somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবি ও লেখায় যুদ্ধসমাধি

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর নিহত সৈনিকদের সমাধি কী সুন্দর, কত যত্নে সাজানো। শ্রদ্ধা জানানোর কী চমৎকার আয়োজন! ওয়ার সিমেট্রির দিকে গেলে দেখেশুনে কখনো কখনো পড়েছে দীর্ঘশ্বাস। রীতিমতো এক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ই আছে আমাদের, অথচ কী কাজ তাদের আমারই জানা নেই। ওই মন্ত্রণালয় চাইলে একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিগুলো 'লিবারেশন ওয়ার সিমেট্রি' হিসেবে কি গড়ে উঠতে পারতো না?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গনে আজাদ হিন্দ ফৌজের আক্রমণে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈন্য নিহত হন, তাদের বাংলাদেশে সমাহিত করা হয়। এসব সৈন্যের কবরস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ওয়ার সিমেট্রি বা যুদ্ধসমাধি। ওয়ার সিমেট্রিগুলোর একটি রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর মেহেদিবাগ বাদশা মিয়া সড়কে এবং অন্যটি কুমিল্লার ময়নামতিতে। চট্টগ্রামের মেহেদিবাগে পুরো সমাধি এলাকাই সবুজ বৃক্ষ আর পাতাবাহারের বেষ্টনীতে ঘেরা। কোলাহলমুক্ত এক সুন্দর পরিবেশের সঙ্গে রয়েছে প্রশান্ত ভাবগাম্ভীর্য।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্রতর হয়। আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অর্থের অভাব থাকলেও সুভাষ বোসের অসাধারণ নেতৃত্বে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্যের সুশৃঙ্খল এক দেশপ্রেমিক সৈন্যদল গড়ে ওঠে। আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যরা ১৯৪৫ সালের গোড়ার দিকে সর্বপ্রথম বার্মা (এখনকার মিয়ানমার) দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো আত্রক্রমণ করে ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের আরাকান, ইম্ফল, ময়রাং, বিষেণপুরসহ আরো নানা জায়গা দখল করে নেয়। ব্রিটেনের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ওই জায়গাগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধবিমান ও কামান নিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কয়েকমাস স্থায়ী এ যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজ পিছু হটে রেঙ্গুনে গিয়ে পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ইতিমধ্যে জাপান আত্মসমর্পণ করায় এবং নেতাজীর রহস্যজনক অন্তর্ধানে আজাদ হিন্দ ফৌজ হয়ে পড়ে দুর্বল। ইম্ফলের ওই যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজের পক্ষে ২৭ হাজার সৈন্যের মৃত্যু হয়। মিত্রবাহিনীও কয়েক সহস্রাধিক সৈন্য হারায়। মিত্রবাহিনীর এসব সৈন্যকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়। পরে কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন এসব সৈন্যের সমাধিস্থলকে ঘিরে 'ওয়ার সিমেট্রি' গড়ে তোলে।

চট্টগ্রামের মেহেদিবাগে বাদশা মিয়া রোডের মাঝামাঝি ঢালুতে সাড়ে সাত একর জমিতে সমাধিক্ষেত্রটির অবস্থান। মূল সমাধি পড়েছে তিন একর। ফিনলে পাহাড় লাগোয়া প্রায় আট ফুট উঁচু ইস্পাতের রেলিংঘেরা মসৃণ-পরিচ্ছন্ন সড়ক দিয়ে এগোলেই সমাধি ফটক। সমাধি ফটকের পেছনে মূল বেষ্টনী পর্যন্ত অনেকখানি জায়গাজুড়ে রয়েছে সবুজের সমারোহ। উত্তর দিকটা একটু নিচু। সমাধি ফটকের দুপাশে লাল ইটের গাঁথুনি ও কাঠের ছাউনিযুক্ত ছোট্ট দুটি দোচালা কুঠির। দক্ষিণ দিকের কুটিরে পাথরের তৈরি সুদৃশ্য একটি বাক্সের স্বচ্ছ কাঁচের মধ্য দিয়ে দেখা যায় মেমোরিয়াল বুক। ওই বইয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাণিজ্যিক নৌবহরের যে ৬ হাজার ৫০০ নাবিক মৃত্যুবরণ করেন, তাদের নাম ও পদবি লেখা আছে। উত্তর পাশের কুটিরে রাখা সিমেট্রি রেজিস্টারে ৭৫৫ জন সৈনিকের নাম ও পদবিসহ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুদ্রিত রয়েছে সুবিন্যস্তভাবে।

ওয়ার সিমেট্রিতে ৭৫৫ জন সৈনিক সমাহিত রয়েছেন। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী সৈনিককে নিজ নিজ ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় এবং ফলকে ধর্মীয় প্রতীক খোদাই করা আছে। মুসলমানদের জন্য কলেমাখচিত, খ্রিস্টানদের জন্য ক্রুশ।। আত্মাহুতি দেওয়া সৈনিকদের মধ্যে ১৪৯ জন মুসলিম, পাঁচজন হিন্দু, একজন ইহুদি, ১৯ জন বৌদ্ধ, ৫৭৭ জন খ্রিস্টান এবং চারজন অজ্ঞাত ধর্মাবলম্বী। নামের ইংরেজি আদ্যক্ষর দিয়ে কবরের সারি সাজানো। দেশভেদে ব্রিটেনের ৩৭৮ জন, কানাডার ২৫ জন, অস্ট্রেলিয়ার ৯ জন, নিউজিল্যান্ডের দুজন, অবিভক্ত ভারতের ২১৪ জন (বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান মিলে), পশ্চিম আফ্রিকার ৯০ জন, পূর্ব আফ্রিকার ১১ জন, বার্মার দুজন, নেদারল্যান্ডের একজন, জাপানের ১৯ জন ও অন্যান্য চারজনসহ ৭৩৭ জন জানা আর বাকি ১৮ জন অজানা সৈনিক।

পোস্টটি একইসঙ্গে প্রিয় চট্টগ্রামেও প্রকাশ পেল
২২টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×