somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কায়াবিভ্রম

২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজকে নতুন মুখগুলো দেখি। এতোদিন দেখি নি কেন ?! এরা সবাই কতোটা আলাদা!!!

গানের নেশায় মত্ত ঘোরঘোর চোখ, তো ষাট বছরের চিন্তিত বলিরেখার ভাঁজে থাকা চোখ; অস্থির লাফিয়ে বেড়ানো দৃষ্টি বা হালকা কুঁচকে থাকা অফিসের ঝঞ্ঝাটে থাকা মানুষটার শান্ত-চিন্তিত দৃষ্টি; যত্ন করে এঁকে দেয়া কাজলবন্দী চোখ, কি চাকুরিতে বের হওয়া ৪৫-এর কোন মায়ের অপেক্ষারত চোখ! কতোরকম চোখ। আলাদা চোখের আলাদা মানুষগুলো। এবার ঠোঁট দেখি আমি। লাল-মেজেন্টা-গোলাপি-খয়েরির বিভিন্ন শেডের ঠোঁটগুলো। আবার সিগারেটে পোড়া কালো ঠোঁট বা নিচের দিকে ঝুলে যাওয়া বেপরোয়া বেখাপ্পা মোটা ঠোঁট। এমন আরো কতোধরনের ঠোঁট। ঠোঁটগুলো হাসে, এঁটে যায় দু'টো একসাথে, কেঁপে কেঁপে গল্প করে বা ভীষণ রেগে তুবড়ি ছুটিয়ে দেয়! আজকে বেশ উচ্ছল আমি একদম দর্শক হয়ে গেলাম। কারন দেখতে বা বুঝতে হয়তো দর্শক হওয়া প্রয়োজন।

বেশ তাড়াহুড়ায় বাসের হাতলে হাত রেখেছিলাম আজকে। কখন যে ছিটকে ভেতরে আসলাম বুঝলাম না। এসে বেশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেছি। অনেক মানুষের কথায়-চিৎকারে একটা সুর দাঁড়িয়ে গেছে। মাঝখানের একমানুষ সমান প্রস্থে দু'টা লাইন। পিঠাপিঠি হয়ে দাঁড়ানো দুইলাইনের মানুষগুলোর নিজের জায়গাটুক ছেড়ে দিয়ে একটু নড়ে গেলেই এদিক-ওদিকের শরীরের সাথে নিজের একটা অনর্থক মেলামেশা হয়ে যায়। নিজের ভারসাম্যহীনতায় তীব্র অপ্রস্তুত সবাই নিজের লাগাম টানার প্রবল চেষ্টায় জর্জরিত। আঙুলের গিঁটগুলো চকচকে স্টিলে আটকে আছে। শক্ত-আড়ষ্ট-স্টিল জড়ানো প্রতিটা আঙুলের গিঁটে গিঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রতিজ্ঞা পেনেট্রেটেড।

"৯টি সিট শিশু, মহিলা ও প্রতিবন্ধিদের জন্য সংরক্ষিত"-এর নিচের ৯টি সিটে ২জন ছেলে ৯জন মেয়ে আর একটা শিশু বসা। বাকি প্রায় ১২ জন মহিলা-মেয়ে-বৃদ্ধা স্টিল আঁকড়ে কুঁকড়ে আছেন। ছেলে দু'জনের কানের পাশে ধরা মুঠোফোনে রেডিওফুর্তিতে ইয়াত্রি-র গান "আমি এক ভাঙা বাড়ির ভাঙা ঘরের ভাঙা বারান্দা..." ওদের ঠোঁটে অবৈধ সিটদখলের পরিতৃপ্তি! ছেলেগুলোর সামনের শ্যামলা-খামখেয়ালী মেয়েটা বেশ গলা খুলে নিজের অধিকার আদায়ের চেষ্টা চালায়। চটে যাওয়া জিন্স আর "ফ্রেন্ডস ফরএভার" ছাপার নিচে হাস্যোজ্জ্বল বেশ কিছু ফ্রেন্ডসের মলিন মুখের টি-শার্টওয়ালা হেল্পার ভেতরে সিটবিষয়ক ঝামেলায় ভুরু কুঁচকায়। হালকা চেঁচিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে দেয়ার পর বৃদ্ধা বসেন আর পাশে বসেন আরেক মহিলা। বৃদ্ধা শ্বাস নিচ্ছেন আর তার পাশের অচেনা সেই ৪৫-এর চাকুরীজীবি তাঁকে বাতাস দিচ্ছেন..."বু'জি ভাল লাগে? পানি খাবেন নাকি একটু?" শ্যামলা মেয়ে হালকা থেমে আবার নিজের ভার সামলানোর চেষ্টায় ফেরত গেল। পেছনের ছেলেগুলোর রেডিও থেমে গেছে, তাদের ঠোঁটগুলো বোধহয় শ্যামলা মেয়েটাকে গাল দিয়ে থেমে গেল হঠাৎ! পেছনের এক মোবাইল কড়া হিন্দি টোনে চারদিক কাঁপিয়ে দেয়ার পর ফোনের মালিক কানে ফোন ছোঁয়ালো... "ঐ হেতিনে ত'রে কৈসে আর তুই আঁরে কইবি না! কেন্‌রে *** পো' তোর *****..." ঐ শ্যামলা মেয়েটার অদ্ভুত দৃষ্টিতেই নাকি জানি না লোকটা হঠাৎ মুঠোফোন পকেটে চেপে থতমত খেয়ে বাইরে তাকায়! পরের স্টপেজে বৃদ্ধা নামবেন। দেখি ঐ রেডিওওয়ালা ছেলেদু'টো উনার হাত ধরলো একজন, ব্যাগ ধরলো আরেকজন। উনাকে রিক্সায় উঠিয়েও দিলো বোধহয় ওরা! তারপর নিজেদের গন্তব্যে চলে গেল। আমার পাশের সিটে বসে থাকা ছোট্ট ঘেমে যাওয়া বাচ্চাকে বললাম, "ঘামছো তো! তোমার বাবা-মা কৈ? জানালা থেকে সরে বসো না!" সে মুখ গম্ভীর করে চানাচুরের ঠোঙাটা বাইরে ছুঁড়ে ওটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি টিস্যু দিয়ে তার ঘাম মুছে দিলাম। সে খুবই বিরক্তের সাথে সহ্য করলো ব্যাপারটা। তারপর আবার গম্ভীর হয়ে বাইরে তাকালো। একটু পর দেখি সে হালকাভাবে বলছে, "তোমার কাছে পানি আছে? পানি খাবো। গরম লাগে। বাবা পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।" পানি খাইয়ে ওর সাথে গল্প করতে করতে পেছন থেকে আরেক ছেলে ঠেলে বলে ওঠে... "আপু চলেন তো! সামনে আপনার স্টপেজ!" এবার ছুঁড়ে দেয়া চানাচুরের ঠোঙাটার মতো ছিটকে রাস্তায় নামি আমি। ঐ মানুষগুলো ছুটে চলে আগের মতো।

হঠাৎ আমার মনে হয় ওরা সবাই আসলে একই রকম ছিল। প্রতিটা মুখই একটা লক্ষ্যে স্টিল আঁকড়ে ঠেলেঠুলে প্রতিদিন নিজের ন্যূনতম জায়গা খুঁজে নেয় আর সেখানে ক্ষণিকের জন্য একটা বলয় গড়ে তোলে। নিজের গন্তব্যে পৌঁছেই সে ছিটকে পড়ে বলয় থেকে... হয়তো নিজেই ছিটকে যায়!

হঠাৎ ঐ অস্থির-চিন্তিত-শান্ত আলাদা চোখগুলো, কি ঐ রঙিন-সাদা-কালো-পোড়া ঠোঁটগুলো আমার সামনে মিশে-মিলে এক হয়ে যায় !!!




--------------------------------------------------------------------------------------

[ঝড়লিপি ৪]


































ঝড়লিপি I

ঝড়লিপি II

ঝড়লিপি III
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:০৫
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×