সংখ্যা নয় বরং সৃষ্টির সেরা জীব বলে বিবেচিত হয়।
এই চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে আজকের নাস্তিকেরা। তারা নানান কৌশলে, কখনো বিজ্ঞান কখনো মনোহারি বিজ্ঞাপন এসব দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ভোগকে আকর্ষনীয় এবং যুক্তিসঙ্গত করে তুলছেন। শুধু তাই নয় নতুন করে মানবিক সমাজ নির্মানে যারা উৎসাহী তাঁদের ধ্বংশ করার জন্য শিল্পোন্নত সমাজের কর্ণধারদের নিয়মিত বুদ্ধি দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তাঁদের ভোগবিলাসের রকমারি বর্ননা নাবালিগ প্রজন্মকে ভোগের দিকে টানছে। এই কারণেই নাস্তিকেরা বিপজ্জনক।
নাস্তিকরা এতই শক্তিশালী যে শুধে মেরে তাড়ালে এরা যাবে না। এদেরকে তর্ক করে পরাজিত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই তওফিক দিন।