এই সব মাঝে মাঝেই হয় , একটা লিখতে গিয়া অন্যটা লিখে ফেলি , এক জায়গায় যাইব বইলা রিক্সায় উঠি , তারপর অন্যখানে যাইতে ইচ্ছা হয় । এই স্মৃতিকাহিনীর প্রথম পর্বটা এমনই হইলো , ব্লগার হোসেইনের গল্প বলতে গিয়া অন্য হোসেইনের কাছে বারবার চইলা গেছি ।
আসুন তবে , অন্য হোসেইনরে বাদ দিয়া আবার ব্লগার হোসেইনের কাছে ফিরত যাই ।
চাকরি বিস্তারিত বর্ণনা এই খানে না দেয়াটাই তাহলে উত্তম । প্রথম কয়েকমাস আমাকে প্রচন্ড খাটুনি দিতে হয়েছে , সেলস টিমের একটি প্যারালাল নতুন টিম করা হইছিলো , আমি সেই টিমকে লিড দেই , মূল বিষয় হইলো আমাদের চেয়ারম্যান চাইছিলেন যে উনার প্রডাক্ট বিক্রীতে একটা ডায়নামিক চেঞ্জ নিয়ে আসতে । যেহেতু এই স্মৃতিকথায় বারবার এই জিনিষগুলো আসবে , আমি তাই সেই প্রডাক্ট এবং সেই কোম্পানির নাম এখানে উল্লেখ করতে চাই না। আমি আমার চেয়ারম্যানের ডায়নামিক বিষয়গুলোকে খুব মূল্য দেই , যতোদূর জানি উনি কলেজে কিছুদিন পড়ছেন , কিন্তু এইচ.এস.সি পাশ করতে পারেন নি ( অথবা পরীক্ষা দেন নাই ) কিন্তু আজ এ কথা বলতে বাধা নেই যে , আমি উনার কাছ থেকে এমন বহু জিনিষ শিখেছি যেগুলো দেশে বিদেশে অন্যান্য চাকরি এবং ক্যাম্পাসে আমি শিখতে পারি নাই ।
সেই সময় আমি যে পরিবর্তনগুলো করতে বাধ্য হই , তার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটা ছিল সারাদেশে ডিলারদের পরিবর্তন করা । আমি ৭০ জন ডিলারের মাঝে ৫৬ জন বদলাইয়া ফেলাইছিলাম , এবং এটা ছিল একটা মারাত্মক বিষয় । এই পরিবর্তনের সময় আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় একেক এলাকার ডিলারদের সাথে বসতাম , তাদের সাথে কথাবার্তা হতো রাত পর্যন্ত , তারপর তাদের সাথে ডিনার করতাম অফিসেই। এই বিষয়টি উল্লেখ করলাম , কারন এই মিটিংয়ের জন্য অপেক্ষাতেই ব্লগার হোসেইনের আবির্ভাব হয় ।
সে গল্পেই ফিরে যাই এইবার । গত পর্বেই বলেছিলাম যে আমার এক সিনিয়ার বড়ো ভাইকে আমি সেই অফিসে পেয়েছিলাম । উনি অন্য সেকশনে ছিলেন । একদিন দুপুরে তার টেবিলের সামনে আড্ডা মারছিলাম , তখন দেখি উনার মনিটরে একটি পাতা খোলা । সেখানে বাংলা লেখা । কথা প্রসঙ্গে আমি তখন সামহোয়্যারের কথা উনার কাছে শুনলাম । আরো জানলাম যে সামহোয়্যারে নিয়মিত লেখেন আমাদের অফিসের চাইরজন ।
আমি বিষয়টি বুঝার জন্য আমার টেবিলে এসে সামহোয়্যার ওপেন করলাম । এভাবে কয়েকদিন গেল। সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয় , তখন পাতাটি আমার খুব একটা ভালো লাগে নাই । তবু পড়তাম , মাঝে মাঝে কয়েকজন ভালো লেখকের লেখা পড়লেও , বেশির ভাগই ছিল ফালতু বকোয়াজ । রাজাকার তাড়ানো তখনও একটা কাজ ছিল , বিশেষ করে অমি রহমান পিয়াল , হাসান মোরশেদ ,রাসেল এবং আরো কয়েকজনের এ সংক্রান্ত পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়তাম ।
তেমনি এক বিকেলে আমি যখন অফিসের কাজ শেষ করে বসে আছি , তখন কার একটা পোস্ট পড়ে যেন আমার কমেন্ট করতে ইচ্ছা হলো । কার পোস্ট ছিল সেইটা এখন আর মনে নাই , তবে সেখানে কমেন্ট করার জন্যই আমার একটা নিক নেয়ার দরকার হয়ে পড়লো ।
এখানে আমি একটা তথ্য যোগ করতে চাই যে , নাম ছাড়াও যে নিক নেয়া যায় , বিষয়টি আমার মাথায় তখন আসে নি ।
আমি নিজের নামেই নিক নিতে চাইছিলাম তাই সেই নামটি এভেইলেভল ছিল না ।
‘হোসেইন’ হচ্ছে আমার নামের মিডিল অংশ । অর্থাৎ আমার নামের গঠন ছিল ( ফার্স্ট নেম + হোসেইন + লাস্ট নেম )
আমি তাই হোসেইন নামটি রেজিষ্ট্রেশন করলাম । যে ইমেইলের মাধ্যমে সেই রেজিষ্ট্রেশন করা হইছিল , সেট্ওা ছিল কোম্পানির ইমেইল এড্রেস ।
সত্যি কথা বলতে কি , তখন দিনগুলো অন্যরকম ছিল । সাধারন দুই একটা কমেন্ট করাটাই ছিল আমার উদ্দেশ্য । কোন এক সময় যে ব্লগার হিসেবে আমি হাজির হবো , সেইটা পরিকল্পনায় থাকলে আমি হয়তো অন্য কোন নিক নিতাম ।
আরেকটা মজার কথা এখানে জানাই । আমিই যে হোসেইন , সেইটা আমার অফিসের চাইরজন ব্লগারের মাঝে দুইজন এখন পর্যন্তই বোধ হয় জানেন না । শুধু একজন জানতেন , শুধু তিনিই জানতেন যিনি আমাকে ব্লগ সম্মন্ধে বলেছিলেন ।
নিজেকে হাইড করার কারন এবং কিভাবে হোসেইন এক সময় চোর , কৌশিক ,পিয়াল , জামাল ভাষ্কর ,জেবতিক এবং আরো দুই একটি নিকের মাঝে লুকিয়ে পড়তো ,সেই কথাগুলো আমি আগামী কিস্তিতে বলবো ।
পুনশ্চ : ( লেখার শিরোনামটা ধার করছি আহমদ ছফার ‘ আলী কেনানের উত্থানপতন ’ নাম থাইকা )
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৫৭