somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যান্ড্রমিডা গ্যালাক্সি

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ১৯৯৫ সাল।ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইভান কিং হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চিত্রে অস্বাভাবিক এক নীলাভ রশ্মির উপস্থিতি লক্ষ্য করলেন।ভাবলেন এটা কোন নবীন নক্ষত্র হতে আগত।অত্যাধিক শক্তিজনিত বিকিরনের কারণে হয়তোবা এরূপ রশ্মি প্রতীয়মান হচ্ছে।তিন বছর পরে সান্তাক্রুজের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা আবারো তা পর্যবেক্ষণ করলেন এবং এবার যে মতামত দিলেন তা আরোও রহস্যঘন। তাদের মতে একটি নয় বরং চারশত নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত গুচ্ছবদ্ধ তারকারাজিই আসলে এই নীলাভ রশ্মির জনক।আজ হতে ২০০ মিলিয়ন বছর আগে কোন এক মহাজাগতিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে এদের হয়তোবা সৃষ্টি। তারাগুলো বেশ দৃঢ়ভাবে বলয়ে আবদ্ধ।আর ওদেরকে ঘিরে আছে অপেক্ষাকৃত প্রবীণ নক্ষত্রসমূহ। এরা আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সী অ্যান্ড্রোমিডায় অবস্থিত।

অ্যান্ড্রোমিডার ১২ বিলিয়ন বছরের ইতিহাস যদি পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে এই দাড়াঁয় যে এই নীলাভ নক্ষত্রগুচ্ছ উতপত্তি কালের দিক দিয়ে একদমই নবীন এবং ক্ষণস্থায়ী।অর্থাত আবারো এরা কোন এক বিস্ফোরণে বিলীন হয়ে নতুন তারকাগুচ্ছ বা স্টার ক্লাস্টার তৈরি করবে যা হয়তো বা অতীতেও করেছিল।অ্যান্ড্রোমিডার কেন্দ্রে রয়েছে গুরুভার সমৃদ্ধ ঘনবস্তু যাকে বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণ গহবর বা ব্ল্যাক হোল নামেই আখ্যায়িত করেছেন। আবার মৃত নক্ষত্রগুচ্ছও কৃষ্ণকায় বস্তুর উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে, কিন্তু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ১৪০ মিলিয়ন সূর্যের ভরবিশিষ্ট এ ঘন কৃষ্ণবস্তু কৃষ্ণগহবর ছাড়া আর কিছুই নয়।যদিও তাদের ধারণার চেয়ে এ ভর তিন গুণ বেশীই প্রতীয়মান হয়েছে!

হাবল স্পেস টেলস্কোপের প্রাথমিক কাজ ছিল ব্ল্যাক হোল পর্যবেক্ষণ করা। আর অ্যান্ড্রোমিডার মাঝে এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ছিল তার জন্য নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর।কিন্তু তার থেকেও বিস্ময়কর হলো এই কৃষ্ণ গহবরকে ঘিরে থাকা নীলাভ নক্ষত্রে বলয়ের উপস্থিতি যা বাস্তবে একেবারেই অসম্ভব।কারণ কৃষ্ণগহবরের অমোঘ আকর্ষণে এই বলয়টি এতদিনে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়ারই কথা। কিন্তু তা তো নয় বরং কালো মুক্তোকে ঘিরে নীলকান্ত মণিগুলো যেন নিশ্চিন্তে সুবিন্যস্ত ভাবে সজ্জিত হয়ে আছে এই বলয়ে।বিজ্ঞানীরা হতবিহবল।তাদের ব্যাখ্যা মতে নক্ষত্রগুলো অতিদ্রুত প্রদক্ষিণরত বিধায় এ বিন্যাসে সজ্জিত হতে পেরেছে। বৈজ্ঞানিক হিসাবমতে নক্ষত্রগুলো ৩.৬ মিলিয়ন কি.মি. বেগে অর্থাৎ সেকেন্ডে ১০০০ কি.মি. গতিতে ব্ল্যাকহোলটির চারিদিকে প্রদক্ষিণ করছে।এ বেগে পুরো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে তাদের সময় লাগবে মাত্র ৪০ সেকেন্ড বা চাঁদে পৌঁছাতে সময় লাগবে মিনিট ছয়েক।আর অ্যান্ড্রোমিডায় নক্ষত্রগুলো তাদের নিজস্ব কক্ষপথে পরিভ্রমণ সমাপ্ত করে ১০০ বছরে।

অ্যান্ড্রোমিডার স্থাপত্য শৈলী যে এখানেই শেষ তা কিন্তু নয়। বিজ্ঞানীরা এও দেখেছেন যে একজোড়া নিউক্লিয়াস অবস্থান করছে অ্যান্ড্রোমিডার কেন্দ্রে। তার একত্রীভূত না হয়ে স্ব স্ব অবস্থানে কিভাবে টিকে আছে এও এক বিস্ময়। ৩০০ বিলিয়ন নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত এই অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। এই ছায়াপথটি আমাদের হতে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ব্যাস প্রায় ২২০,০০০ আলোকবর্ষ যেখানে আমাদের মিল্কিওয়ে ১০০,০০০ আলোকবর্ষ ব্যাস সমৃদ্ধ। অর্থাত এটি আমাদের মিল্কিওয়ে থেকে আকারে দ্বিগুন। সেদিক থেকে বিচার করলে আমাদের মিল্কিওয়ে বেশ ভারী এবং নক্ষত্রগুলো দ্বারা খুব বেশী যেন ভরে আছে ওর তুলনায়। অ্যান্ড্রমিডার পুরুত্ব প্রায় ১৮০,০০০ আলোকবর্ষ আর আমাদের মিল্কিওয়ে ১০০০ আলোকবর্ষ পুরু। সাতটি স্পাইরাল বা সর্পিলাকার বাহু বিশিষ্ট এই ছায়াপথটির নিউক্লিয়াসের সাথে সংযুক্ত আছে দুটি বাহু । বাকী পাঁচটি কুন্ডলীকৃত বাহু অধিকার করে আছে অসংখ্য সৌরমন্ডলকে। এর নিউক্লিয়াস তৈরী হয়েছে দশ মিলিয়ন নক্ষত্রগুচ্ছের (গ্লোবিউলার ক্লাস্টারের) সমন্বয়ে। ছায়াপথটি একটি পূর্ণভারী বস্তু আকারে ভর কেন্দ্রের সাপেক্ষে তার ঘূর্ণন সাধিত করে না। ভরকেন্দ্রের সাপেক্ষে ছায়াপথটির ভেতরের অংশের পূর্ণ ঘূর্ণন সমাপ্ত হতে সময় লাগে ১১ মিলিয়ন বছর আর বাইরের অংশটুকু তা সমাপ্ত করে ৯০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছরে ।

এরও আগে ১৯৯৩ সালে বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে নীলাভ চাকতিটিকে ঘিরে আছে রক্তিমাভ নক্ষত্রগুচ্ছের বলয়। বলয়টি একটু হেলানো। তাই তার অপরদিকও প্রতীয়মান হওয়ার দরুণ মনে হচ্ছে ডাবল নিউক্লিয়াস। আর নীলাভ জ্যোতিস্কগুলো চক্রাকারে ঘুরছে কৃষ্ণগহবরকে কেন্দ্র করে। কৃষ্ণ গহবর থেকে রক্তিম জ্যোতিস্কগুলোর দূরত্ব ৫ আলোক বর্ষ ।নীলাভ চাকতি আর রক্তিমাভ বলয় একই দিকে হেলানো বলে ধারণা করা হচ্ছে তারা পরস্পরও হয়তো বা একই সূত্রে গাঁথা।

কিন্তু সেই দশম শতাব্দীতে মাত্র যখন পারস্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবদ-আল-রাহমান আল সুফী লক্ষ্য করলেন ঘোলাটে কিন্তু আলোকিত একটি জ্যোতিষ্ক। নামকরণ করলেন ক্ষুদ্র মেঘপুঞ্জ রূপে, তিনি কি ভেবেছিলেন এই মেঘপুঞ্জই হল আমাদের প্রতিবেশী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা, যাকে ঘিরে একদিন সূচনা হবে অনেক গল্পের, অনেক গবেষণার, যা কিনা উন্মোচন করবে অপার রহস্যের। হয়তো বা তিনি জানতেন!

সূত্রঃ নাসা,
চিত্রঃ নিউজ সায়েন্টিস্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৫
২৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮




ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।

এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×