১।
আতিকের খুব টেনশান হচ্ছে সকাল থেকে।এমনি তে সে খুব লাজুক, মেয়েদের সাথে কথা বলায় পটু নাহ, তারপর ও তার উপর মেয়ে দেখার মত কঠিন একটা দায়িত্ব পরেছে। আতিক কিছুদিন হলো বেসরকারি একটা ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করে চাকরিতে জয়েন করেছে। খুব বেশি নাহলে ও মোটা অংকের সেলারি পায়, যেটা অনেক মেয়ের বাবার জন্য ই লোভনীয়। যদিও সে এখন বিয়ে করতে চায় নাহ, তবে সামাজিক দায়িত্ব মনে করে প্লাস বাবা- মার কথা
মনে করে মেয়ে দেখতে রাজি হয়ে গেছে। আতিক এতো বেশি টেনশানে পরে যায় যে গতবার লুঙ্গি পরে ই স্কাইপের সামনে বসে গিয়েছিলো ওই মেয়ের সাথে কথা বলতে কপাল ভালো যে স্কাইপে টেবিলের উপর ই খালি দেখা যায়। মেয়ে দেখা তার কাছে অনেকটা গরু বাজার থেকে গরু কিনার মত মনে হয়। মেয়ে কেমন, তার চরিত্র কেমন, মেয়ের ভবিষ্যৎ কেমন হবে। আগের দিনে খালি দেখা হতো মেয়ে চামড়ায় সুন্দরী কিনা, কিন্তু ইদানিং চামড়ার পাশাপাশি ডিগ্রি ও
ভালো দাম রাখে, বিশেষ করে বিদেশী ডিগ্রি ধারী ( অনেকটা অস্ত্রেলিয়ান গরুর মত)। কুরবানির হাটে যেমন ভালো গরু কিনা অনেক টা ভাগ্যের উপর, তেমনি মেয়ে দেখা এবং ভালো মেয়ে পাওয়া ও অনেক টা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। কারন ১০-২০ মিনিটের আলাপে ত নিজের বন্ধু
বান্ধব ও চেনা যায় নাহ, আর এ ত একটা মেয়ে।
২।
এলিনার খুব বিরক্ত লাগছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নিজেকে কোরবানির হাটে তোলা গরুর মত লাগছে। আর বাজারের বেপারী দের মত ওর বাবা-মা এমন আচরণ করছে যে এইবার গরু
বিক্রি করতে ই হবে। তাই ওর নিজের উপর দিয়ে চলছে নির্যাতন। প্রতিবার ছেলে দেখার আগে পার্লার থেকে সেজে গুছে সঙ সেজে বসে থাকতে হয়। তারপর ছেলের উল্টা পাল্টা ফালতু প্রশ্নের পণ্ডিত পণ্ডিত মার্কা উত্তর দিতে হয়। নিজেকে অনেক পণ্ডিত প্রমান করতে না পারলে যে বাজারে বিকাবে নাহ। এলিনা সবে মাত্র একটা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্ডার গ্রেড শেষ
করেছে, এখন পর্যন্ত ফাইনাল সার্টিফিকেট ও পায় নাই। ইচ্ছা ছিল জি আর ই দিয়ে আম্রিকা চলে যাবে ( ওরে স্বপ্নের নায়ক যে ওবামা)। কিন্তু তা আর হল কোথায়? বাবা- মার কাছে মনে হয়েছে অনেক হয়েছে, এইবার বিয়ে দেয়া ফরজ হয়ে গেছে, নাহলে পরে মাইয়ার সেলটার দিবে কে? তাইতো ওরে উঠাই দিয়েছে গরুর হাটে। আগের দিনে ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার ছেলের বাজারে অনেক দাম ছিল, কিন্তু ইদানিং দেশের অবস্থা খারাপ হয়েছে বলে সব বাবা- মা তাদের মেয়ের জন্য এন আর বি ছেলে দেখে, বিদেশ মানে ই সেফ লাইফ, মেয়ে সুখে আছে কি নেই, তা জানার সময় কোথায়। মেয়ে আদো বিয়ে করতে চায় কিনা ওটা জানার ও টাইম নাই। এলিনার মন খুব খারাপ যে ও বাসায় বলতে পারছে নাহ যে ওর নিজের একটা পছন্দ আছে, কিন্তু ছেলে বেকার। আর বেকার ছেলের আর যাই হোক বাজারে কোন দাম নাই।
৩।
কায়সার অনেক হাস্যজ্বল একটি ছেলে। সারাদিন মাস্তি করে, সবার সাথে হাসি খুশি। ফেবু থেকে এলিনার সাথে তার পরিচয়, তারপর ঘনিস্ততা। ইদানিং তার দিন কাটে বিমর্ষ ভাবে, কারন এলিনা প্রতিদিন ই এসে তার নতুন নতুন হবু জামাই এর আলাপ করে। আগের মত ওদের মাঝে এখন আর ভালবাসার কোন কথা হয় নাহ। এলিনার যদিও বিয়ে করার ইচ্ছা নাই এখন, তবে ও ফ্যামিলির বাহিরে জেতে ও পারবে নাহ, ওটা কায়সার ভালো ই জানে। জেনে ও লাভ নাই, বিয়ের বাজারে ওর দাম জিরো, কারন ওর স্কলার শিপ থাকলে ও সে যে বেকার, আর বেকারের আর যাই হোক বিয়ের বাজার থেকে দামা দামি করে গরু কিনার মত করে মেয়ে বিয়ে করা পসিবল নাহ। আর সে ওই দিকে যাবে ও নাহ। কারন ওর কাছে বিয়েটা কর্তব্য থেকে ভিন্ন কিছু। তার কাছে বিয়ে মানে একটা নতুন বেস্ট ফ্রেন্ড পাওয়া, যে সারা লাইফ তার সব কিছু তে ভাগ বসাবে।
কি করে বুঝাবো এই অনুভুতি,
আমার এ হৃদয় জুরে
তোমারি প্রণতি
ভালবাসা এমনি,
দিন রাত সারাক্ষণই,
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে,
করে বিচরণ।
কিন্তু বলতে চেয়ে ও বলা হয়ে উঠে নাহ,কারন এলিনা মনে করে ভালবাসা একটা বুল সিট। কারন ওর চিন্তা ভাবনা সব ওই গরু বাজারে।
ধ্বংস হোক সব গরু বাজারের সংসার, জয় হোক সকল ভালো ফারনিশ বাসার।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৫ রাত ৩:৪৩