somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতারণার আরও অভিযোগ ডাচ-বাংলা গ্রাহকদের

১৯ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকদের অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। গ্রাহকরা ই-মেইল ও ফোনে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে নতুন নতুন অভিযোগ জানাচ্ছেন।

রোববার বাংলানিউজে ‘গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে ডাচ-বাংলা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর এ নিয়ে ব্যাংকপাড়া এবং এর গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। রোববার এবং সোমবার অনেক গ্রাহক আমাদের ফোন করে এবং ই-মেইলে তাদের ভোগান্তির কথা জানান। এ নিয়ে সোমবার বাংলানিউজে প্রকাশিত হয় ‘গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ডাচ-বাংলার বিরুদ্ধে’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনের পরও গ্রাহকদের অভিযোগ অব্যাহত থাকে।

ব্যাংকটির গ্রাহকদের অভিযোগগুলো তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।

গ্রাহকরা জানান, তাদের হিসাব থেকে অঘোষিত চার্জ কেটে নেওয়া হচ্ছে। যেসব চার্জ ধার্য করার কথা হিসাব খোলার সময় গ্রাহকদের বলা হয়নি, এখন সেরকম চার্জ ধার্য করে হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোনো নোটিশ ছাড়াই গ্রাহকের হিসাব থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে ব্যাংকটি। টাকা আয়ের এই অভিনব কৌশলে হতাশ ডাচ-বাংলার গ্রাহকরা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এটিএম নেটওয়ার্ক ফিও আদায় শুরু করেছে ব্যাংকটি। প্রত্যেক গ্রাহকের হিসাব থেকে ২৩০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে ফি হিসেবে। বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনা করে হিসাব করলে দেখা যায়, এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। অথচ হিসাব খোলার সময় এমন ফি নেওয়ার কথা গ্রাহকদের ঘুনাক্ষরেও বলেনি কর্তৃপক্ষ।

হুমায়ুন কবির জুয়েল নামের একজন গ্রাহক জানান, যেখানে অন্য সকল ব্যাংক এটিএম ও নেটওয়ার্কিং খাতে কোনো চার্জ নেয় না সেখানে ডাচ-বাংলা নিচ্ছে ২৩০ টাকা করে চার্জ। তিনি আরও বলেন, এটিএম কার্ডের চার্জ যেখানে সকল ব্যাংকে ২০০-৩৪৫ টাকার মধ্যে সেখানে ডাচ-বাংলার চার্জ ৪৬০ টাকা।

ডাচ-বাংলার অনিয়ম শুধু এখানেই থেমে নেই। এর গ্রাহকরা জানান, এটিএম বুথে লেনদেন করতে গেলে যদি বাড়তি তথ্য চাওয়া হয়, তার জন্য গ্রাহককে তিন টাকা দিতে হয়। অন্য কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম নেই। এমনকি ডাচ-বাংলা ব্যাংক শুরুর দিকে এই চার্জ নিতো না।

তথ্য মতে, প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক গ্রাহক ডাচ-বাংলার বুথে লেনদেন করছেন। তারা সবাই অবশ্য ব্যালেন্স তথ্য নিচ্ছেন না। কিন্তু তারা সবাই যদি তিন টাকা করে ব্যালেন্স তথ্য নেন, তবে ব্যাংকের প্রতিদিন আয় হবে তিন লাখ টাকা। মাসিক হিসেবে প্রায় কোটি টাকা। আর বছরে গড়াচ্ছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। আর এর অর্ধেক গ্রাহকও যদি নেন তবেও আয় ৬ কোটি টাকা। গ্রাহকদের দাবি, এই আয় নিয়ম বহিভূর্ত।

এদিকে, ডাচ-বাংলা কার্ড নবায়ন ফি হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে বছরে ৪৬০ টাকা করে নিচ্ছে। এটিও অন্য ব্যাংকগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। অধিকাংশ ব্যাংকের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ তিনশ টাকা থেকে সাড়ে তিনশ টাকার মধ্যে।

জানা গেছে, বর্তমানে এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার। আর শাখার সংখ্যা প্রায় ১২১। আর এটিএম বুথের সংখ্যা ২ হাজার ৭৯টি।

হাবিবুর রহমান নামে একজন গ্রাহক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ``অনেক ধৈর্য্ ধরেছি। এটিএম বুথ, নেটওয়ার্ক সার্ভিস, ছেঁড়া টাকা এসব নিয়ে সার্ভিস চার্জ মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আর নয়।``

রিপন কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ``আমরা কীভাবে ২ হাজার টাকা ডিপোজিট রাখবো, ডিবিবিএল কি তা বোঝে না? যদি এমনটাই করা হবে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হিসাব খোলার জন্য ক্যাম্পেইন কেন করা হলো?``

আমজাদ হোসেন শাহেদ নামে একজন স্যালারি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ``এখন কি করবো আমি বুঝতে পারছি না।``

মাসুদুল হক মাসুদ নামের একজন গ্রাহক বলেন, “আমার অ্যাকাউন্টে ১৫০০ টাকা আছে। আমার প্রয়োজন ১০০০ টাকা তুলে নেওয়া। অথচ আমি তা তুলতে পারবো না। এটা কী মেনে নেওয়া যায়!”

সুমন প্রামাণিক লিখেছেন- মাত্র ১০০ টাকায় হিসাব খুলিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক এখন ২,০০০ টাকা রাখা বাধ্যতামূলক করে কোটি কোটি টাকা আয় করতে চাইছে যা বড় ধরনের অন্যায়। আপনি যদি ২,০০০ টাকা না রাখেন তাহলে ৬ মাসের মধ্যে আপনার হিসাব বন্ধ হয়ে যাবে। আপনার টাকা ব্যাংক নিয়ে নেবে। এখাতেও তারা কোটি কোটি টাকা আয় করবে।

যখন ওরা নতুন ব্রাঞ্চ খোলে তখন যাকে পায় তাকেই মাত্র ১০০ টাকা জমা`র মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলায়। এখন সবার কাছ থেকে ২০০০ টাকা বাধ্যতামূলক আদায় করছে। স্বল্প আয়ের মানুষ, ছাত্র, গৃহিনী, ক্ষুদে চাকুরীজীবীদের পক্ষে কোনক্রমেই এতো টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে রাখা সম্ভব নয়।

আসুন আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। আমরা যারা ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী তাদের বাঁচান। ২,০০০ টাকা অ্যাকাউন্টে ফেলে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।

মোহসিন মাহমুদ লিখেছেন, “অ্যাকাউন্ট করলাম ৫ বছর হয়ে গেছে, চেক বই এখনো পেলাম না। চেক বইয়ের জন্য গেলে, একবার এইখানে, একবার ওইখানে ঘুরতে হয়, আজব ! আবার চেক বইয়ের জন্য টাকাও কাটে ! আমরা যারা ছাত্র, আমাদের অ্যাকাউন্টে আর কতো টাকা থাকে ! তার মধ্যে যদি ২ হাজার টাকা রেখে দেয়, তাহলে আর অ্যাকাউন্ট রাখার কি দরকার! তাই ১ তারিখের আগেই অ্যাকাউন্ট বাতিল। ৫০০ টাকা ভিক্ষা দেবো DBBL কে।।”

রনি হোসেন লিখেছেন, “আমদের নিজেদেরকেই এগুলো প্রতিহত করতে হবে। কারণ এগুলো দেখার মত আমদের দেশে কেউ নেই। আসুন আমরা সবাই ডাচ বাংলাকে `না` বলি। একমত হলে লাইক দিন.........।”

রনির এই লাইক আবেদনে সাড়া দেন অনেক পাঠক।

অন্যদিকে বাংলানিউজে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন নিয়ে এর পাঠক এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকরা বাংলানিউজের এই সাহসী ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলানিউজে এমন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের পরও অন্য পত্রিকা এবং টেলিভিশনগুলো কেন নীবর। তারা কি বিজ্ঞাপনের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।

প্রতিবেদন বিষয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য চাওয়া হলে তারা প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন।

সূত্র: বাংলানিউজ২৪ডটকম
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সংস্কার না করেই ডক্টর ইউনুসকে বিদায় নিতে হবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৯



সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের জন্য ডক্টর ইউনুসের সরকার জুন’২৬ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। সেনাপ্রধান ও বিএনপি তাঁদেরকে ডিসেম্বর’২৫ এর বেশী সময় দিতে সম্মত নয়। আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৪৪

বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬


এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ৭:১১

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

বিএনপি নেতারা ডক্টর ইউনূসের দেখা করতে সময় চেয়ে এক সপ্তাহ ধরে ঘুরতেছেন। কিন্তু ইনটেরিম প্রধানের শিডিউল- ই পাচ্ছেনা। আর ওদিকে নাহিদ শুনলেন, ডক্টর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×