somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাশ্চাত্য দেশে এক নির্লজ্জ প্রথা আছে- পত্নীকে বই উৎসর্গ করা এবং অন্তহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।যে সব মনুষ্য রাস্তাঘাটে খালে-বিলে আলিঙ্গনে-চুম্বনে অভ্যস্ত তারা যে ছাপার অক্ষরে বেলেল্লাগিরি করবে এ আর বিচিত্র কি?কিন্তু বলি ব্যাপারটা কি?পত্নীপ্রেম সাধারণ্যে শিঙা ফুঁকে ঘোষণা না করলেই নয়?এ লাইনে যারা বেশী বাড়াবাড়ি করে তাদের বিবি তালাক অবশ্যাম্ভাবী বৌকে ধন্যবাদ যদি দিতে হয় ত ল্যাভেন্ডার রঙ-এর “যাও পাখী বোলো তারে সে যেন ভুলে না মোরে” –মার্কা কাগজে চিঠি লেখ,লিখে বালিশের পাশে রেখে দে,আমাদের জ্বালাবার হেতু কি?

... যেসব বাঙালি বাবু সামন্তর ছানা বলে গর্বে ফেটে পড়েন,তাঁদের পূর্বপুরুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে নায়েব,পেশকার,বেনিয়ান জাতীয় ছা-পোষা মানুষ ছিলেন। মাছ-দুধ সস্তা থাকায় একটু হয়তো মোটাগাঁট্টা ছিলেন।
...হলঘরের মুখোমুখি ‘উত্তরের কোডা’ অর্থাৎ উত্তরদিকের ঘর ,যেখানে সোফা কৌচ ঝাড়লন্ঠনের ‘ফুডানি’[অর্থাৎ ফুটানি, বরিশালের ভাষায় বিলাস ব্যসনের সুষ্ঠু বর্ণনা]

...সেরেস্তার কোন ফোঁপরদালাল কর্মচারী ঠিক করলেন যে মাতব্বরদের আপ্যায়ন আর একটু শানদার হওয়া দরকার।ফলে তাঁদের মাদুরে বসতে দেয়া হয়। তারপর,বিরাট হাঙ্গামা,ভয়ঙ্কর হইচই। মাতব্বররা আসন ছেড়ে খাওয়া ফেলে দল বেঁধে চলে যাচ্ছেনঃ “মোরগো ডাইককা আনিয়া অপমান করছে”।বাবুরা শশব্যস্তে অকুস্থলে এলেন-“যাইওনা,হইল ডা কি? কথাডা কি কও” ।বরিশাল জেলার লোক সব সহ্য করতে রাজী, কিন্তু অপমান সহ্য করে না। কিসে অপমান হল? “আর হগলে হোগলায় বইছে আর আমাগো বওনের কি দিছে? বইলেই হড়হড়াইয়া যায়” । মাদুর তুলে হোগলার চাটাই পাতা হল ।তখনকার মত প্রজাবিদ্রোহের সমাপ্তি।

... সেই আদর্শ সমাজে সবাই সবার ‘হালা’ এবং মনুর সন্তানেরা অধিকাংশই ‘হারামজাদা’ ।মনের আবেগ বেশি প্রকাশ হলে শেষ কথাটি ‘শাআরামজাদা’ উচ্চারিত হত। বড়হিস্যার ভৃত্যকূল একবার তাদের এক প্রবীণ সহকর্মীর বিরুদ্ধে হুজুরে নালিশ জানায়। ...লেখকের ঠাকুর্দা বৃদ্ধকে ডাকিলেন “বুড়া,তুমি নাকি হগলরে হারামজাদা কও?” বৃদ্ধ সাতহাত জিভ কেটে গভীর পরিতাপের সঙ্গে বললেন-“কয়েন কি ?এমন কথা কারওরে আমি হাত [সাত] জন্মেও কই নাই।কে নালিশ করছে,হ্যারে বোলায়েন” ...
প্রধান ফরিয়াদীকে তলব করা হোল,তাকে দেখামাত্র বৃদ্ধ তেড়ে গেল-“কিরে হারামজাদা! তরে বলে আমি হারামজাদা কই?”

============================
-রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা
(লেখক- অধ্যাপক তপন রায় চৌধুরী )।
তিরিশ আর চল্লিশের দশকে পূর্ববঙ্গের একটি জেলা বরিশাল আর কলকাতার ছাত্রজীবন এই গ্রন্থের পটভূমি।কৌতুকবোধের চমৎকার উপস্থাপন, লেখকের বর্ণনার ঢং আর পরিবেশনায় একটি অনন্য রচনাই বলা যায়।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

১. ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর রিভিউ| ওঁর কোন বই পড়িনি| এবার পড়ে নেব

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৯

লেখক বলেছেন: রিভিউ লিখিনি। ভালোলাগা কিছু অংশ তুলে ধরলাম :)

২. ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: হাতপা ,



খুব মজা করে লেখা বই । ভীমরতি লেখা । কিন্তু বান্তব ।

৩. ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫৪

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: খুব সুন্দর আর মজার একটা বই ।

৪. ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৪

জুন বলেছেন: অনেক বছর আগে তপন রায় চৌধুরীর এই লেখাটি প্রথম দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তখনই পড়ে সংগ্রহে রেখেছি আর কতশত বার যে পড়েছি তার ইয়াত্তা নেই । এই মহান এবং অসাধারন পন্ডিত ব্যাক্তিটির দেশ কীর্তিপাশার জমিদার বাড়ীও দেখে এসেছি আমি।
শ্রদ্ধা জানাই তাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার ভাঙ্গা ল্যাপটপ

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০৬


শুক্রবার রাতে আমার মনে হলো, আমি আমার ল্যাপটপে লিনাক্স ওএস সেটআপ দেব। যদিও আমি সারা জীবন উইন্ডোজ ব্যবহার করে এসেছি এবং লিনাক্স সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। রাতে শুয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'মামলেট’ ‘ওমলেট’ ডিম ভাজা, ডিম পোচ, এগ ফ্রাই, এগ রোল আরও কতো কী .....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩০

'মামলেট’ ‘ওমলেট’ ডিম ভাজা, ডিম পোচ, এগ ফ্রাই, এগ রোল আরও কতো কী .....

মাছে ভাতে বাঙালির আমিষ হেঁশেলে সেকেন্ড চয়েস গরুর গোসত আর মুরগি। কিন্তু ডিম? তাকে কি বাঙালি কখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈপ্লবিক ছন্দ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:১২




বছর তিনেক আগে রাজু ভাস্কর্যের সামনে উড়ন্ত ভঙ্গিতে ছবি তুলেছিলো একটা মেয়ে। তার নাম ইরা।

ইরার ওই ছবিটাই হওয়া উচিত বাংলাদেশের মেয়েদের প্রতীক। আমাদের মেয়েদের মেধা আছে, অদম্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম ও তার আসল বাস্তবতা

লিখেছেন নীল আকাশ, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭







বাংলাদেশের ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার নামে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মানুষের সাথে ভন্ডামি করে বেড়াচ্ছে তাদের জন্য উপরের ছবিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‌এই সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমি সমস্যার সমাধান কি?

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৫ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

দেশে বিশ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা কত জানেন? অসংখ্য। এর নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা কেউ দিতে পারেনাই, নামে বেনামে নিবন্ধিত অনিবন্ধিত মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি, মার্কিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×