somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদের জমিদার বাড়ী "নুহাশ পল্লী"তে একদিন (হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি)

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত বছর হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুদিবসে লেখা - পাঠক সৃষ্টির কারিগর । আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।

কিংবদন্তী কথাসাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নুহাশ পল্লী প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার ধানমণ্ডিতে তার বাসস্থান হলেও তিনি সুযোগ পেলই নুহাশ পল্লীতে চলে আসতেন সময় কাটাতে। কখনো আসতেন সপরিবারে, কখনো আসতেন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে রাতভর আড্ডা দিতে। প্রতি বছর ১লা বৈশাখে নুহাশ পল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পিরুজালী গ্রাম। ওই গ্রামেই ১৫ বছর আগে ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে নুহাশ পল্লী তৈরি করেন হুমায়ুন আহমেদ।

রাজধানীর অদূরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এক দুর্গম এলাকায় প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লী গড়ে তুলেছেন। সেখানকার নানা স্থাপনা আর অসংখ্য ফলজ, বনজ গাছের পাশাপাশি তিনি বানিয়েছেন ঔষধি গাছের বাগান। সব মিলিয়ে মনের মতো করেই ছেলের নামে রাখা নুহাশ পল্লীকে এক স্বপ্নজগত করে তুলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাই আড়াইশ প্রজাতির সবুজ গাছের সেই নন্দন কাননে বারবারই ছুটে গেছেন তিনি। নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছেন স্যুটিং স্পট, দিঘি আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো। একটিতে থাকতেন আর বাকি দুটি ছিল তার শৈল্পিক চিন্তাধারার আরেক রূপ। শানবাঁধানো ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম দিয়েছেন ‘ভূত বিলাস’। দুর্লভসব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরো রয়েছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল।

গত বছর এই ঈদের পর পর আমি এবং আমার দুই কাজিন মিলে যাই ‘নুহাশ পল্লী’ ভ্রমনে। এক কাজিন আবার হুমায়ুন আহমেদ এর মহা ভক্ত, কলেজের বই কেনার টাকা দিয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর উপন্যাস কেনে, বুঝেন অবস্থা। তো আমরা প্রথমে ভাওয়াল রাজবাড়ী এবং ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে বেড়িয়ে নিয়েছিলাম। তারপর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের গেট হতে বের হয়ে রাস্তার ওপারে গিয়ে একটি হিউম্যান হলারে উঠলাম হোতাপাড়ার উদ্দেশে। তবে সরাসরি মনিপুর অথবা পিরুজালিগামী হিউম্যান হলারও পেতে পারেন, সেক্ষেত্রে নেমে পরবেন পিরুজালী সরকার বাড়ী চৌরাস্তায়, হিউম্যান হলারের ড্রাইভারকে বলবেন নুহাশ যাওয়ার রাস্তায় নামাতে।

আমরা হোতাপাড়া এসে আরেকটি হিউম্যান হলারে করে পিরুজালী চৌরাস্তায় নেমে পরলাম। এখানে নেমে সরকার বাড়ী চৌরাস্তার জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে পালা এখন দুপুরের খাবারের। হোতাপাড়া বা পিরুজালী চৌরাস্তায় কোন খাবারের হোটেল নাই। কিছু রিকশাচালক পরামর্শ দিলে পিরুজালি থেকে ভেতরে কয়েক কিলোমিটার দুরের কোন এক বাজারে যেয়ে খেয়ে আসতে, সেখানে নাকি অনেকগুলো খাবার হোটেল রয়েছে। আবার আরেক জায়গায় যাওয়ার ঝক্কি বাদ দিয়ে শুকনো খাবার দিয়ে কাজ সারার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু বিধিবাম, আশেপাশের প্রতিটি ড্রাইফুড দেখলাম এক্সপায়ার ডেট পার করেছে, পাউরুটি জাতীয় কিছু খাবারে দেখলাম ছত্রাক আক্রমন করেছে কিন্তু তবুও তা দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে। শেষে এক কিশোর রিকশাচালক জানালো নুহাশপল্লীর গেটে তেহারি বিক্রি করে, সেখানে গিয়ে খেতে। পিরুজালী হতে ত্রিশটাকা ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় রওনা হলাম নুহাশপল্লীর উদ্দেশে। মিনিট দশেকের এই জার্নি খুবই উপভোগ করলাম। রিকশাগুলো ব্যাতিক্রম। প্লাস্টিক বডির চওড়া সিটগুলোর হুড একেবারে পরে গিয়ে বডির পেছনে ঝুলে থাকে, ফলে সিটের চারিদিকে পুরোটাই খোলা। সাধারণ রিকশার তুলনায় একটু বেশী গতিতে ছুটে চলা সরু পথে, শরীর ছুয়ে যায় মৃদু বাতাস।

নুহাশের গেটে পৌঁছে তেহারি পেলাম না, তবে সাদা ভাত, ছোট মাছের চচ্চরি, আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে জম্পেশ খেলাম। দুইশত টাকা টিকেট কেটে ঢুকতে হয় নুহাশ পল্লীর ভেতর, যা আমার কাছে একটু বেশীই ভনে হয়েছে। যাই হোক টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকতেই হাতের ডানদিকে রয়েছে একটি মা ও বাচ্চার মূর্তি, তার পাশে একটি ছাউনি। সেখানে দেখলাম “অন্যপ্রকাশ” এর স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম পরিবার নিয়ে বসে আছে, হুমায়ূন ভক্ত আমার খালাত ভাই হুমায়ূন পুত্র নিনিদকেও দেখেছে।

ছাউনির পাশেই রয়েছে একটি কঙ্কালের মূর্তি যার নিচের পাটির একটি দাঁত পড়ে গেছে, আর সেই দাঁতের আকারে মূর্তির নীচে রয়েছে একটি সুইমিংপুল। কঙ্কালের মুখ হতে সুইমিংপুলে পানি পড়ছে, সুইমিংপুলের সেই পানি কৃত্রিমউপায়ে নীলাভ করা হয়েছে। সুইমিংপুলের পাশেই রয়েছে ছোট একটা কটেজ টাইপের রুম, হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লীতে এসে এখানেই থাকতেন। কটেজের অপর পাশেই রয়েছে দুটি নকশাদার টেবিল-চেয়ার পাতা, যার প্রথমটির পাশে রয়েছে একটি কৃষ্ণকায় নগ্নবক্ষা নারীমূর্তি।

আরেকটু এগিয়ে গেলে পাবেন “বৃষ্টি বিলাস” নামক কটেজটি। এটির ছাদ টিনের তৈরি যেন বৃষ্টির সময় বৃষ্টির শব্দ উপভোগ করা যায়। সুন্দর নকশা, ফলস সিলিং দেয়া কটেজটির আউটলুক সুন্দর। একটু ভেতরে আরেকটি কটেজ রয়েছে যার নাম “ভূত বিলাস”। দুই রুমের আধুনিক এই কটেজটির পেছনে ছোট পুকুর রয়েছে যার চারিদিক সুন্দর ঘাসে মোড়া ঢাল দিয়ে ঘেরা, এই ঢালের চারিদিকে রয়েছে গাছ-গাছালী।

“ভূত বিলাস”এর পাশ দিয়ে একটি নড়বড়ে কাঠের সাকো রয়েছে পুকুরের মাঝখানের ছোট্ট একটুকরো দ্বীপাকারের ভূখণ্ডে যাওয়ার। সেখানে পুকুরের মাঝখানে একটি গাছের তলায় দুটি কাঠের বেঞ্ছি রয়েছে। আমরা তিনজন সেখানে গান শুনলাম কিছুক্ষন বসে বসে। চমৎকার অনুভুতি।
ভূত বিলাসকে একপাশে রেখে অন্য পাশে রয়েছে দুটি দোলনা, স্লিপার; বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য। বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য আরও রয়েছে কিছু ডাইনোসর, মানব ভূত, মারমেইড সহ বিভিন্ন ভাস্কর্য। এর পাশে পুকুরের কিনারে আরেকটি মাটির ঘর রয়েছে।

তার পাশেই রয়েছে বৃক্ষপ্রেমী হুমায়ূন আহমেদের সেই বিখ্যাত বাগান যেখানে তিনি জড়ো করেছিলেন নানান ধরনের বৃক্ষসমূহ। এপাশ দিয়ে প্রধান ফটকের দিকে এগিয়ে গেলে পাবেন হুমায়ূনের সলিল সমাধি। মূল ফটকের বাইরে দিয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য পৃথক পথ রয়েছে। এছাড়া নুহাশ পল্লীর সবুজ ঘাসে মোড়া চত্বরের মাঝখানে রয়েছে একটি ছোট্ট বটগাছ সদৃশ গাছ যার কাণ্ডর চারিদিকে বাঁধানো চত্বর। আরেকটু সামনে একটি গাছের উপর দুটি ছোট্ট বাঁশের বেড়ার তৈরি ঘর, যা শৌখিন হুমায়ূনকে রেপ্রেজেণ্ট করে। সামনে রয়েছে আরেকটি ছাউনির নীচে বিশাল কাঠামোর দাবার কোর্ট যার ফুট দুয়েক উঁচু উঁচু ঘুটি। জমিদারী কারবার কাকে বলে। পুরো নুহাশ পল্লী ঘুরে দেখার পর আপনি বলতে বাধ্য হবেন, নুহাশ পল্লী আসলেই একটি আধুনিক জমিদার বাড়ী। আর তাইতো লেখার শিরোনামে বলেছি “হুমায়ূন আহমেদের জমিদার বাড়ী”।

বিকাল চারটা নাগাদ বের হয়ে এলাম নুহাশ পল্লী হতে। রিকশাযোগে পিরুজালী এসে একটি হিউম্যান হলারে সরাসরি চলে এলাম গাজীপুর চৌরাস্তায়। এখান হতে ঢাকাগামী বাসে করে নিজ ডেরায়। সাথে নিয়ে এলাম আনন্দময় একগুচ্ছ স্মৃতি। আজ এই দিনে মনে পড়ে গেল একটি গানের কথা, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়...’।

















































তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিইয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০৫
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×