প্রতি বছর শীতের শুরুতে আমি একটা গন্ধ পাই। হঠাৎ একদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে টের পাই এই গন্ধটা। গন্ধটা আমার কানে কানে বলে যায় এলো তোমার প্রিয়তমা। প্রিয়তমা! জী হ্যাঁ, প্রিয়তমা, শীত ঋতুটা আমার অতি প্রিয় প্রিয়তমা। আমার স্কিন অতি শুকনো, শীত এলে সারা শরীরের চামড়া ফেটে একাকার, তেল-পেট্রলিয়াম জেলি-লোশন... কোন কিছুতেই সামাল দিতে পারিনা, ভীষণ কষ্ট দেয়। তবু শীতকাল আমার প্রিয়, অতি প্রিয়। শীতকাল এলেই মনটা কেমন দ্রবীভূত হয়ে যায়, পাখা মেলতে চায় হেথায় সেথায়। তো এইবার শীতটা কাটছে দারুন, প্রিয়তমা শীত উদযাপন ভালই হচ্ছে প্রিয় ভ্রমণসাথী “ভ্রমণ বাংলাদেশ” এর সাথে।
শুরুটা হয়েছিলো গত ডিসেম্বরের শেষার্ধে বড়দিনের ছুটিতে কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুরস্থ ‘পলাশ ভাই’য়ের খামার বাড়িতে “বারবিকিউ নাইট উইথ ফটোওয়াক” দিয়ে। আগেরদিন রাতে প্রায় ২০ জনের দল চলে গিয়েছিলাম সেখানে। রাতভর আড্ডা... মধ্যরাতে বারবিকিউ...তাবু টানিয়ে কুয়াশার সাগরে ডুবে ঘুমের রাজ্যে হারানোর বৃথা চেষ্টা... সব মিলিয়ে অসাধারণ। পরদিন ফটোওয়াক... কুয়াশামাখা ভোরে বেদে পল্লীতে ঘোরাঘুরি, সর্ষেক্ষেতে দল বেঁধে ফটোসেশন, চার্চে ঘুরে বেড়ানো... এই সব নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছি গত ডিসেম্বরের শেষে।
এরপর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আমরা গিয়েছি গাজীপুর, CARDI নিকটস্থ রানা ভাইয়ের আত্মীয়র বাসায়। সেখানে ছিলাম ১৮ জনের দল। অফিস শেষ করে আমি, সুমন, রুমি এবং সঞ্জীব এই চারজন রাত নয়টা নাগাদ পৌঁছই সেখানে। রাতে ছিল বারবিকিউ... সকালে তাজা খেজুরের রস... গরম গরম ভাপা পিঠা... দারুন। এরপর হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখা CARDI, IRRI, BRRI সংলগ্ন সাজানো প্রকৃতি। দুপুরে ভাওয়াল রাজবাড়ী ঘুরে ঢাকায় ফেরা। খুব আনন্দময় ছিল সময়টুকু।
এরপরের সপ্তাহে গেলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, পাখি দর্শনে। ভ্রমণ বাংলাদেশের পনের জনের দলের সাথে আমার ভাইবোন-কাজিন মিলে মোট ডজন দুয়েক ভ্রমণপ্রিয় মানুষ আমরা সারাদিন কাটালাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। পাখি দেখা, ছবি তোলা, আড্ডা... দারুন একটা উইকএন্ড। বিকেলে আমরা কাজিনরা গেলাম ধামরাই... ছোটমামার বাসায়। রাত প্রায় দশটায় ফিরেছি বাসায়। এর
মাঝে বার দুয়েক চারুকলাস্থ ছবির হাটে হয়েছে আড্ডা আর পিঠা খাওয়া। কিন্তু এইভাবে অল্পস্বল্প পিঠা খেয়ে যেন মন ভরছিলো না কারো। তাই গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হল “বাংলার পিঠা উৎসব”। টানা এক সপ্তাহের প্রস্তুতি শেষে প্রায় একশত লোকের সমাগমে ভ্রমণ বাংলাদেশের কার্যালয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হল এই উৎসব। আধমন চাল দিয়ে সাত-আট জনের রাঁধুনি দল তৈরি করেছিল প্রায় বিশ রকমের পিঠা... পুরাই মাথা নষ্ট অবস্থা।
শীত এখনো বিরাজ করছে বাংলার আকাশে বাতাসে, তেমনি বিরাজমান মোর হৃদয়ের গোপন গহীনো
ঘরে...। আগামী শুক্রবার যাচ্ছি বিরিশিরি... গতবারের মত এবারো খুব মজা হবে, ভালো হবে এই ইভেন্টটি... আশা করি। প্রতি শীতে বিরিশিরি যেতে পারলে খুব ভালো হয়। আচ্ছা আপনি বোধহয় ভাবছেন এই শীত উদযাপন কবে শেষ হবে? জী শেষ হবে, এই আগামী ২০-২৩ জানুয়ারি “সুন্দরবন সাফারি”র মাধ্যমে। গতবার ভ্রমণ বাংলাদেশের সাথে আমি গিয়েছিলাম একা, এবার কয়েকজন রিলেটিভ যাচ্ছে আর সাথে ভ্রমণ বাংলাদেশের কয়েকজন ভ্রমণসাথীতো থাকছেই। শেষটা ভালো হবে আশা করি। আর শেষ ভালো যার... সব ভালো তার।