... যেসব বাঙালি বাবু সামন্তর ছানা বলে গর্বে ফেটে পড়েন,তাঁদের পূর্বপুরুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে নায়েব,পেশকার,বেনিয়ান জাতীয় ছা-পোষা মানুষ ছিলেন। মাছ-দুধ সস্তা থাকায় একটু হয়তো মোটাগাঁট্টা ছিলেন।
...হলঘরের মুখোমুখি ‘উত্তরের কোডা’ অর্থাৎ উত্তরদিকের ঘর ,যেখানে সোফা কৌচ ঝাড়লন্ঠনের ‘ফুডানি’[অর্থাৎ ফুটানি, বরিশালের ভাষায় বিলাস ব্যসনের সুষ্ঠু বর্ণনা]
...সেরেস্তার কোন ফোঁপরদালাল কর্মচারী ঠিক করলেন যে মাতব্বরদের আপ্যায়ন আর একটু শানদার হওয়া দরকার।ফলে তাঁদের মাদুরে বসতে দেয়া হয়। তারপর,বিরাট হাঙ্গামা,ভয়ঙ্কর হইচই। মাতব্বররা আসন ছেড়ে খাওয়া ফেলে দল বেঁধে চলে যাচ্ছেনঃ “মোরগো ডাইককা আনিয়া অপমান করছে”।বাবুরা শশব্যস্তে অকুস্থলে এলেন-“যাইওনা,হইল ডা কি? কথাডা কি কও” ।বরিশাল জেলার লোক সব সহ্য করতে রাজী, কিন্তু অপমান সহ্য করে না। কিসে অপমান হল? “আর হগলে হোগলায় বইছে আর আমাগো বওনের কি দিছে? বইলেই হড়হড়াইয়া যায়” । মাদুর তুলে হোগলার চাটাই পাতা হল ।তখনকার মত প্রজাবিদ্রোহের সমাপ্তি।
... সেই আদর্শ সমাজে সবাই সবার ‘হালা’ এবং মনুর সন্তানেরা অধিকাংশই ‘হারামজাদা’ ।মনের আবেগ বেশি প্রকাশ হলে শেষ কথাটি ‘শাআরামজাদা’ উচ্চারিত হত। বড়হিস্যার ভৃত্যকূল একবার তাদের এক প্রবীণ সহকর্মীর বিরুদ্ধে হুজুরে নালিশ জানায়। ...লেখকের ঠাকুর্দা বৃদ্ধকে ডাকিলেন “বুড়া,তুমি নাকি হগলরে হারামজাদা কও?” বৃদ্ধ সাতহাত জিভ কেটে গভীর পরিতাপের সঙ্গে বললেন-“কয়েন কি ?এমন কথা কারওরে আমি হাত [সাত] জন্মেও কই নাই।কে নালিশ করছে,হ্যারে বোলায়েন” ...
প্রধান ফরিয়াদীকে তলব করা হোল,তাকে দেখামাত্র বৃদ্ধ তেড়ে গেল-“কিরে হারামজাদা! তরে বলে আমি হারামজাদা কই?”
============================
-রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা
(লেখক- অধ্যাপক তপন রায় চৌধুরী )।
তিরিশ আর চল্লিশের দশকে পূর্ববঙ্গের একটি জেলা বরিশাল আর কলকাতার ছাত্রজীবন এই গ্রন্থের পটভূমি।কৌতুকবোধের চমৎকার উপস্থাপন, লেখকের বর্ণনার ঢং আর পরিবেশনায় একটি অনন্য রচনাই বলা যায়।
১. ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৬ ০